বিশ্বাস করলেই কি সত্য হয়?
চাঁদ বা সুর্য যখন দিগন্তের কাছে থাকে তখন বড় দেখায় কেন? প্রতিসরণ নাকি ওরা কাছে চলে আসে। গবেষণার আগে কোন পুর্ণিমার দিন সন্ধ্যায় চাঁদের একটা ছবি তুলুন, কয়েক ঘন্টা পর একই জুম রেখে আবার চাঁদের ছবি তুলুন, এখন তুলনা করলেই রহস্য পরিস্কার হবে। ভিজুয়াল ইলিউশন অবশ্য নতুন কিছু নয় (ছবি: ১)। এরপরও বিশ্বাস আর সত্যের মধ্যে যে ব্যবধান আছে তা সহজে ধরা দিতে চায় না।
আমরা যখনই কোন কিছুর বিশ্লেষন করি তার ভিত্তি থাকে আমাদের মনে ঐ ঘটনার প্রতিবিম্ব (ঘটনা নিজে নয়)। যেমন আমি আপনাকে একটা গল্প বলে যদি উপসংহার টানতে বলি, আপনার উপসংহারের ভিত্তি হবে আমার গল্পের যতটুকু আপনি মনের ছবিতে ধারণ করতে পেরেছেন। গল্পের যে সব অংশ ভালোমতো মনে মনে আঁকেননি তাদের স্বমন্ধে বিশ্লেষন পরবর্তিতে সঠিক নাও হতে পারে। সমস্যাটা হচ্ছে আমি আমার মানসপটে ভুল ছবি আঁকলেই যে ছবির উত্সেও সে ভুল ছড়িয়ে পড়বে তা কিন্তু নয়। সবাই মিলে যদি বিশ্বাস করি চঁাদ দিগন্তের কাছে আসলেই আকারে বড় থাকে তাহলেই কি চঁাদ সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করে বড় হবে? গ্যালিলিও কে বলাতে বাধ্য করেছিল ক্যাথলিক চার্চ যে পৃথিবীর চারদিকে সুর্য ঘোরে, আরও কোটি কোটি ইউরোপিয়ানও তা বিশ্বাস করত, তাই বলে সুর্য কি পৃথিবীর চারদিকে ঘোরা শুরু করেছে? এত বিশ্বাসীর প্রভাবে সুর্য তার গতিপথ একচুলও কি পরিবর্তন করেছে? আমাদের বুঝতে হবে বিশ্বাস এবং সত্য আলাদা, বিশ্বাসের বসবাস কেবলই আমাদেরমনের মধ্যে, বিশ্বাস করলে আছে না করলে নেই। ঋথধয় বিশ্বাসীর ওপর নির্ভর করে না, আমরা সবাই মিলে অবিশ্বাস করলে বা চোখ বন্ধ করে রাখলেই তা মিথ্যে হবে না। ২/১ বিলিয়ন সমর্থকও যথেষ্ট নয়।
এবার বদরুল ভাইয়ের নুহ নবী সংক্রান্ত পোস্টের ব্যাপারে আসি। আপনার যুক্তি আমি বুঝতে পেরেছি। স্রষ্টার কুদরতের ওপরে কোন যুক্তি প্রয়োগ করা চলে না, বৈজ্ঞানিক যুক্তি তো নয়ই। স্রষ্টা চাইলে একবার কেন হাজার বার বিশ্বব্যাপী বন্যা বাধাতে পারবেন, কোন জিওলজিকাল রেকর্ড না রেখেই। তুচ্ছ বৈজ্ঞানিকের সামর্থ্য নেই যে কুদরতের মর্মোদ্ধার করবে। পাচশ বছর আগে জন্মালে আমার মনেও কোন প্রশ্ন হতো না। সময়টা যে বদলে গেছে, তৃতীয় বিশ্ব থেকে এসে যখন একজন ছাত্র দেখে মাইক্রোস্কোপের নীচে জীবানুরা ডারউইনের সুত্র মেনে চলছে, বার্ড ফ্লু , HIV বিবর্তনবাদ মেনে চলে তখন আদম-ইভের জন্য খুব কষ্ট হয়, স্যাটেলাইটের সোলার প্যানেলের সফটওয়্যার লিখতে গিয়ে দেখি গ্যালিলিওর কথাই ঠিক ধর্ম গ্রন্থের নয় তখন বিশ্বাসে ফাটল ধরে, ভুমিকম্প গবেষনা করতে গিয়ে দেখি এর কারণ Plate Tectonics তখন পাহাড়গুলো স্থাপন করা হয়েছে, অথবা দুমোখো সাপের মাথা বদলেই ভুমিকম্প , এ বিশ্বাস সত্যের কাছে ভেঙ্গে পড়তে চায়। বদরুল ভাই আমি আপনাকে দোষ দেই না, আজন্ম লালিত বিশ্বাসকে রাতারাতি অস্বীকার করা যায় না, কিন্তু ঐ যে বললাম সময়টা বদলেছে, মুল্য দিয়ে হলেও শিখতে হচ্ছে: “বিশ্বাস করলেই সত্য হয় না, আর সত্য হলেই তা বিশ্বাসযোগ্য হবে এমনও নয়“।
0 Comments:
Post a Comment
<< Home