Thursday, July 12, 2007

Coolness factor

গত বছর ক্রিসমাসের সময় যুক্তরাষ্ট্রের সফটওয়্যার কম্পানী মাইক্রোসফট একটা পোর্টেবল মিডিয়া ডিভাইস নিয়ে আসে বাজারে৷ আমি জানি না আপনারা নাম শুনেছেন কি না, Zune৷ এই মার্কেট টা আগে থেকেই এপল তার আইপড দিয়ে দখল করে রেখেছিল৷ সম্ভবত মাইক্রোসফটের একটা চেষ্টা ছিল এপলের শেয়ারে ভাগ বসানোর৷ কনজিউমার ইলেকট্রনিক্স মার্কেটে এমনিতেই প্রতিযোগিতা মারাত্মক৷ মাইক্রোসফটের দুর্ভাগ্য জুন সুবিধা করতে পারে নি, যদিও দামের তুলনায়, একই ধরনের অন্যান্য ডিভাইসের চেয়ে সুযোগ সুবিধা খানিকটা বেশীই ছিল জুনে৷ বিশেষ করে Wi-fi কানেক্টিভিটি৷ ইলেকট্রনিক্স নিয়ে ম্যাগাজিন, ব্লগ বা নানারকম টেক ফোরামে জানুয়ারীর দিকে আলোচনা চলতো জুন এতটা ফ্লপ করলো কেন৷ বিশাল পরিমান মিডিয়া ক্যাম্পেইন করা হয়েছিল জুনের জন্য, রিলিজের আগে, কিন্তু কাজ হয় নি৷

আসলে মব সাইকোলজি বেশ জটিল৷ ভালো হওয়াটাই যথেষ্ট নয় (জুন ভালো কিনা সেটা উহ্য রেখে)৷ পাব্লিক এডপশনের জন্য আরেকটা গুরুত্বপুর্ন উপাদান আছে৷ আমি ঠিক মনে করতে পারছি না Cool এর যথাযথ বাংলা প্রতিশব্দ কি হতে পারে? কোন কনজিউমার আইটেম থেকে শুরু করে গান, টিভি সিরিজ, মতবাদ এসবের জনপ্রিয়তার পেছনে coolness factor কে ঠিক উপেক্ষা করা যায় না৷ ভালো হলেই আসলে ভালোবাসা পাওয়া যায় না৷ ভালো হওয়ার সাথে সাথে ফ্যাশনেবল হওয়া জরুরী৷

এই যেমন ব্লগে এরকম আলোচনা দেখেছি শিবিরের attrition এত বেশী কেন৷ ছোট বাচ্চারা বড় হয়ে কেন শিবির ছেড়ে যায়, এত সুযোগ সুবিধা দেয়ার পরও৷ হয়তো প্রত্যেকের জন্য আলাদা কারন দেখানো যেতে পারে৷ কিন্তু আমার কেন যেন মনে হয়, শিবির নানাভাবে বাচ্চাদেরকে সাহায্য করলেও শিবিরের coolness এর বড় অভাব৷ স্রেফ একটা জিন্স প্যান্টের coolness-ও শিবিরের চেয়ে বেশী৷ হয়তো প্রচ্ছন্ন এই coolness এর ঘাটতি শিবির ছাড়তে সাহায্য করে (? মতামত দিন)৷

আরেকটা কৌতুহল আমার, ঢাকায় একদশক আগে আমরা বিদায় নেয়ার সময় বলতাম “খোদা হাফেজ”, কিভাবে যেন এখন “আল্লাহ হাফেজ” টাই বেশী প্রচলিত মনে হয়৷ আল্লাহ হাফেজ কি বেশী cool? স্কার্ফ পড়া মেয়েদের সংখ্যা যে বেড়েছে এটা আরো অনেকের মুখে শুনেছি, coolness anyone? তবে এর বাইরেও আছে৷ আমাদের সময় মেটাল গান শোনা ছিল কুল৷ হিন্দী শব্দ “ঝাক্কাস” বা বন্ধুদের আড্ডায় এসবের ব্যবহার হয়তো cool? ঝাক্কাস মানেই মনে হয় cool৷ যখন যেটা ফ্যাশনেবল, দোষের কিছু নেই৷

