অপস্তম্ব আর পাণিনি
বানান দুটো ঠিক আছে আশা করি। ৫০% অফ পেয়ে কিছু বই কিনেছিলাম দুমাস আগে। আগের কেনা গুলোই এখনো পড়ে শেষ করতে পারি নাই, এর মধ্যে আরো নতুন বই। সকালে প্রাকৃতিক কর্ম করতে গিয়ে পড়ি, এই নিয়ে দুর্মুখেরা অনেক বাজে কথা বলেছে, বাস্তব সত্য হচ্ছে আগের মতো সোফায় শুয়ে টিভি দেখে বই পড়ার মতো সময় আর নেই, সারাদিন কাজ শেষে রাতে আসি, এসে হয়তো রান্নাবান্না করতে হয়, অনেক সময় অন্যান্য কাজ থাকে শেষমেশ সকালের ঐ এক ঘন্টাই (ঞ!) শুধু নিয়মিত বই পড়া হয়। নতুন গুলোর একটা কিনেছিলাম স্রেফ পৃষ্ঠা/মুল্য অনুপাতের আধিক্য দেখে, যদিও মাথাভারী নাম God Created Integers। ইউক্লিড নিয়ে লেখাটার এক পর্যায়ে পেলাম অপস্তম্বের নাম, আগে শুনেছি, কিন্তু বিশদ জানা ছিল না।
অনেক সময় এরকম ঘরের খবর পরের কাছ থেকে শুনতে হয়। পিথাগোরাসের উপপাদ্য তো সেই স্কুলে পড়ে আসছি। এখন দেখা যাচ্ছে গ্রীকদের আগেই ভারতে ঐ উপপাদ্য জানা ছিল। এই উপপাদ্যের নাম হতে পারে অপস্তম্বের উপপাদ্য(?)। আরেকটা ব্যাপার আগে জানতাম সেটা হলো আমরা এখন যে ডেসিমাল নাম্বার সিস্টেম ব্যবহার করি তা আসলে ভারতীয় উপমহাদেশে আবিস্কৃত। হরপ্পার সভ্যতার সময় থেকেই ভারতে এ ধরনের সংখ্যা পদ্ধতি ব্যবহার হয়ে আসছে। দশমিক নিয়মের সুবিধা বুঝতে হলে, অন্য নিয়মগুলোর অসুবিধাটা দেখলেই চলবে। যেমন রোমান নিয়মে যদি আমরা সংখ্যা লিখতাম তাহলে ভেবে দেখুন যোগ, বিয়োগ, গুন, ভাগ করা কতটা কঠিন হতো। এক অর্থে আধুনিক বিজ্ঞান পুরোপুরি ভারতীয় সংখ্যা পদ্ধতির ওপর দাড়িয়ে আছে। হরপ্পা,মহেঞ্জোদারোর সভ্যতা বৈদিক যুগেরও আগের, মোটামুটি ৩৩০০খৃষ্ট পুর্বাব্দ থেকে ১৩০০ খৃষ্ট পুর্বাব্দ পর্যন্ত। মানে এখন থেকে প্রায় সাড়ে পাচ হাজার বছর আগের। এই সভ্যতার নিদর্শন, এবং এরা কারা, কোথায় গেল এই নিয়ে পরে কোন লেখায় লিখব, আজকে গনিতে ফেরত যাই।
অপস্তম্ব অবশ্য অত পুরোনো নন, আনুমানিক খৃষ্ট পুর্ব পঞ্চম শতাব্দির সময়কালের (এখন থেকে আড়াই হাজার বছর আগের)। তার লেখা “কল্পসুত্র “ বই-এর ৩০তম অধ্যায় “সুল্বসুত্রে“ (বানান ভুল হতে পারে) গনিত এবং জ্যামিতির অনেকগুলো উল্লেখযোগ্য সুত্র আছে। যেমন একটা হচ্ছে irrational সংখ্যার ব্যবহার, এটাই মানব সভ্যতায় প্রথম এরকম সংখ্যার উল্লেখ। Irrational সংখ্যা হচ্ছে যাদেরকে দুটো সংখ্যার অনুপাত হিসেবে প্রকাশ করা যায় না (একারনে এসব সংখ্যার ডিজিট লিখে শেষ করা যায় না, পৌন পুনিক নয়), যেমন ২ এর স্কয়ার রুট, অথবা পাই (বৃত্তের ব্যস এবং পরিধির অনুপাত)। দেখা যাচ্ছে অপস্তম্বের সময়ে তারা ২ এর স্কয়ার রুট (১.৪১২১৫৬ ...) বের করার একটা পদ্ধতিও (approximation) বের করেছিলেন, এটাও ঐ সময়ে অন্য কোন সভ্যতায় কারো জানা ছিল না:
