মানুষ খেকো মানুষ
অনেক আগে বিটিভিতে একসময় টারজান দেখাতো, মনে আছে শুক্রবার দুপুরে সবাই আগ্রহ নিয়ে টারজানের কাজকর্ম দেখতাম। প্রায়ই দেখা যেত টারজান বা তার বন্ধুবান্ধবদেরকে জংলীরা ধরে বিশাল হাঁড়িতে রান্নার আয়োজন করছে। টারজান অবশ্য শেষমেশ দলবলসহ পার পেয়ে যেত জংলীদেরকে উচিত শিক্ষা দিয়ে। তবে শুধু টারজানের গল্প নয়, আরো অনেক কাহিনীতে মানুষ মানুষের মাংস খাচ্ছে এরকম বিবরন আছে। যতদুর মনে পড়ে রবিনসন ক্রুসো , তারপর প্রবাল দ্বীপ এসব গল্পে মানুষ খাওয়ার বর্ণনা আছে। এখন প্রশ্ন হচ্ছে আসলেই কি মানুষ মানুষকে খায়, না কি এসবই লেখকদের বানানো কল্পনা। মানুষ খাওয়ার সত্যিকার প্রমান আছে কি না? আর খেলে কারা খায়, কেন?
গল্প কাহিনীতে যেমনই লাগুক, বাস্তবে কেউ আরেকজন মানুষের র মাংস খাচ্ছে শুনলেই আমাদের বিবমিষা আসে, নিজেরা এরকম কাজে অংশগ্রহনের প্রশ্নই আসে না। তবে বাস্তবতা অবশ্য ভিন্ন তথ্য দিচ্ছে। পাপুয়া নিউ গিনির দক্ষিন ফোর এলাকার লোকেরা ৭০ এর দশকেও মানুষ মানুষকে খেতো। অস্ট্রেলিয়ার সরকার নিষিদ্ধ ঘোষনার আগ পর্যন্ত, ওরা ওদের গ্রামের কেউ মারা গেলে তাদেরকে রান্না করে খেয়ে ফেলতো। বানিয়ে বলছি না পাপুয়া নিউ গিনির মানুষখেকোদের নিয়ে অনেক প্রবন্ধ, রিসার্চ পেপার আছে, ইন্টারনেটে খুজলেই পাবেন। অনেক সময় আশে পাশের গোষ্ঠির সাথে যুদ্ধে শত্রুপক্ষের যারা মারা যেত বা বন্দী হতো তাদেরকে খাওয়ার প্রথা ছিল। তবে অস্ট্রেলীয় সরকার কেন এই প্রথা নিষিদ্ধ করল তার কারন ভিন্ন। ষাটের দশকে নিউগিনির এসব লোকদের মধ্যে "কুরু" (অথবা laughing sickness ) ভীষনভাবে ছড়িয়ে পড়ে। কুরু রোগে আক্রান্তদের প্রথমে নড়াচড়া, কথা বলায় সমস্যা হতে থাকে, এক পর্যায়ে তারা হাটা চলার সামর্থ্য হারিয়ে ফেলে, শেষমেশ মারা যায়। রোগটার কারন ঠিক পরিষ্কার ছিল না, তবে বোঝা যাচ্ছিল যে সব এলাকায় মানুষখেকো প্রথা আছে সে সব এলাকায় রোগের প্রকোপ বেশী। ৭০ দশকে এক পর্যায়ে অস্ট্রেলীয় সরকার মানুষ খাওয়া ব্যান করে দেয়, এর পরপরই রোগের প্রকোপ বন্ধ হয়ে যায়।
পাপুয়া নিউ গিনির এসব জাতি ছাড়া অস্ট্রেলীয়া, প্রশান্ত মহাসাগরীয় এলাকায় নিকট অতীতে মানুষ খাওয়ার প্রবনতা ছিল। যুক্তরাষ্টেªর অ¨ারিজোনা, নিউ মেক্সিকো এলাকায় আনাসাজি নেটিভ আমেরিকানরা (অথবা রেড ইন্ডিয়ানরা) কিছুকাল আগেও উত্সব ও অন্যান্য উপলক্ষে মানুষ খেতো তার প্রত্নতাত্বিক প্রমান আছে। তবে বিজ্ঞানীরা বেশীরভাগ ক্ষেত্রেই এসব উদাহরনকে ইতিহাসের বিচ্ছিন্ন ঘটনা বলে উল্লেখ করতে পছন্দ করতেন। গোল বাধলো বৃটেনে ম্যাড কাউ রোগের বিস্তারের গবেষনা করতে গিয়ে। ম্যাড কাউ এবং নিউ গিনির কুরু রোগের লক্ষন এবং পরিনতি তে মিল আছে। কিন্তু ম্যাডকাউ বিস্তার লাভ করে আক্রান্ত গরুর মগজ খেলে।