“মুক্তিযুদ্ধ” কি তার coolness হারিয়েছে কোনভাবে? মুক্তিযুদ্ধের সাথে আদৌ coolness এর সম্পর্ক আছে কি না৷ ওইদিন তো একজনের প্রশ্নের উত্তরে জানালাম আমাদের পরিবারের অনেকে মুক্তিযোদ্ধা, আগারতলা মামলার আসামীসহ৷ কিন্তু আরো আত্মীয় স্বজন আছে৷ দক্ষিনবঙ্গের তখনকার একজন নামকরা মুসলিম লীগ নেতা, রাস্ট্রপতি আব্দুর রহমান বিশ্বাসের ঘনিষ্ঠ বন্ধুও আমাদের আত্মীয়৷ মুক্তিযোদ্ধাদের হাতে মারা না পড়লে এতদিনে বিএনপির উপরের সারির নেতা হওয়ার সম্ভাবনা ছিল৷ তো তার ১৮-১৯ বছরের ভাতিজা ৭১ এর জুন-জুলাইয়ের দিকে পাক বাহিনীর লঞ্চ রেইডের সময় মুক্তিবাহিনীর সদস্য হিসেবে ধরা পড়ে৷ পাক আর্মির সাথে থাকা রাজাকারদের কারনে বাকী মুক্তিবাহিনীর সদস্যদের তখনই মেরে ফেলা হলেও ভাতিজা তখনকার মতো বেচে যান, কয়েক ঘন্টার জন্য আসলে৷ লঞ্চের কোথাও লুকানো অস্ত্র ছিল, ভাতিজা ওখান থেকে অস্ত্র এনে আর্মির যে কমান্ডার (ক্যাপ্টেন, মেজর এরকম কিছু) ছিল তাকে গুলি করে পানিতে ঝাপ দেয়৷ তবে কতক্ষন আর ডুবে থাকা যায়, লঞ্চে ওপর থেকে সৈন্যদের গুলিতে ভাতিজা নিহত হন৷ বহুবার নানা বাড়ীতে গিয়ে এই কাহিনী শুনেছি, নানাজনে নানাভাবে এদিক সেদিক করে বলেছে৷ গোড়া পাকিস্তান পন্থী পরিবারে বড় হওয়া ১৮-১৯ বছরের যে ছেলে এই কান্ড করলো, সে দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ হয়ে, দেশের জন্য মহান দ্বায়িত্ববোধ থেকে একাজ করেছে, আমার কাছে একটু বেশী বেশী মনে হয়৷ ১৫-২০ বছর বয়সী আর যে কয়জন মুক্তিযোদ্ধাকে চিনি, তাদের সবার ক্ষেত্রেই আমার গাঢ় বিশ্বাস মুক্তিবাহিনীর coolness টাই বড় ছিল৷

এখন যখন দেখি মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় মরচে ধরেছে৷ জোর করে গিলিয়ে দিতে হচ্ছে লোকজনকে, তখন সন্দেহ হয় মুক্তিযুদ্ধ বোধ হয় আর ফ্যাশনেবল নেই, সামি ইউসুফের গান এখন মুক্তিযুদ্ধের ডাকের চেয়ে বেশী cool৷ এই সমস্যা সমাধানের দায় আমাদেরই৷ মুক্তিযুদ্ধকে ফ্যাশন হিসেবে ধরে রাখতে পারি নি এজন্য মুক্তিযুদ্ধ পিছনে পড়ে গিয়েছে, ঠিক এজন্যই অনেকে বলার সুযোগ পায় ৩০ বছর পেছনে গিয়ে লাভ কি, আসুন সামনে তাকাই৷ গাছের পাতা দেখে বোঝা মুষ্কিল তার মুলটা কোথায়, কিন্তু মাঝে মাঝে সমস্যার মুলে যাওয়ার চেষ্টাটা বোধ হয় করা উচিত৷

আমিত্ব বনাম প্যাটার্ন

এরকম বিষয় নিয়ে লেখা দেব প্ল্যান করছিলাম অনেক দিন ধরে৷ ভেতরটা ঠিক সাজানোর সুযোগ হয় নি৷ আজকে বেশ কিছুটা randomized হয়ে আছি, সেভাবে লেখার মত কোন কিছু মাথায় আসছে না৷ এক অর্থে বিষয়টা (topic) অনেক ভালো ছিল৷ ভালো মতো লিখতে পারলে একটা গূঢ় সত্য নিয়ে ভালো আলোচনার সুত্রপাত করা যায়৷ মানুষের ভাষার (natural language) একটা সমস্যা হচ্ছে এর ডাটা ট্রান্সফার রেট এখনকার যুগের জন্য যথেষ্ট নয়৷ হওয়ার কথাও না৷ ভাষা প্রস্তরযুগের হাতিয়ার (tool), অনেকখানি বিস্তৃত করে ইনফরমেশন যুগেও এর ব্যবহার হচ্ছে৷ এজন্য লিখতে চাই একরকম, লেখার পর যারা পড়বে তাদের মনের মধ্যে বিষয়টা ধরা দেবে হয়তো আরেকভাবে৷ Copy fideltity বেশ খারাপ বলতে হয়৷ আমার ধারনা এসব কারনে শীঘ্রই ভাষার একটা আপগ্রেড দরকার৷

