Friday, August 11, 2006

পরকীয়াঃ বৈধ না অবৈধ?


মানব সমাজে পরকীয়ার অবস্থান নিষিদ্ধের কাছাকাছি, অনেক দেশে (যেমন মধ্যপ্রাচ্যে) পরকীয়া/ব্যাভিচার আইনত দন্ডনীয় (অবস্থা বিশেষে গুরুতর শাস্তিযোগ্য অপরাধ), পশ্চিমে অনেক দেশে পরকীয়ার বিরুদ্ধে আইন থাকলেও হালে কমই প্রয়োগ হয়, তবে নৈতিকভাবে এখনও অপরাধ হিসেবে দেখা হয়। যাহোক নৈতিক হোক বা সামাজিক বা আইনগত হোক পরকীয়া কোন সমাজেই ভালো চোখে দেখা হয় না। আমার প্রশ্ন হচ্ছে সমর্থন না করলেও ঠিক কি কারনে আমরা পরকীয়ায় আকৃষ্ট হই।

মানুষ বাদ দিয়ে অন্যান্য প্রানীর দিকে তাকালে দেখব প্রানী সমাজে পরকীয়ার বেশ প্রচলন আছে। এমনকি প্রকৃতি পরকীয়াকে অনেক সময় উত্সাহ দিয়ে থাকে। গত কয়েক দশক ধরেই জানা ছিল যে পাখীদের একটা বড় অংশ (৯২%) scoially monogamous, মানে সামাজিক ভাবে তাদের মাত্র একজন সঙ্গী থাকে, পুরুষ এবং মেয়ে পাখী দুজনেই অনেক সময় বাসা বানায়, বাচ্চা ফোটার পর একসাথে খাবার সংগ্রহ করে। পাখীর বাচ্চা খুব দ্রুত বড় হয় এবং বেড়ে ওঠার সময় প্রচুর খাবার দাবী করে, একা মা পাখীর পক্ষে এত খাবারের ব্যাবস্থা করা সম্ভব নয়। অনেক পাখী আছে যেখানে একজোড়া ছেলে এবং মেয়ে পাখী সারা জীবনের জন্য একসাথে থাকে। স্তন্যপায়ী দের মধ্যেও বেশ কিছু প্রানী আছে যারা এরকম মনোগ্যামাস (যেমন Gibbon)। ৮০র দশকে অনেক বিজ্ঞানী গবেষনা করতে শুরু করেন যে পাখীদের এই social monogamy এবং [ইংলিশ]ংবীঁধষ সড়হড়মধসু[/ইংলিশ]-এর কোন সম্পর্ক আছে কি না। নবŸই দশকে ডিএনএ প্রযুক্তি সহজলভ্য হলে সম্পর্ক নির্ধারন আরও সহজ হয়ে যায়। এখানে পাখীদের সামাজিক মনোগ্যামি বলতে বোঝানো হয়েছে, একজোড়া পাখীর আপেক্ষিক সামাজিক বন্ধন (যেমন মানুষের ক্ষেত্রে বিয়ে), আর যৌন মনোগ্যামী বলতে পাখীদের যৌনসঙ্গী সত্যিকার অর্থে মাত্র একজনই কিনা তা বোঝানো হয়েছে। বারবার বিভিন্ন প্রজাতির পাখীর মধ্যে গবেষনা করা হলেও ফলাফল মোটামুটি একই রকম ১০% থেকে ৪০% পর্যন্ত পাখীর বাচ্চার সত্যিকার বাবা, তাদের সামাজিক ভাবে স্বীকৃত বাবা এক নয়। এই ফলাফল এমনকি বিজ্ঞানীদের কাছেও আশ্চর্যজনক।