ম্যাডকাউ হতে পারে যদি আক্রান্ত গরু থেকে প্রিয়ন(একরকম সংক্রামক প্রোটিন) খাবারের মাধ্যমে ছড়িয়ে মস্তিষ্ককে আক্রমন করে। জেনেটিক গবেষনায় দেখা যায় বেশীরভাগ মানুষের মধ্যেই এই প্রিয়নের হাত থেকে রক্ষার জন্য একরকম প্রতিষেধক জিন আছে। যাদের নেই তারাই শুধু ম্যাডকাউ রোগে আক্রান্ত হয়, এজন্য বৃটেনের ৫ কোটি লোকের মধ্যে মাত্র শখানেক এই রোগে আক্রান্ত হয়েছে। নিউগিনিতে যখন মানুষখেকো প্রথা ছিল তখনকার যারা কুরুতে মানুষ খাওয়ার পরও আক্রান্ত হয় নি (এখনও এরা বেচে আছে) তাদের জিন পরীক্ষা করে দেখা যায় এদের মধ্যেও সেই একই প্রতিষেধক জিন আছে (এজন্যই মানুষ খেয়েও তারা কুরুতে আক্রান্ত হয় নি)।
এখন প্রশ্ন হচ্ছে নিউ গিনিতে যারা মানুষ খায় তাদের না হয় এসব জিনের দরকার আছে, কিন্তু পৃথিবীব্যপী আমাদের সবার মধ্যে এই জিনের উপস্থিতি কেন? আমরা তো মানুষ খাই না। যেসব জিন ব্যবহার হয় না তারা সাধারনভাবে সময়ের সাথে সাথে হারিয়ে যায় (যেমন জেনেটিক ডিªফট)। যেহেতু ম্যাড কাউ বা এ ধরনের রোগ খুব কম জায়গায় বিস্তার লাভ করে তাই ম্যাড কাউ এধরনের রোগ প্রতিরোধে এসব জিন আমাদের মধ্যে আছে তার সম্ভাবনা বেশ কম। পুরো পৃথিবীতে জাতি বর্ন নির্বিশেষে (কেবল জাপানীজরা ছাড়া, তাদের অন্য জিন আছে) সবার মধ্যে কুরু জাতীয় রোগ প্রতিরোধী জিনের উপস্থিতির আর একটাই কারন হতে পারে যে, আমাদের পুর্বপুরুষরা নিকট অতীতেও (যেমন ১৫,০০০ বছর আগে) মানুষের মাংস খেতো। ক্যানিবালিজমের চর্চা আমাদের মধ্যে ভালোভাবেই ছিল, যদিও এখন মেনে নিতে কষ্ট হয়। আসলে আমাদের ভেতরের ক্যানিবাল মানুষটা এখনও ঠিক মরে যায় নি, সংষ্কার আর সভ্যতার চাপে আপাতত লুকিয়ে আছে। তো মানুষ খেকো মানুষ কারা? এক অর্থে সুযোগ পেলে আমরা সবাই
গল্প কাহিনীতে যেমনই লাগুক, বাস্তবে কেউ আরেকজন মানুষের র মাংস খাচ্ছে শুনলেই আমাদের বিবমিষা আসে, নিজেরা এরকম কাজে অংশগ্রহনের প্রশ্নই আসে না। তবে বাস্তবতা অবশ্য ভিন্ন তথ্য দিচ্ছে। পাপুয়া নিউ গিনির দক্ষিন ফোর এলাকার লোকেরা ৭০ এর দশকেও মানুষ মানুষকে খেতো। অস্ট্রেলিয়ার সরকার নিষিদ্ধ ঘোষনার আগ পর্যন্ত, ওরা ওদের গ্রামের কেউ মারা গেলে তাদেরকে রান্না করে খেয়ে ফেলতো। বানিয়ে বলছি না পাপুয়া নিউ গিনির মানুষখেকোদের নিয়ে অনেক প্রবন্ধ, রিসার্চ পেপার আছে, ইন্টারনেটে খুজলেই পাবেন। অনেক সময় আশে পাশের গোষ্ঠির সাথে যুদ্ধে শত্রুপক্ষের যারা মারা যেত বা বন্দী হতো তাদেরকে খাওয়ার প্রথা ছিল। তবে অস্ট্রেলীয় সরকার কেন এই প্রথা নিষিদ্ধ করল তার কারন ভিন্ন। ষাটের দশকে নিউগিনির এসব লোকদের মধ্যে "কুরু" (অথবা laughing sickness ) ভীষনভাবে ছড়িয়ে পড়ে। কুরু রোগে আক্রান্তদের প্রথমে নড়াচড়া, কথা বলায় সমস্যা হতে থাকে, এক পর্যায়ে তারা হাটা চলার সামর্থ্য হারিয়ে ফেলে, শেষমেশ মারা যায়। রোগটার কারন ঠিক পরিষ্কার ছিল না, তবে বোঝা যাচ্ছিল যে সব এলাকায় মানুষখেকো প্রথা আছে সে সব এলাকায় রোগের প্রকোপ বেশী। ৭০ দশকে এক পর্যায়ে অস্ট্রেলীয় সরকার মানুষ খাওয়া ব্যান করে দেয়, এর পরপরই রোগের প্রকোপ বন্ধ হয়ে যায়।
