Friday, June 02, 2006

মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ ১.২

রুয়ান্ডার গনহত্যা আমার কাছে গুরুত্বপুর্ন মনে হয় বেশ কয়েকটি কারনে, এটা সা¤প্রতিক অতিতের ঘটনা, আমি নিজেই বিবিসি, সিএনএন-এ শুরু থেকে ঘটনাগুলো দেখেছি, আমাদের দেশীয় প্রচার মাধ্যমে এর উপস্থাপনাও দেখেছি। আন্তর্জাতিক স¤প্রদায় জেনেও কোন সাহায্যে এগিয়ে আসে নি। মানুষের গনহত্যা প্রবনতার উত্স এবং বিস্তার বিশ্লেষনে রুয়ান্ডার ওয়েল ডকুমেন্টেড ঘটনা প্রবাহ যথেষ্ট গুরুত্বপুর্ন। এখানে আবারও দেখব গনহত্যায় সাধারন মানুষের ব্যাপক অংশগ্রহন এবং সমর্থন। নাত্সীদের জার্মান জাতীয়তাবাদের মতো এখানেও হুটু (Hutu) জাতীয়তাবাদ, অনেকক্ষেত্রে দেশপ্রেম, স্বজাতিপ্রেম, সামাজিক সংগঠন এবং প্রচার মাধ্যম হত্যাকান্ডে উল্লেখযোগ্য ভুমিকা নেয়। আমরা দেখব বেশীরভাগ গনহত্যাগুলোতে উপরের একই প্রতিষ্ঠান, ভাবধারা গুলো কারন হিসেবে থাকে, এবং আমরা সচরাচর এদের বিস্তারে বাধা দেই না, বিশেষ করে দেশপ্রেমের মতো মহত্গুন নিয়ে সমালোচনা আমার চোখে খুব কম পড়েছে। দেশ-জাতি প্রেম নিয়ে আলোচনা আরও কয়েকটা লেখা পরে করব, আপাতত রুয়ান্ডায় ফেরা যাক।

পুর্ব-মধ্য আফ্রিকার দেশ রুয়ান্ডার ঐতিহাসিক ভাবে মুলত দুই জাতির লোকের বসবাস, হুটু এবং টুটসি (Tutsi)। তবে দুই জাতে বিভাজন আসলে যথেষ্ট বিতর্কিত, চেহারা বা ন্য কোন ভাবে এক জাত থেকে অন্য জাতকে সরাসরি আলাদা করা কঠিন। বরং বিভাজন অনেকটা বিভিন্ন সময়ে রাজনৈতিক ভাবে আরোপিত। টুটসিরা মুলত শাসক শেªনীর লোকজন, অন্যদিকে হুটুরা সমাজের নীচু শেªনীর লোক। এমনও আছে হুটু কেউ ধনশালী হয়ে টুটসি সমাজভুক্ত হয়েছে। সংখ্যায় অবশ্য হুটুরাই বেশী ছিল। যাহোক ১৮৯৭ সালে জার্মানী রুয়ান্ডাতে কলোনিয়াল শাসন শুরু করলে এই বিভাজন গাঢ় হতে থাকে। সে সময় ইউরোপে racism যথেষ্ট বিস্তৃত ছিল, জার্মানরা রুয়ান্ডায় এসেই তাদের raceভিত্তিক চিন্তা ভাবনা এখানে প্রয়োগ করতে থাকে। টুটসিদেরকে হুটুদের তুলনায় সেরা হিসেবে বিবেচনা করা শুরু হতে থাকে, এর পেছনে নানা ব্যাখ্যাও দাড় করানো হতে থাকে। প্রথম বিশ্ব যুদ্ধের সময় বেলজিয়ানরা জার্মানদের হটিয়ে রুয়ান্ডা দখল করে, কিন্তু পরবর্তিতে তারাও টুটসিদের শেªষ্ঠত্বকে romanticized করতে থাকে।

১৯৬২ সালে বেলজিয়ানদের হাত থেকে মুক্ত হয়ে স্বাধীন রুয়ান্ডা প্রতিষ্ঠি হয়। হুটুরা সংখ্যাগরিষ্ঠ হওয়ায় তাদের হাতেই ক্ষমতা থাকে। আস্তে আস্তে শুরু হয় টুটসি বিরোধী প্রচার, সমস্ত সমস্যার জন্যই টুটসিদের দায়ী করা হতে থাকে। হুটুরা জাতিগত বিভাজনকে প্রাতিষ্ঠানিক রুপ দিতে থাকে , ষ্কুল কলেজ, অফিস আদালতে টুটসিদের সুযোগ সীমিত করা হতে থাকে। এর মধ্যে বেশ কয়েকবার জাতিগত দাঙ্গা হলে, টুটসিরা গনহত্যার শিকার হয়, এবং আশেপাশের দেশে পালিয়ে যেতে থাকে। আন্তর্জাতিক স¤প্রদায় অবশ্য এসব সমস্যা মোটামুটি উপেক্ষা করতে থাকে। পরবর্তি কয়েক দশকে হুটু জাতীয়তাবাধ বিনা বাধায় বিস্তার লাভ করে।