প্রসঙ্গটা ছিল, আমিত্ব নিয়ে৷ মানে “আমি” আসলে কোথায় থাকে৷ নানা রকম ভাববাদী চিন্তাভাবনা আছে এ নিয়ে, তবে এখন ওপথ মাড়াচ্ছি না৷ সায়েন্টিফিক দিক দিয়ে দেখতে গেলে আমাদের মাথায় থাকে “আমি”৷ সমস্যা হচ্ছে সচরাচর “আমি”কে যেরকম কেন্দ্রিভুত একটা সত্তা ভাবতে আমরা অভ্যস্ত, আমাদের মস্তিষ্কে ঠিক সেরকম কেন্দ্রীভুত কোনকিছুর অস্তিত্ব নেই৷ এরকম কোন বিশেষ স্থান বলা যাবে না যেখান থেকে সমস্ত সিদ্ধান্ত, চিন্তাভাবনা বের হয়ে আসছে৷ “আমি” আসলে একটা illusion, “আমি” কোথাও নেই৷

মস্তিষ্কের নিউরনগুলো অটোমেটিক “আমি”কে তৈরী করে৷ যেমন কোন কারনে যদি ব্রেইনের মধ্যে একটা পার্টিশন তৈরী হয় (এক্সিডেন্ট কিংবা টিউমার অপারেশনের পর) তখন একাধিক “আমি” তৈরী হয়ে বসতে পারে৷ বেশ বাজে অবস্থা, এক মাথার ভেতর দুজন “আমি”৷ কিন্তু “আমি”র ইল্যুশনটা এত চমৎকার যে হঠাৎ করে বোঝা মুস্কিল৷

মস্তিষ্কের নিউরন (কোষ) গুলো সবসময় পরিবর্তন হচ্ছে৷ প্রতিটা চিন্তা নিউরন গুলোর কানেকশনের physical পরিবর্তন করছে৷ ব্যাপারটা এরকম যে এই এক লাইন যখন পড়ছেন তখন পড়ার জন্য বেশ কিছু কোষ তাদের কানেকশনের অবস্থান বদলে নিল৷ চিন্তাগুলো যতই দ্রুত, আর হাওয়ায় মিলিয়ে যাওয়ার মতো মনে হোক না কেন তাদের বাস্তব অস্তিত্ব আছে মাথার ভেতর৷ কে জানে অচিরেই হয়তো এমন যন্ত্র আবিস্কার হবে যা বাইরে থেকে স্ক্যান করতে পারবে আপনি কি ভাবছেন৷ মনে মনে গালি দিয়ে পার যাওয়ার সুবিধাটা হয়তো তখন নাও থাকতে পারে৷

আবার স্মৃতি (memory) গুলোও নিউরনের কানেকশনের মাধ্যমে রক্ষিত৷ যেমন পুরোনো ঘটনা, লোকজনের চেহারা এসব৷ আমি যেমন ২০ বছর আগের দুএকটা ঘটনা এখনও বেশ নিখুত ভাবে মনে করতে পারি৷ কিন্তু ২০ বছর আগের যেসব অনুপরমানু দিয়ে আমার স্মৃতিটা তৈরী হয়েছিল, সেগুলোর কোনটাই এখন আর নেই৷ সেক্ষেত্রে প্রশ্ন হচ্ছে স্মৃতিটা থাকলো কিভাবে৷ আসলে যেটা হচ্ছে প্রতি নিয়ত আমাদের শরীরে পার্টসগুলো বদলানো হচ্ছে৷ পুরোনো কোষ মরে গিয়ে নতুন কোষ জন্মাচ্ছে৷ এজন্য পুরোনো নিউরন আর তাদের কানেকশনের উপাদানগুলো কোনটাই নেই৷

ঘটনাটা তুলনা করা যায় এভাবে, ধরা যাক আপনাকে এক পাতা লেখা দিলাম আমি৷ আপনি সেটা ফটোকপি করলেন৷ এখন আমার দেয়া লেখা আর আপনার ফটোকপি করা লেখার ভেতরের বক্তব্য হবহু এক৷ অথচ তারা ভিন্ন ভিন্ন উপাদান দিয়ে তৈরী৷ অর্থাৎ দুটোর মধ্যে মিল হচ্ছে তাদের প্যাটার্ন একই, একটাতে যে প্যাটার্ন আছে অন্যটাতেও তাই৷ যদিও উপাদান আলাদা৷