পাপুয়া নিউ গিনির এসব জাতি ছাড়া অস্ট্রেলীয়া, প্রশান্ত মহাসাগরীয় এলাকায় নিকট অতীতে মানুষ খাওয়ার প্রবনতা ছিল। যুক্তরাষ্টেªর অ¨ারিজোনা, নিউ মেক্সিকো এলাকায় আনাসাজি নেটিভ আমেরিকানরা (অথবা রেড ইন্ডিয়ানরা) কিছুকাল আগেও উত্সব ও অন্যান্য উপলক্ষে মানুষ খেতো তার প্রত্নতাত্বিক প্রমান আছে। তবে বিজ্ঞানীরা বেশীরভাগ ক্ষেত্রেই এসব উদাহরনকে ইতিহাসের বিচ্ছিন্ন ঘটনা বলে উল্লেখ করতে পছন্দ করতেন। গোল বাধলো বৃটেনে ম্যাড কাউ রোগের বিস্তারের গবেষনা করতে গিয়ে। ম্যাড কাউ এবং নিউ গিনির কুরু রোগের লক্ষন এবং পরিনতি তে মিল আছে। কিন্তু ম্যাডকাউ বিস্তার লাভ করে আক্রান্ত গরুর মগজ খেলে।
ম্যাডকাউ হতে পারে যদি আক্রান্ত গরু থেকে প্রিয়ন(একরকম সংক্রামক প্রোটিন) খাবারের মাধ্যমে ছড়িয়ে মস্তিষ্ককে আক্রমন করে। জেনেটিক গবেষনায় দেখা যায় বেশীরভাগ মানুষের মধ্যেই এই প্রিয়নের হাত থেকে রক্ষার জন্য একরকম প্রতিষেধক জিন আছে। যাদের নেই তারাই শুধু ম্যাডকাউ রোগে আক্রান্ত হয়, এজন্য বৃটেনের ৫ কোটি লোকের মধ্যে মাত্র শখানেক এই রোগে আক্রান্ত হয়েছে। নিউগিনিতে যখন মানুষখেকো প্রথা ছিল তখনকার যারা কুরুতে মানুষ খাওয়ার পরও আক্রান্ত হয় নি (এখনও এরা বেচে আছে) তাদের জিন পরীক্ষা করে দেখা যায় এদের মধ্যেও সেই একই প্রতিষেধক জিন আছে (এজন্যই মানুষ খেয়েও তারা কুরুতে আক্রান্ত হয় নি)।
এখন প্রশ্ন হচ্ছে নিউ গিনিতে যারা মানুষ খায় তাদের না হয় এসব জিনের দরকার আছে, কিন্তু পৃথিবীব্যপী আমাদের সবার মধ্যে এই জিনের উপস্থিতি কেন? আমরা তো মানুষ খাই না। যেসব জিন ব্যবহার হয় না তারা সাধারনভাবে সময়ের সাথে সাথে হারিয়ে যায় (যেমন জেনেটিক ডিªফট)। যেহেতু ম্যাড কাউ বা এ ধরনের রোগ খুব কম জায়গায় বিস্তার লাভ করে তাই ম্যাড কাউ এধরনের রোগ প্রতিরোধে এসব জিন আমাদের মধ্যে আছে তার সম্ভাবনা বেশ কম। পুরো পৃথিবীতে জাতি বর্ন নির্বিশেষে (কেবল জাপানীজরা ছাড়া, তাদের অন্য জিন আছে) সবার মধ্যে কুরু জাতীয় রোগ প্রতিরোধী জিনের উপস্থিতির আর একটাই কারন হতে পারে যে, আমাদের পুর্বপুরুষরা নিকট অতীতেও (যেমন ১৫,০০০ বছর আগে) মানুষের মাংস খেতো। ক্যানিবালিজমের চর্চা আমাদের মধ্যে ভালোভাবেই ছিল, যদিও এখন মেনে নিতে কষ্ট হয়। আসলে আমাদের ভেতরের ক্যানিবাল মানুষটা এখনও ঠিক মরে যায় নি, সংষ্কার আর সভ্যতার চাপে আপাতত লুকিয়ে আছে। তো মানুষ খেকো মানুষ কারা? এক অর্থে সুযোগ পেলে আমরা সবাই
0 Comments:
Post a Comment
<< Home