Saturday, September 16, 2006

নিয়ান্ডারটাল এবং জেনেটিক্স

মাঝে মাঝে ভাবি যদি এমন হতো আমরা এখন মানুষের আরেকটা জীবন্ত প্রজাতি আবিষ্কার করে বসি তাহলে আমাদের প্রতিক্রিয়া কি হবে । আমরা কি ওদেরকে দাস বানাবো, চিড়িয়াখানায় বন্দি করে রাখবো না কি সুলতান মাহমুদের সৈন্যদের মতো গনিমতের মাল হিসেবে ওদের মেয়েদেরকে ধর্ষন করবো (একটু বেশী হয়ে গেল, তবে ইতিহাসে বারবার এমন হয়েছে)। আগের লেখায় বলেছি নিয়ান্ডারটালদের সবচেয়ে আধুনিক ফসিল অন্তত ২৫ হাজার বছরের পুরোনো। আসলে ওরা বরফযুগের শীতল আবহাওয়ার জন্য বেশী উপযোগী ছিল, বরফ যুগ শেষ হওয়ার সাথে সাথে ওদের সুযোগও সীমিত হতে থাকে, তার ওপর ততদিনে আধুনিক মানুষ আফ্রিকা থেকে বের হয়ে ইউরোপ এবং মধ্য এশিয়ায় বসতি স্থাপন শুরু করেছে। একটা সায়েন্স ফিকশন ধরনের কল্পনা করা যেতে পারে, যে নিয়ান্ডারটালরা এখনও সাবআর্কটিক পরিবেশে টিকে আছে (প্রায় অসম্ভব যদিও)।বিগ ফুট, ইয়েটি কে জানে আসলে হয়তো নিয়ান্ডারটাল।

যাহোক ফিকশনে সময় নষ্ট করার মানে হয় না, ফ্যাক্টে ফিরে আসি। একদল বিজ্ঞানীরা মনে করতেন (বা করেন) নিয়ান্ডারটালরা সম্পুর্ন বিলুপ্ত হয় নি বরং আধুনিক ইউরোপীয়ানরা আসলে তাদের এবং ক্রোমা¨নিয়নদের উত্তরপুরুষ। ৭০ এর দশকে এ ধারার থিওরী এতই শক্তিশালী ছিল যে নিয়ান্ডারটালের নতুন বৈজ্ঞানিক নামকরন করা হয়। পরবর্তিতে নিয়ান্ডারটাল ডিএনএ বিশ্লেষন করার পরে নিয়ান্ডারটালদের সাথে বর্তমান মানুষের সম্পর্ক পরিষ্কার হতে থাকে। গত দশ বছরে অনেকবার আলাদা ভাবে মানুষের এবং নিয়ান্ডারটাল মাইটোকন্ড্রিয়াল ডিএনএ তুলনা করা হয়েছে। যেমন একটি ক্ষেত্রে ৩৭৮ ইউনিট ডিএনএ স্ট্র্যান্ড নিয়ে গবেষনায় নিয়ান্ডারটালদের সাথে আমাদের পার্থক্য ২৭ টি স্থানে, শিম্পাঞ্জীর সাথে ৫৫টি স্থানে, আর মানুষের নিজেদের মধ্যে সর্বোচ্চ ৮টি স্থানে। এতে মনে হয় নিয়ান্ডারটালদের সাথে আমাদের সম্পর্ক বেশ দুরের। এমনকি নিয়ান্ডারটালদের সমসাময়িক ৪৫,০০০ বছরের পুরোনো অস্ট্রেলিয়ান আধুনিক মানুষের ফসিলের সাথে তুলনা করলে দেখা যায় অস্ট্রেলিয়ান ফসিলের সাথে বর্তমান জীবিত মানুষের পার্থক্য সামান্যই অথচ নিয়ান্ডারটালদের সাথে এই প্রাচীন অস্ট্রেনিয়ানদেরও যথেষ্ট পার্থক্য আছে।

