উত্স-ব
দলবদ্ধভাবে আমরা যেসব কাজে অংশ নেই যেমন প্রার্থনা, যুদ্ধ , শিকার এসব ছাপিয়ে উত্সব বোধ হয় সবচেয়ে জনপি্রয়। লোকে যখন শৈশবের স্মূতিচারন করে তখন সুখ স্মূতিগুলোর মধ্যে প্রায়ই মেলা, ঈদ , পুজা, পার্বন চলে আসে। আমার মনে পড়ে যখন আমি নিজেও একজন শিশু ছিলাম, দিনক্ষন ঠিক করে যে সব উত্সব হতো, সেসব ক্ষেত্রে উত্সবের দিন ছাড়াও, অমুক দিনে উত্সব হবে এই আগ্রহের build up টাও খুব উপভোগ্য থাকতো। আমি অনেক সময় দাবি করতাম ঈদের চেয়ে ঈদের আগের দিন সন্ধ্যার মজা বেশী। চাঁদ দেখা গেলে কাল ঈদ এই নিয়ে তখন আমরা যত উল্লাস করতাম শেষমেশ ঈদের দিন দেখা যেত আশানুরুপ মজার কিছু হতো না। শৈশব শেষ করে একসময় যখন বাল+ষ্ঞক হলাম, তখন ঈদের স্বাভাবিক আনন্দের সাথে যোগ হলো টিনএজ ডেটিং গেম। অন্যান্য সময়ের চেয়ে ঈদে ডেটিং করা তুলনামুলক ভাবে সহজ ছিল, বাবা মা বড় ভাইয়ের চোখ রাঙানীও একটু শিথিল থাকতো ঐ দিনের জন্য। ছেলেদের দলে এক দুইজন সৌভাগ্যবানের সত্যিকার বান্ধবী ছিল, বাকীদেরকে সখা হয়েই কাটাতে হতো, তাতে কি, গন্ধ শুকলেও অর্ধেক খাওয়া হয়। যৌনতা জড়ালে স্বভাবতই থ্রীলের মাত্রা বেড়ে যায়, বোধ করি এজন্যই সেরা ঈদের দিন গুলো জীবনের ঐ অংশেই সীমাবদ্ধ।
ইন্টেনসিটি চিন্তা করলে ঈদ/পুজার সমমানের বা একটুবেশী গাঢ় উত্সব বোধ হয় “বিয়ে“। যখন ছোট ছিলাম পর পর কয়েক বছর অনেকগুলো খালা, ফুপু এবং চাচার বিয়ে হলো। বিয়ের অনুষ্ঠানের সুবিধা হচ্ছে উত্সব বেশ কয়েকদিন ধরে চলে, ঠিক একদিনেই ফুরিয়ে যায় না। আর বিয়ের মধ্যে যৌনতার অভাব বোধ হয় কমই আছে। গ্রামের দিকের বিয়েগুলোতে আড়ালে আবডালে এমন সব সুযোগ পাওয়া যায়, যেগুলো স্বাভাবিক অবস্থায় বড়দের চোখ এড়ানো মুস্কিল । বিয়ের হুল্লোড়ের মাঝেও চেনা অচেনা কিশোর কিশোরীদের মাঝে একরকম অদূশ্য টানাপোড়ন চলতে থাকে ।ঢাকায় আমার ধারনা ঈদ, পুজা এসব ধর্মীয় উত্সব ছাড়া, আর সত্যিকার উল্লেখযোগ্য উত্সব বলতে নববর্ষ এবং একুশের বইমেলা । নববর্ষ আমাদের সাংস্কূতিক উত্সব। কয়েকটা রাষ্ট্রীয় উত্সবও আছে, স্বাধীনতা দিবস, বিজয় দিবস। সরকারী খরচে প্যারেড, আর কিছু টুকটাক অনুষ্ঠান ছাড়া এসব উত্সবের প্রভাব ভীষন সীমিতই বলতে হয়।