sqrt(২) = ১ + ১/৩ + ১/(৩*৪) - ১/(৩*৪*৩৪)
আর সমকোনী ত্রিভুজের সুত্র a^2 = b^2 + c^2 যেটা আমরা পিথাগোরাসের বলে জানি দেখা যাচ্ছে এগুলো ভারতে পিথাগোরাসের আগে থেকেই জানা ছিল।
আরো ঘাটতে ঘাটতে পেলাম পাণিনির নাম। পাণিনি ৫২০-৪৬০ খৃষ্টপুর্বাব্দের কোন সময়ে গান্ধারা (এখন যেখানে পাকিস্তানের পেশোয়ার) রাজ্যে বাস করতেন। পাণিনি সংস্কৃত ব্যকরনের জন্য প্রসিদ্ধ, তবে আমার নিজের ব্যকরন নিয়ে কোন আগ্রহ নেই। একবার একটা গ্রাড কোর্স নিয়েছিলাম কম্প্লেক্সিটি থিওরীর ওপরে, থিওরেটিকাল কম্পিউটার সায়েন্সের অংশ হিসেবে, ওখানে একবার মনে হয় প্রফেসর পাণিনি নামটা বলেছিলেন। তখন ভালো মতো খেয়াল করিনি, অপস্তম্ব নিয়ে ঘাটতে গিয়ে পেলাম formal language theory এর অনেক সুত্রই পাণিনির গ্রন্থে আড়াই হাজার বছর আগে ছিল যেমন Panini-Backus form। সেই আমলে পাণিনি মেটারুল, ট্রান্সফরমেশন, রিকার্শন (recursion) ব্যবহার করেছেন। দু:খজনক যে তার এ গবেষনা আর আবিস্কার আড়াই হাজার বছর পরে আবার আবিস্কার করতে হচ্ছে।
আসলে উপমহাদেশে আমাদের সমস্যা হচ্ছে পরবর্তিতে এ ধারা আমরা আর অব্যহত রাখতে পারি নি। বিভিন্নভাবে stagnation চলে এসেছিল, তার ওপর শেষের এক হাজার বছর প্রথমে মুসলিম, পরে ইউরোপীয়ান কলোনাইজেশনে সামনে আগানো আর হয়ে ওঠে নি। ঐ সময়টাতে বুদ্ধির চেয়ে তরবারীর জোরের প্রয়োজনীয়তা ছিল বেশী।
ছবি: ভারতের ডাকটিকেট
অনেক সময় এরকম ঘরের খবর পরের কাছ থেকে শুনতে হয়। পিথাগোরাসের উপপাদ্য তো সেই স্কুলে পড়ে আসছি। এখন দেখা যাচ্ছে গ্রীকদের আগেই ভারতে ঐ উপপাদ্য জানা ছিল। এই উপপাদ্যের নাম হতে পারে অপস্তম্বের উপপাদ্য(?)। আরেকটা ব্যাপার আগে জানতাম সেটা হলো আমরা এখন যে ডেসিমাল নাম্বার সিস্টেম ব্যবহার করি তা আসলে ভারতীয় উপমহাদেশে আবিস্কৃত। হরপ্পার সভ্যতার সময় থেকেই ভারতে এ ধরনের সংখ্যা পদ্ধতি ব্যবহার হয়ে আসছে। দশমিক নিয়মের সুবিধা বুঝতে হলে, অন্য নিয়মগুলোর অসুবিধাটা দেখলেই চলবে। যেমন রোমান নিয়মে যদি আমরা সংখ্যা লিখতাম তাহলে ভেবে দেখুন যোগ, বিয়োগ, গুন, ভাগ করা কতটা কঠিন হতো। এক অর্থে আধুনিক বিজ্ঞান পুরোপুরি ভারতীয় সংখ্যা পদ্ধতির ওপর দাড়িয়ে আছে। হরপ্পা,মহেঞ্জোদারোর সভ্যতা বৈদিক যুগেরও আগের, মোটামুটি ৩৩০০খৃষ্ট পুর্বাব্দ থেকে ১৩০০ খৃষ্ট পুর্বাব্দ পর্যন্ত। মানে এখন থেকে প্রায় সাড়ে পাচ হাজার বছর আগের। এই সভ্যতার নিদর্শন, এবং এরা কারা, কোথায় গেল এই নিয়ে পরে কোন লেখায় লিখব, আজকে গনিতে ফেরত যাই।