স্মৃতির ব্যপারটাও তাই৷ ২০ বছরে বহুবার উপাদান বদলেছে আমার নিউরন গুলোর৷ যেটা রয়ে গেছে সেটা হচ্ছে ওদের কানেকশনের প্যাটার্নটা৷ ব্রেইনের মধ্যে নিউরনের প্যাটার্নগুলোই আমাদের স্মৃতি, আমাদের সিদ্ধান্ত নেয়ার মেকানিজম, আমাদের চিন্তাভাবনা অথবা আমাদের “আমি”৷ “আমি” অবশ্য অনেকগুলো প্যাটার্নের একটা জটিল কম্বিনেশন৷ আর দশটা প্যাটার্নের মতো এটাও ধীরে ধীরে বদলাচ্ছে৷ যেমন ২০ বছর আগের “আমি” আর এখনকার “আমি”তে ভীষন তফাৎ৷ এক বছর আগের “আমি”র সাথেও অনেক পার্থক্য৷ “আমি”র প্যাটার্নটা কিছুটা বদলে দেওয়া তেমন কঠিন না৷ এই যেমন এই লেখাটা পুরো যদি পড়ে থাকেন, তাহলে আমি আমার মাথা থেকে বেশ কিছু প্যাটার্ন আপনাদের মাথায় ট্রান্সফার করলাম, তাতে আপনাদের মাথার ভেতরের প্যাটার্ন একটু হলেও বদলে গেল৷ (তবে বিশেষ কোন প্রক্রিয়ার প্যাটার্নটা বেশী বদলালে তাকে বোধহয় বলে ব্রেইনওয়াশ)৷

লিখতে লিখতে ভালো মাথা ধরে গেল, জ্বর আসতে পারে, বাকী বক্তব্য পরে আসছে৷

লাইফ হ্যাকিং

এই সংখ্যা টাইম ম্যাগাজিনে পড়লাম লেখাটা৷ এর আগেও অল্পবিস্তর শুনেছি৷ হ্যাকিং শব্দটা অবশ্য Geek (এগুলোর বাংলা করা হয়েছে কখনো?) জগতে অনেক আগে থেকে পরিচিত৷ মোটামুটি মানে হচ্ছে দুর্বোধ্য কোন সমস্যার শর্টকাট বের করা৷ অথবা বাইরে থেকে সমস্যার সাময়িক সমাধান বের করা৷ অনেক সময় নিগেটিভ অর্থে ব্যবহার হয়৷

টেক ওয়ার্ল্ডে জীবনের দর্শন বেশ পাল্টে গেছে৷ আসলে কথাটা একটু ভুল হলো৷ বলতে গেলে সব জায়াগাতেই পাল্টে গেছে, আরো যাচ্ছে৷ এক জেনারেশন আগে আমার বাবা-মা তাদের বিশের বা ত্রিশের কোঠায় যেভাবে দেখতেন এখন আর সেরকম সুযোগ নেই৷ আমাদের এখানে এখন যেমন দেখি৷ সুখের সাথে সাফল্যের জন্য চেষ্টা বেশী৷ হয়তো সুখ একমাত্র টার্গেট না এখন৷ নিরন্তর self improvement এর চেষ্টা, নিজেকে পার হয়ে যাওয়ার যে ভীষন প্রেরনা এটা আমার বাবা-মার সময়ে তাদের মধ্যে এমন ভাবে ছিল না৷ বিশেষ করে সিলিকন ভ্যালীতে এটা এখন একটা রোগ, অথবা ডিজিটাল সাবকালচার৷

ওখানে যেমন কয়েকটা বুদ্ধি দেওয়া আছে, ঘন্টায় একবারের বেশী ইমেইল চেক না করা অথবা মিটিং এ বসার ব্যবস্থা না করে লোকজনকে দাড় করিয়ে রাখা ইত্যাদি৷ তবে ইমেইল বা ইন্সট্যান্ট মেসেজিং যে মনোসংযোগ নষ্ট করে এটা আরো কয়েকবছর ধরে আমি লক্ষ্য করছি৷ ফোন আসলে যেমন আমার মেজাজটা খারাপ হয়ে যায়৷ আমি ইদানিং যেটা করি, কিছুক্ষন কাজ করি, যেমন আধাঘন্টা তারপর ৫ মিনিট ব্রেক নেই৷ হয়তো কফি খাই নাহলে ইন্টারনেট ঘাটি, যেমন সচলায়তন পড়ি৷ নাহলে দিনে ১২-১৪ ঘন্টা কাজ করাটা কঠিন হয়ে দাড়ায়৷ লাইফ হ্যাকিং এর একটা মুল টার্গেট মনে হয় efficiency৷ ১২ ঘন্টা কাজের চেয়ে বড় লক্ষ্য মনে হয় ১২ ঘন্টার আনুপাতিক throughput৷ সবচেয়ে কঠিন অবশ্য সৃষ্টিশীলতা ধরে রাখা৷ দিন শেষে পরিশ্রান্ত হয়ে সবকিছুই হ্যাক করতে মন চায়৷