জেনেটিক বিন্যাসের তুলনা করলে বোঝা যায়, শিম্পাঞ্জী এবং মানুষের পুর্বপুরুষ অন্তত ৫০ লাখ বছর আগে আলাদা হয়ে গিয়েছে। অন্যদিকে নিয়ান্ডারটাল এবং আধুনিক মানুষ আলাদা হয়েছে ৬ থেকে৭ লাখ বছর আগে। ওভারঅল ছবিটা দাড়াচ্ছে এরকম, ১৭-২০ লাখ বছর আগে হোমো ইরেকটাস (পরে কোন লেখায় এ প্রসঙ্গে লিখব) আফ্রিকা থেকে বের হয়ে এশিয়া-ইউরোপে ছড়িয়ে পড়ে, পরবর্তিতে এদের থেকেই পিকিং মানুষ, জাভা মানুষদের বিবর্তন ঘটেছে। ৭-৮ লাখ বছর আগে আরো একটা দল আফ্রিকা থেকে বের হয়েছে, তাদের থেকে নিয়ান্ডারটাল এবং এরকম আরো কিছু মানুষের বিবর্তন হয়েছে। অন্যদিকে যেসব হোমো ইরেকটাস আফ্রিকায় থেকে গিয়েছিল তাদের থেকে হোমো স্যাপিয়েন্সের উত্পত্তি ঘটেছে। এদের একটা ধারা আধুনিক মানুষ, যারা অনেক পরে ৬০-৯০ হাজার বছর আগে আবার আফ্রিকা থেকে বের হয়ে এশিয়া ইউরোপে ছড়িয়ে পড়েছে। ঠিক কি কারনে আধুনিক মানুষের আবির্ভাবের সাথে সাথে পুরোনো archaic মানুষেরা (যেমন পিকিং মানুষ বা নিয়ান্ডারটাল) বিলুপ্ত হয়ে গেল তার কারন পুরোপুরি পরিষ্কার নয়। হয়তো আমাদের পুর্বপুরুষরা গনহত্যা চালিয়েছে, অথবা হোমো ইরেকটাসরা স্রেফ প্রতিযোগীতায় সুবিধা করতে পারে নি। কে আধুনিক আর কে পুরোনো বোঝার একটা উপায় হচ্ছে আমাদের থুতনী এবং কপাল, আধুনিক মানুষের থুতনী সামনের দিকে বাড়ানো এবং কপাল খাড়া, অন্যদিকে নিয়ান্ডারটাল বা হোমো ইরেকটাসদের ক্ষেত্রে ওরা থুতনী বিহীন, এবং ঢালু কপাল (ছবি দ্রঃ)।

নিয়ান্ডারটাল আলাদা প্রজাতি হলেও কিছু সীমিত ক্ষেত্রে বোধ হয় ক্রোম্যানিয়নদের (আধুনিক মানুষ) সাথে ওদের মিশªন ঘটে থাকতেও পারে। কয়েকবছর আগে পর্তুগালে পাওয়া ২৪ হাজার বছর আগের এক কিশোরের কঙ্কাল দেখে মনে হয় তার মধ্যে নিয়ান্ডারটাল এবং আধুনিক মানুষ দুই বৈশিষ্ট্যই আছে। যদিও এ নিয়ে বিতর্ক আছে, তবুও মনে হয় নিয়ান্ডারটালদের অনেক রহস্য এখনও জানা বাকি।

ডিসকভারী চ্যানেলে (অথবা চ্যানেল ফোর) এ নিয়ান্ডারটাল নিয়ে চমত্কার একটা ডকুমেন্টারী আছে (
এখানে পাবেন)। যদিও ডªামাটাইজেশন, কিন্তু আগ্রহী হলে বেশ ভালো লাগবে।

0 Comments:

Post a Comment

<< Home

eXTReMe Tracker