নবŸই এর দশকের শুরুতে দেশত্যাগী টুটসিরা রুয়ান্ডায় ফিরে আসার চেষ্টা চালায়, হুটু সরকারের সাথে টুটসি সংগঠন RPF (Rwandese Patriotic Front) আলোচনাও চলতে থাকে কিভাবে টুটসিদের সম-অধিকার প্রতিষ্ঠা করা যায় এসব নিয়ে। বেশীরভাগ হুটু অবশ্য টুটসিদের এসব প্রচেষ্টা ভালো চোখে দেখেনি। ১৯৯০ -এ RPF উগান্ডা থেকে রুয়ান্ডায় আক্রমন করে, সরকারকে আলোচনায় বসার জন্য চাপ দিতে। তবে এই আক্রমনে টুটসিদের লাভের চেয়ে ক্ষতিই বেশী হয় । হুটুরা একে ক্ষমতা দখলের চেষ্টা হিসেবে দেখতে থাকে, পরিস্থিতি কাজে লাগিয়ে হুটু প্রেসিডেন্ট Habyarimana টুটসি গনহত্যার প্রাতিষ্ঠানিক প্রস্তুতি নিতে শুরু করেন।

এপ্রিল ১৯৯৪-এ Habyarimana-এর বিমান রকেট হামলায় ভুপাতিত হয়ে প্রেসিডেন্ট নিহত হলে সাথে সাথে গনহত্যা শুরু হয়। প্রেসিডেন্টের গার্ড বাহিনী কয়েক ঘন্টার মধ্যে রেডিওতে হুটুদেরকে উত্সাহ দিতে থাকে টুটসি গনহত্যার জন্য। সামরিক বাহিনীর সহায়তায় পাড়ায় পাড়ায় Interahamwe মিলিশিয়া বাহিনী গঠিত হয় সাধারন হুটু নাগরিকদের নিয়ে। সেনা বাহিনী এবং পুলিশের লোকজন বিভিন্ন (যেমন অস্ত্র) সহায়তা দিতে থাকে, এছাড়াও যারা গনহত্যায় অংশগ্রহন করবে তাদেরকে টাকাপয়সা, টুটসিদের জমি জমা দিয়ে সাহায্য করার প্রতিশªুতি দেয়া হয়। সাধারন লোকজন সুযোগ পেয়ে পাড়া প্রতিবেশী টুটসিদের হত্যা করতে থাকে বা ধরিয়ে দিতে থাকে। অনেক সময় টুটসিদের ষ্কুল বা চার্চে জড়ো করে পাইকারী হারে মেরে ফেলা হতে থাকে। মাত্র ১০০ দিনে ১০ লাখ টুটসি নিহত হয় (দিন গড়ে ১০ হাজার)। গনহত্যার আরেকটা গুরুত্বপুর্ন দিক হলো বুলেটের পরিবর্তে machete (ছুরি, রাম দা?) দিয়ে লক্ষ লক্ষ লোককে হত্যা, পরিস্থিতিতে একজন মানুষ কতটা নির্মম হতে পারে যখন দিনে কয়েকশ মানুষকে জবাই করেও অপরাধবোধ জন্মায় না।

আমার কাছে রুয়ান্ডার গনহত্যা খুবই দরকারী কেস স্টাডি মনে হয়, টিপিকাল জেনোসাইডের উপকরন গুলো সবই এখানে আছেt
- হুটু জাতীয়তাবাদি চেতনা
- প্রোপাগান্ডায় গন মাধ্যমের ভুমিকা
- মুক্তচিন্তার অনুপস্থিতি, বরং সা¤প্রদায়িক চেতনার ক্রমশ প্রাতিষ্ঠানিক রুপ দেয়া
- সাধারন মানুষকে গনহত্যায় সম্পৃক্ত করা, এবং ঘৃনার আবেগকে উষ্কে দেয়া। ঘৃনা যে ভালোবাসার চেয়ে মোটেও কম শক্তিশালী নয়, এটা আমরা বুঝতে চাই না।
- Romanticized Ideologyt এটা বোধ হয় গনহত্যার ব্যাপকতার সবচেয়ে দরকারী উপকরন। একদল লোককে এমন ভাবে মোটিভেট করা যেন, বিশেষ মতবাদকে বাস্তবায়িত করলেই সবসমস্যার সমাধান হয়ে যাবে। আশ্চর্যজনক যে মানুষ হিসেবে আমরা আবার এসব সব সমস্যার সমাধানে বিশ্বাসও করি। রুয়ান্ডায় হুটু মিলিশিয়াদের মুল বক্তব্য ছিল তাই, টুটসিরাই সব সমস্যার মুলে, ওদেরকে মেরে ফেলতে পারলেই রুয়ান্ডার সমস্যা সমাধান হবে। বেশীরভাগ হুটু তা বিশ্বাসও করেছে। নাত্সীবাদও জার্মানদের কে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে এভাবেই প্রভাবিত করেছিল। কমিউনিজম, ধর্মভিত্তিক মৌলবাদও একই ভাবে সমাধানের নামে সাধারন মানুষকে টানে। Romanticized Ideology-এর ওপর ভিত্তি করে মানুষ বড় বড় অপরাধের যেŠক্তিকতা খুজে পায়, সমর্থন এবং অংশগ্রহন করে।

গনহত্যা নিয়ে আর দু-একটি লেখা লিখে অন্যান্য অমানবিক অপরাধে দৃষ্টি দেব

1 Comments:

Blogger Tareq Nurul Hasan said...

আপনার এই পোষ্ট টা ঠিক আসছে না। মাঝে অনেকগুলো গোল্লা দেখা যাচ্ছে।
কিন্তু নিচেরটা আবার ঠিক ই দেখা যাচ্ছে।
এটা কি আবার টাইপ করেছেন? নাকি কনভার্ট করেছেন কোন সফটওয়্যার দিয়ে?

Wednesday, June 07, 2006 8:56:00 AM  

Post a Comment

<< Home

eXTReMe Tracker