যাহোক সকাল বেলা ব্লগ লিখে মাথা গোলমাল করতে চাই না৷ লাইফ হ্যাকিং নিয়ে অনেক ওয়েবসাইট, ব্লগ আছে, টায়ার্ড লাগলে ঘুরে দেখতে পারেন৷

দিন কেটে যায় (২)

দিন কাটছে তবে ভালো ভাবে যাচ্ছে না৷ মঙ্গলবার যে কাজগুলো শেষ করা দরকার ছিল, আজকেও শেষ হয় নি৷ নানা রকম উটকো ঝামেলা এসে যোগ দিচ্ছে৷ এ সপ্তাহে শরীরটা খুব খারাপ সার্ভিস দিল৷ তিন বেলা খাওয়াই, গোসল করাই, বাথরুমে নিয়ে যাই তারপরও কাজের সময় টায়ার্ড লাগে জ্বর ওঠার পর থেকে৷ এখানে ইদানিং তাপমাত্রা খুব ওঠানামা করছে৷ সকালে এখন যেমন ১৭ ডিগ্রী৷ রাতে ৮-৯ এর মধ্যে থাকে৷ দুপুরের পর গিয়ে দাড়াবে ৩০ এ৷ বাঙালী শরীর এত ধকল নিতে চায় না৷

একটা ভিডিও রেন্টাল ক্লাবের সদস্য হলাম মাস খানেক আগে৷ প্রতি ছয়মাসে একবার হই৷ এরা দিনে ৩টা মুভি ফ্রী নিতে দেয় সদস্য হলে৷ আমি মেকানিকাল ওয়েতে মুভি দেখি৷ কাজের মতো করে৷ প্রতি দুইদিনে তিনটা দেখা হয়৷ ভালো লাগুক না লাগুক টেনেটুনে দেখি ফেলি৷ এবার একটা অভ্যাস হয়েছে তিনটার মধ্যে অন্তত একটা পর্ন মুভি দেখা৷ ভালো পর্ন, মানে যেগুলো ভালো করে বানানো হয়েছে৷ প্রচলিত হার্ডকোর পর্ন দেখতে ভালো লাগে না, অনেক বেশী দেখা হয়ে গেছে মনে হয়৷ এই সিনেমাগুলোতে স্ক্রিন রাইটারের খুব অভাব৷ দেখতে দেখতে মনে হয় এর চেয়ে আমাদের মুখফোড় বা লালমিয়া ঢের ভালো লিখতে পারবে৷ এদের দুইজনকে নিয়ে একটা সামাজিক পর্ন মুভি প্রোডিউস করার ইচ্ছা আছে৷ বাকি মুভিগুলো (যেগুলোকে পর্ন হিসেবে দেখিনি) নিয়ে রিভিউ পোস্ট দেব কয়েকদিন পরে৷

আমাদের অফিস থেকে employee morale event গেলাম বুধবার৷ আসলে এজন্যই কাজে একটু পিছিয়ে গেলাম৷ পুরো দিনটা নষ্ট৷ সচরাচর যাই না৷ গত দুবছর যাই নাই৷ ফ্রী খাবারের লোভে কিভাবে কিভাবে এবার চলে গেলাম৷ সিদ্ধান্ত না নিয়েই৷ সকালে অফিসে গিয়ে দেখি সবাই বাসে উঠছে, আগাপিছু না ভেবে উঠে গেলাম, ৫টার সময় অফিসে এসে আর কোন কাজ করা হয় নি৷ এখানে একটা 3D রাইড আছে, সেরকম ভালো না, এর চেয়ে ঢের ভালো রাইডে উঠেছি আমি৷ তখন মনে পড়লো ইমার্সিভ ভার্চুয়াল রিয়েলিটি নিয়ে একটা লেখা দেয়া যায়৷

রজনীকান্তের একটা সিনেমার এই ভিডিওটা আছে ইউটিউবে৷ এখানকার টিভিতে ফানিয়েস্ট ভিডিওর মধ্যে এর নাম দেখলাম৷ দেখেন তাহলে আপনারা -
http://www.youtube.com/watch?v=gx-NLPH8JeM৷