অপস্তম্ব অবশ্য অত পুরোনো নন, আনুমানিক খৃষ্ট পুর্ব পঞ্চম শতাব্দির সময়কালের (এখন থেকে আড়াই হাজার বছর আগের)। তার লেখা “কল্পসুত্র “ বই-এর ৩০তম অধ্যায় “সুল্বসুত্রে“ (বানান ভুল হতে পারে) গনিত এবং জ্যামিতির অনেকগুলো উল্লেখযোগ্য সুত্র আছে। যেমন একটা হচ্ছে irrational সংখ্যার ব্যবহার, এটাই মানব সভ্যতায় প্রথম এরকম সংখ্যার উল্লেখ। Irrational সংখ্যা হচ্ছে যাদেরকে দুটো সংখ্যার অনুপাত হিসেবে প্রকাশ করা যায় না (একারনে এসব সংখ্যার ডিজিট লিখে শেষ করা যায় না, পৌন পুনিক নয়), যেমন ২ এর স্কয়ার রুট, অথবা পাই (বৃত্তের ব্যস এবং পরিধির অনুপাত)। দেখা যাচ্ছে অপস্তম্বের সময়ে তারা ২ এর স্কয়ার রুট (১.৪১২১৫৬ ...) বের করার একটা পদ্ধতিও (approximation) বের করেছিলেন, এটাও ঐ সময়ে অন্য কোন সভ্যতায় কারো জানা ছিল না:
sqrt(২) = ১ + ১/৩ + ১/(৩*৪) - ১/(৩*৪*৩৪)
আর সমকোনী ত্রিভুজের সুত্র a^2 = b^2 + c^2 যেটা আমরা পিথাগোরাসের বলে জানি দেখা যাচ্ছে এগুলো ভারতে পিথাগোরাসের আগে থেকেই জানা ছিল।
আরো ঘাটতে ঘাটতে পেলাম পাণিনির নাম। পাণিনি ৫২০-৪৬০ খৃষ্টপুর্বাব্দের কোন সময়ে গান্ধারা (এখন যেখানে পাকিস্তানের পেশোয়ার) রাজ্যে বাস করতেন। পাণিনি সংস্কৃত ব্যকরনের জন্য প্রসিদ্ধ, তবে আমার নিজের ব্যকরন নিয়ে কোন আগ্রহ নেই। একবার একটা গ্রাড কোর্স নিয়েছিলাম কম্প্লেক্সিটি থিওরীর ওপরে, থিওরেটিকাল কম্পিউটার সায়েন্সের অংশ হিসেবে, ওখানে একবার মনে হয় প্রফেসর পাণিনি নামটা বলেছিলেন। তখন ভালো মতো খেয়াল করিনি, অপস্তম্ব নিয়ে ঘাটতে গিয়ে পেলাম formal language theory এর অনেক সুত্রই পাণিনির গ্রন্থে আড়াই হাজার বছর আগে ছিল যেমন Panini-Backus form। সেই আমলে পাণিনি মেটারুল, ট্রান্সফরমেশন, রিকার্শন (recursion) ব্যবহার করেছেন। দু:খজনক যে তার এ গবেষনা আর আবিস্কার আড়াই হাজার বছর পরে আবার আবিস্কার করতে হচ্ছে।
আসলে উপমহাদেশে আমাদের সমস্যা হচ্ছে পরবর্তিতে এ ধারা আমরা আর অব্যহত রাখতে পারি নি। বিভিন্নভাবে stagnation চলে এসেছিল, তার ওপর শেষের এক হাজার বছর প্রথমে মুসলিম, পরে ইউরোপীয়ান কলোনাইজেশনে সামনে আগানো আর হয়ে ওঠে নি। ঐ সময়টাতে বুদ্ধির চেয়ে তরবারীর জোরের প্রয়োজনীয়তা ছিল বেশী।
ছবি: ভারতের ডাকটিকেট
1 Comments:
আপনার লেখা ফায়ারফক্সে পড়া যায় না । লেখা পোস্ট করার সময়ে অ্যালায়েন জাস্টিফায়েড করবেন না ।
Post a Comment
<< Home