পুরুষ পাখীরা সুযোগ পেলে পরকীয়া করে আগে থেকেই জানা ছিল, কিন্তু মেয়ে পাখীরা কেন করছে তার ব্যাখ্যা ঠিক সহজ নয়। এর কারন মেয়ে পাখী পরকীয়ায় ধরা পড়লে সঙ্গী পুরুষ পাখী সাধারনত তাকে ছেড়ে চলে যায়, এবং মেয়ে পাখীর পক্ষে একা পাখীর বাচ্চা বড় করা প্রায় অসম্ভব। সুতরাং পরকীয়ায় মেয়ে পাখীর ঝুকি অনেক বেশী। পুরুষ পাখী কেন পরকীয়ায় অধিকতর আকৃষ্ট হয় তার একটা বায়োলজিকাল কারন আছে। তবে কারনটা খোলাসা করার আগে প্রজননের উদ্দ্যেশ্যটা পরিষ্কার করা দরকার। জীব প্রজননে আগ্রহী কারন সে তার জিন (gene) পরবর্তি প্রজন্মের মধ্যে প্রবাহিত করতে চায় (অবচেতন ভাবে), কেন চায় তার সংক্ষিপ্ত ব্যাখ্যা এরকম (বিস্তারিত লিখতে গেলে মুল বিষয় থেকে দুরে সরে যাবো) - ধরা যাক কোন প্রানী সমাজে ১০০ টা প্রানীর মধ্যে ৫০ টা ছিল বংশ বিস্তারে আগ্রহী আর ৫০ টা অনাগ্রহী, স্বভাবতই অনাগ্রহীরা চেষ্টা কম করায় তাদের পরবর্তি প্রজন্মের সংখ্যা আগ্রহীদের পরবর্তি প্রজন্মের চেয়ে কম হবে, ধরা যাক এক জেনারেশন পরে আগ্রহীদের সংখ্যা বেড়ে হলো ৮০, আর অনাগ্রহীরা কমে গিয়ে ২০, এভাবে চলতে থাকলে একসময় কয়েক প্রজন্ম পরে অনাগ্রহীরা বিলুপ্ত হয়ে যাবে। বাস্তবের প্রানীজগতেও আসলে তাই আগ্রহীরাই টিকে আছে। সে যাক, বাচ্চা তৈরীতে ছেলে আর মেয়ে (পাখী) দের ভুমিকার গুরুত্বপুর্ন একটা পার্থক্য আছে, ছেলেরা তৈরী করে স্পার্ম এবং স্পার্ম অত্যন্ত স্বল্প ব্যায়ে তৈরী করা যায়, তুলনা মুলকভাবে মেয়েরা তৈরী করে ডিম, যা অত্যন্ত ব্যয়বহুল। কোন পুরুষ তার জীবদ্দশায় মিলিয়ন মিলিয়ন স্পার্ম তৈরী করলেও, মেয়ে প্রানী মাত্র গুটিকয়েক ডিম তৈরী করতে পারে। ডিমের বৃদ্ধি এবং সেখান থেকে বাচ্চা ফোটানোর জন্য মেয়ে প্রানীকে প্রচুর বিনিয়োগ করতে হয়। ছেলে-মেয়ে দুদলেরই লক্ষ্য কিভাবে নিজের পরবর্তি প্রজন্ম বাড়ানো এবং তাদের সারভাইভাল নিশ্চিত করা যায়, ছেলেরা যেহেতু অল্প খরচেই স্পার্ম বানায় তাই তাদের স্ট্র্যাটেজী থাকে কিভাবে বেশী বেশী মেয়ে প্রানীর সাথে বাচ্চা বানানো যায়, অন্য দিকে ডিমের সংখ্যা যেহেতু সীমিত এবং ব্যায়স্বাপেক্ষ মেয়ে প্রানীর স্ট্র্যাটেজী হয় দুই ধরনের (১) নির্ভরযোগ্য পুরুষ পাখী বের করা যে সন্তানদের খাদ্য সংগ্রহে সাহায্য করবে, এতে ডিম ফুটে বের হওয়া বাচ্চাদের জীবনধারন নিশ্চিত করা যাবে এবং (২) নির্ভরযোগ্য পুরুষ পাখী সবসময় আকর্ষনীয় পুরুষ পাখী নাও হতে পারে (এখানে আকর্ষনীয় বলতে বোঝানো হয়েছে যে সব বৈশিষ্ট্য জঙ্গলে পাখীর টিকে থাকাকে maximize করতে পারবে, যেমন শক্তিশালী গড়ন), সেক্ষেত্রে মেয়ে পাখী সুযোগ পেলে ঝুকি নিতে পারে, পাখী মহল্লার সবচেয়ে হ্যান্ডসাম পুরুষ পাখীর কাছ থেকে স্পার্ম নিয়ে আসতে পারে, যতক্ষন সঙ্গী পুরুষ টের না পাচ্ছে। ছেলে পাখীরাও যে চাইলেই পরকীয়া করতে পারে তা নয়, অন্য পুরুষ পাখীরা যতদুর সম্ভব বাধা দেয়া বা নিজেদের মেয়ে পাখীকে চোখে চোখে রাখার চেষ্টা করবে। এ কারনে মনোগ্যামাস পাখী সমাজে পরকীয়া বেশ প্রচলিত।