আমার ডিএনএ’র পথচলা

ডিএনএ সংক্রান্ত নানা লেখা লিখেছি গত দেড় বছরে৷ এমনিতে আমি বায়োলজির ছাত্র নই৷ কিন্তু স্কুলে থাকতে মানুষের উৎস নিয়ে খুব আগ্রহ ছিল৷ দেশে সেরকম ভালো বইপত্র পাওয়া যেত না৷ শিশু একাডেমি পাতাবাহার নামে একটা বই বের করেছিল, ওখানে একটা প্রবন্ধ ছিল, “মানুষ কি করে মানুষ হলো”৷ টু’তে থাকতে কিনেছিলাম মনে হয়৷ তখন ঠিক বিষয়টা ধরতে পারি নি, কিন্তু কৌতুহলটা তৈরী হয়েছিল৷ এরশাদ বিবর্তনবাদ থাকার জন্য “জ্ঞানের কথা” বইটি ব্যান করে দেয় আশির দশকের মাঝামাঝিতে৷ ওই বইটাতেও অনেকগুলো ভালো প্রবন্ধ ছিল এরকম বিষয়ে৷ শৈশবের কৌতুহল কালক্রমে দানাপানি পেয়ে আরো বেড়ে উঠলে, যখন যুক্তরাষ্ট্রে আসি তখনই ঠিক করে রেখেছিলাম আমার নিজের ইতিহাসটা আমার জানতে হবে৷

ইতিহাসের সাথে ডিএনএর একটা ভালো সম্পর্ক আছে৷ পুনরাবৃত্তি তবুও সংক্ষেপে আবার বলি ডিএনএ আর ইতিহাস কিভাবে জড়িত৷ আমাদের সবার শরীরে বেশীরভাগ কোষে একরকম সূত্র দেয়া আছে আমাদের শরীরটা কিভাবে বানাতে হবে, বা শরীরের দৈনন্দিন কাজ কর্ম কিভাবে করতে হবে৷ সূত্রটা আছে এভাবে “ATTCTAATTTAAACTATTCTCTGTTCTTTC…”৷ A,T,C,G গুলো আসলে লেখা আছে ছোট ছোট অনু আকারে সাজিয়ে৷ আমাদের জন্মের সময় এই সুত্রগুলো দেখে দেখে আমাদের শরীরটা তৈরী হয়েছে মায়ের পেটের ভেতরে৷ আবার এখনও আমাদের শরীরে নানা কাজকর্ম এগুলো ধরে হচ্ছে, যেমন রক্ত বানানো, পেশী, হাড়গোড় বানানো, রিপেয়ার করা ইত্যাদি৷ তবে এই সূত্রগুলো শুধু মানুষের শরীরেই না, সমস্ত প্রানী, উদ্ভিদ, ব্যাক্টেরিয়া, ভাইরাস সবার মধ্যেই আছে৷ সবাই তাদের কাজকর্ম চালাচ্ছে এগুলোর ওপর ভিত্তি করে৷ ঘটনা হচ্ছে এসব সুত্র একেকজনের একেকরকম৷ যেমন গাছের কাছে সূত্র আছে কিভাবে পাতা বানাতে হবে, আবার আমাদের কাছে সুত্র আছে কিভাবে হাত, মুখ বানাতে হবে৷ আবার অনেক সূত্র একই রকম, বা কাছাকাছি৷ আমাদের শরীরে খাবার থেকে শক্তি তৈরী করার যে সূত্র, বহু প্রানীর কাছে একই সুত্র হবহু আছে৷

যেটা করা যায় তাহলো এই মিল আর অমিলের ওপর ভিত্তি করে বের করা যেতে পারে কার সাথে কার কি সম্পর্ক৷ কারন সূত্রগুলো আমরা পাই বাবা-মার কাছ থেকে৷ বাবা ৫০%, মা ৫০%৷ তবে এর মধ্যে ব্যাপার আছে৷ বাবা আর মার কাছে এসব সূত্র যখন কপি করা হয় তখন টুকটাক ভুল ঢুকে যায় সূত্রের মধ্যে৷ যে কারনে বাবা-মার কাছ থেকে সবসূত্র একদম একই না হয়ে একটু আধটু এদিক-ওদিক হয়ে যায়৷ সাধারন নাম হচ্ছে মিউটেশন৷ সেকারনে অনেক দুরের আত্মীয় যারা তাদের সাথে ধরা যায় আমার অনেক পার্থক্য থাকবে সূত্র গুলোয়, আবার কাছের যারা তাদের সাথে তুলনামুলক কম পার্থক্য থাকবে৷ আবার অন্যদেশের মানুষের সাথে বেশ পার্থক্য হওয়ার কথা৷ বলতে গেলে ডিএনএ থেকে বেশ ভালোভাবে বোঝা যায় কে কার কতটুকু কাছাকাছি৷ অন্য প্রানীর সাথে যেমন আমাদের অনেক পার্থক্য৷ যত দুরের প্রানী তত বেশী পার্থক্য (অন্য প্রানীর মধ্যে শিম্পাঞ্জি সবচেয়ে কাছাকাছি)৷