উত্সব অবশ্য কোনভাবেই বাঙালীর একার সম্পত্তি নয়। সবদেশে, সব জাতির মধ্যেই নানা রকম উত্সব আছে। আধুনিক ধম ê ,রাষ্ট্র, সংস্কূতি গুলোর আবির্ভাবেরও হাজার হাজার বছর আগে থেকে মানব সমাজে উত্সব আছে। যেসব আদিমতম সমাজ এখনও টিকে আছে তাদের মধ্যেও বিভিন্ন ধরনের উত্সব প্রচলিত। প্রশ্ন হচ্ছে উত্সবের এত ছড়াছড়ি কেন? ধর্ম, দেশ এদের উত্সব নিয়ে এত মাথা ব্যাথা কেন? একদম সব ধর্মেই আর কিছু না থাকুক উত্সবের ব্যাবস্থা আছে। এসব উত্তরের জন্য পুরো ব্যপারটা উলটো দিক থেকে দেখা যাক।
যদি কেউ আমাকে বলে এমন একটা সংস্কূতি ডিজাইন করতে যেটা বহু বছর টিকে থাকবে, তাহলে আমি কি কি উপাদান এর মধ্যে যোগ করবো? মিম নিয়ে আমার একটা লেখা ছিল, হাতে সময় থাকলে পড়ে নিতে পারেন। ধর্ম , সংস্কূতি প্রত্যেকেই এক ধরনের মিম বলা যেতে পারে। জিন বা ভাইরাসের মতো এদের সাফল্য নির্ভর করে হোস্টকে কতখানি সফলভাবে exploit করতে পারছে তার ওপর। হোস্টের দুর্বল দিকগুলোর ওপর ভিত্তি করে এরা বিস্তার লাভ করে। যেহেতু উত্সবের দিকে মানুষ হিসেবে আমাদের আকর্ষন আছে, সুতরাং একটা সফল সংস্কূতি মিম নিশ্চিতভাবে মানুষের এ দুর্বলতাকে (আরো অন্যান্য দুর্বলতা সহ) কাজে লাগাতে চেষ্টা করে। সংস্কূতি যেটা করে উত্সবকে রিচুয়ালের রুপ দেয়, পুজা, ক্রিসমাস, ঈদ প্রত্যেক উত্সবের সাথেই খেয়াল করলে দেখবেন বেশ কিছু আনুষ্ঠানিকতাও জড়িয়ে দেয়া আছে। যেসব সংস্কূতি উত্সবকে কাজে লাগাতে পারে না, তাদের অনেকের ভিত্তিই ক্রমশ দুর্বল হয়ে যায়, ঠিক যেমন আমাদের ২৬শে মার্চ আর ১৬ই ডিসেম্বরের অবস্থা। ৩০ বছরেই পাত্তা না পাওয়ার মত অবস্থা। কয়জন শিশু কিশোর আছে যারা ১৬ই ডিসেম্বরের জন্য ঈদের মত আগ্রহ নিয়ে অপেক্ষা করে?
আমার ধারনা এটা আমাদের একটা পরিকল্পনার ভুল। আরও অন্যান্য মিম যেমন থার্টি ফার্স্ট নাইট বা ভ্যালেন্টাইন্স ডে কিন্তু গত এক দশকেই ভালো রকম বাসা বেধেছে বাংলাদেশে, অথচ বিজয় দিবস পারল না। থার্টি ফার্স্ট বা ভালোবাসা দিবস দুটোই যৌনতাকে চমত্কার ভাবে ব্যবহার (exploit?) করেছে। ১৬ই ডিসেম্বর বা ২৬শে মার্চ নিয়ে এরকম মেমেটিক কোন প্ল্যান করা যায়? যেমন হতে পারে ঐ দিন গুলোতে আমরা Halloween এর আদলে একটা থিম বেজড কিছু করব, যেখানে কিশোর কিশোরীরা অংশগ্রহন করবে? অথবা পাবলিক কনসার্ট এবং শেষে আতশবাজি পোড়ানো? উত্সবগুলোর মধ্যে মানবীয় আকর্ষক উপাদান থাকতে হবে। একদমই সরকারী রাস্তায় ফেলে রাখলে জাতীয় দিবসগুলো অচিরেই আরো মুল্যহীন হয়ে পড়বে„
1 Comments:
Appreciate this blog postt
Post a Comment
<< Home