পাখী ছাড়াও অন্যান্য আপাত সামাজিক মনোগ্যামাস প্রানীদের কেউই যৌন মনোগ্যামাস নয়, গত কয়েক দশকের গবেষনায় তা প্রমানিত হয়েছে। পরকীয়ার অনেক ঝুকি আছে তবে বুঝে শুনে পরকীয়া করতে পারলে প্রকৃতি সেটা সমর্থনও করে, এবং প্রকৃতি এজন্য বোনাস incentive -এর ব্যবস্থাও রেখেছে।

মানুষ নিজে প্রানীকুল থেকে ভীষন আলাদা কিছু নয়, আমাদের মনোগ্যামির প্রধান শত্রু আমাদের বায়োলজি। আমাদের কিছু কিছু বৈশিষ্ট্য যেমন, ছেলেরা মেয়েদের চেয়ে আকারে বড়, ছেলেরা তুলনামুলক ভাবে বেশী সহিংসতাপুর্ন, ছেলেদের প্রতিযোগীতাপুর্ন মনোভাব, মেয়েদের তাড়াতাড়ি পরিপুর্ণতা লাভ এগুলো নিশ্চিতভাবেই polygynous প্রজাতির বৈশিষ্ট্য। এতে মনে হয় মানব সমাজে পরকীয়ার প্রচলন অনেক পুরোনো, লক্ষ বছরের বিবর্তনে opportunistic adultery আমাদের জেনেটিক কোডে ভালোভাবেই বাসা বেধেছে। পরকীয়া বিরোধী আইন কানুন, অনুশাসনের বহুল উপস্থিতি প্রমান করে পরকীয়া নির্মুল করা সহজ নয়। অবশ্য প্রকৃতির কাছে যৌক্তিকতা থাকাই নৈতিক বৈধতার প্রমান হিসেবে যথেষ্ট নয় ।
Original post with interesting comments - http://www.somewhereinblog.net/utsablog/post/12355

2 Comments:

Anonymous Anonymous said...

আপনার ব্লগ ফায়ারফক্সে পড়া যায় না । লেখা গুলিকে অ্যালাইন জাস্টিফায়েড করবেন না ।

Monday, September 11, 2006 10:22:00 AM  
Anonymous Anonymous said...

পরকীয়ার সাথে প্রাণীজগতের সম্বন্ধটা স্পষ্ট হলনা। বহুগামীতা মানেই পরকীয়া নয়, যেসব সমাজে বহুবিবাহ গ্রহণযোগ্য সেখানে বহুগামীতা (সাধারণত পুরুষের) পরকীয়া বলে নিন্দনীয় নয়। মানুষের সামাজিক পরিধির বাইরে পরকীয়ার কি মানে থাকতে পারে বুঝতে পারছিনা।

Saturday, September 23, 2006 3:32:00 PM  

Post a Comment

<< Home

eXTReMe Tracker