গত কয়েকবছর ধরে বিজ্ঞানীরা একটা প্রজেক্ট হাতে নিয়েছেন পৃথিবী বিভিন্ন জাতির মধ্যে কার সাথে কার কি সম্পর্ক বের করার৷ ফলাফল মারাত্মক৷ বারবার আমার শুধু রবীন্দ্রনাথের “গোরা” উপন্যাসটার কথা মনে আসে৷ প্রজেক্টের আরেকটা ফলাফল হচ্ছে বের করতে পারা কে কিভাবে কোন দেশে গিয়েছে৷ প্রজেক্ট এখনও শেষ হয় নি, হয়তো অনেক বছর লাগবে৷ তবে এখন পর্যন্ত এসব নানা গবেষনার ফলাফল হচ্ছে এরকমঃ আমরা যারা Homo Sapiens Sapiens, মানে আধুনিক মানুষ (কারা আধুনিক না হিমুকে জিজ্ঞাসা করেন), ৭০ হাজার বছর আগে আফ্রিকা থেকে ছড়িয়ে পড়তে থাকি৷ খুব সম্ভব এখনকার সোমালিয়া, ইয়েমেন হয়ে আফ্রিকা থেকে আমাদের পুর্বপুরুষ বের হয়েছিল৷ ধারনা করা হয় মানুষের এ দলটি Beach Combing (মাছ ধরে, শামুক, ঝিনুক খেয়ে) করে জীবনধারন করত৷ এদের সংখ্যা ১৫০-২০০র বেশী হবে না৷ আজকে পৃথিবীতে আফ্রিকার বাইরে যত মানুষ আছে (ইউরোপ, এশিয়া, অস্ট্রেলিয়া বা আমেরিকাতে) তারা সবাই এই কয়েকজন লোকের বংশধর৷ এরা উপকুল বরাবার আস্তে আস্তে ছড়িয়ে পড়তে থাকে৷ উপকুল ধরে কয়েক হাজার বছর পরে এরা ছড়াতে ছড়াতে ভারত হয়ে মালয়শিয়া, ইন্দোনেশিয়া পার হয়ে, অস্ট্রেলিয়াতে গিয়ে পৌছেছে৷ তখন সমুদ্রপৃষ্ঠের লেভেল বেশ নীচে ছিল, এখন যেখানে সমুদ্র ওগুলো হেটেই পার হওয়া যেত৷ তবে সবাই উপকুল ধরে ধরে ছড়ায়নি, অনেকে খাবারের সন্ধানে মেইন ল্যান্ডে আস্তে আস্তে ঢুকে পড়ে৷

ডিএনএ দেখে যেটা বোঝা যায় তাহলো কারা কখন কোথায় ছিল৷ কিভাবে? ধরা যাক আজকের দুনিয়াতে কারো এরকম ডিএনএ সিরিজ “AAACTATTCTCT”, আরেকজনের “CAACTATTCTCT”, আবার আরেকজনের “ACACTATTCTCT”, খেয়াল করলে দেখবো প্রথমজনের সিরিজের প্রথম অক্ষরটা পাল্টে দিলে দ্বিতীয়টা পাওয়া যাচ্ছে৷ আবার প্রথমজনের ২য় অক্ষরটা পাল্টে দিলে ৩য় জনেরটা পাওয়া যাচ্ছে৷ এখন যদি বলি এদের যে কোন একটা হচ্ছে আদি ডিএনএ আর বাকী দুটো ওখান থেকে একটু অদলবদল করে বানানো হয়ছে৷ তাহলে আদি ডিএনএ কোনটা হতে পারে৷ যদিও যেকোনটাই হতে পারে, তবে যদি মিনিমাম পরিবর্তন চাই তাহলে প্রথমটা অবশ্যই আদি ডিএনএ৷ বাস্তবের পরীক্ষা গুলো এর চেয়ে অনেক জটিল, তবে মোটামুটি ধারনা নেয়া যেতে পারে এখান থেকে৷ তো পৃথিবীর বিভিন্ন মানুষের ডিএনএ নিয়ে এরকম টেস্ট করলে পরিস্কার ভাবে বোঝা যায় দক্ষিন/দক্ষিন-পূর্ব আফ্রিকার লোকদের কাছে আদি ডিএনএ সিরিজগুলো (মার্কার) আছে৷ এরকম অনেকগুলো মার্কার দিয়ে বোঝা সম্ভব কে কার আগে বা কতটুকু আগে ইত্যাদি৷ এরকম একটা মার্কারের নাম হচ্ছে M130৷ এই মার্কারটি বেশ পুরোনো, অন্তত ৬০ হাজার বছর আগের৷ এতে মনে হয় উপকুল বরাবর যারা আফ্রিকা থেকে বের হয়ে এসেছিল তাদের মার্কার এটি৷ এখন খুজলে সবচেয়ে বেশী আছে অস্ট্রেলিয়ার আদিবাসীদের মধ্যে৷ এছাড়া জাপান, মালয়শিয়া, আমেরিকার উপকুলবর্তি এলাকার অল্প কিছু মানুষের মধ্যে আছে৷ এদের অরিজিনাল জনগোষ্ঠি অন্যান্য জায়গা থেকে মোটামুটি নিশ্চিহ্ন হয়ে গেছে, অথবা এদের থেকেই নতুন মার্কারের উদ্ভব ঘটেছে পরবর্তিতে (নতুন মার্কার মানে আদি মার্কারটি মিউটেশনে বদলে গিয়ে অন্য কিছু হয়েছে)৷ ভারতীয় উপমহাদেশে খুব অল্প কিছু লোকের মধ্যে আদি M130 আছে৷ ভারতীয়রা বেশীর ভাগই অন্যান্য মার্কারের লোকজন, যেমন M20, M52, M69, M201, M124 ইত্যাদি৷

আমি একজন আদি M130, কোন পরিবর্তন ছাড়া৷

নব্য বর্নবাদঃ বাংলাদেশে আমি অনেক দিন ধরে আছি

আমি আর আমার পূর্বপুরুষরা অনেক অনেক দিন ধরে বাংলাদেশ৷ দেশের ৯৫ ভাগ লোকের চেয়ে বেশী দিন ধরে৷ হয়তো ৯৯.৯৯% লোকের চেয়ে বেশী দিন ধরে৷ কে বললো? স্পেন্সার ওয়েলস, আর তার ন্যাশনাল জিওগ্রাফিকের দলবল৷ আমি কম করে হলেও ৫০ হাজার বছর এ দেশে৷ আধুনিক মানুষ হিসেবে সবার আগে আমাদের পা পড়েছে৷ দেশে যারা অফিশিয়ালী আদিবাসী তাদের চেয়েও বহু বহু গুনে আদিবাসি আমি৷ কিন্তু আমার দলের লোকজন এত কম কেনো৷ ৫% এর চেয়ে কম৷ হয়তো ১% এর চেয়ে কম৷ হয়তো আরো অনেক কম৷ তাহলে ওরা কই? কে মারলো? কে জমি দখল করলো? হিমু জবাব দাও৷ আমাদের পুরুষদেরকে কে মেরেছে৷ মেয়েদেরকে চুরি করেছে কারা? নিশ্চয়ই তোমরা৷ অবশ্যই তোমরা৷

(এটাও চলবে)

জিনোগ্রাফিক প্রজেক্ট

নানা রকম উদ্দ্যেশ্য ডিএনএ এনালাইসিস করা যেতে পারে৷ এখন যেমন এখানে পুলিশি তদন্তে ডিএনএ এভিডেন্স বহুল ব্যবহৃত হয়৷ আবার অনেকে সন্তানের প্যাটার্নিটি টেস্ট করে (আসল বাবা কে বের করার জন্য)৷ তবে আমি টেস্ট করিয়েছিলাম আমার অরিজিন জানার জন্য৷ ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক আর IBM মিলে একটা প্রজেক্ট করছে ওদের মাধ্যমে, জিনোগ্রাফিক প্রজেক্ট৷ একশ ডলারের মত লাগে৷ আরো অনেক প্রতিষ্ঠান আছে যারা এগুলো করে থাকে, কিন্ত ন্যাটজিও কে আমার কাছে নির্ভরযোগ্য মনে হয়েছে৷ এছাড়া এই প্রজেক্টের কর্ণধার স্পেন্সার ওয়েলসের বই পড়েছি, ডকুমেন্টারী দেখেছি, আমাদের এখানে উনি যখন এসেছিলেন তখন ওনার লেকচার সামনাসামনি শোনার সুযোগও হয়েছিল৷ ওখানেই উনি বলছিলেন জিনোগ্রাফিক প্রজেক্ট নিয়ে, এবং এ নিয়ে ওনারা কি কি কাজ করছেন৷ বাংলাদেশ থেকেও টেস্ট কিট অর্ডার দেয়া যেতে পারে৷ তবে পোস্ট অফিস যদি মেরে না দেয়৷

টেস্ট করার জন্য গালের ভেতর থেকে কিছু কোষ দিতে হবে৷ মোটামুটি কয়েক সপ্তাহ লাগে ফলাফলের জন্য৷ টেস্ট দুরকম হতে পারে৷ Mitochondrial DNA অথবা Y-chromosome৷ মাইটোকন্ড্রিয়া আমরা আমাদের মায়ের কাছ থেকে পাই৷ সুতরাং এই টেস্ট মায়ের মায়ের মায়ের … মায়ের ইতিহাস বের করতে সাহায্য করবে৷ অন্য দিকে ওয়াই ক্রোমোজোম শুধু বাবার কাছে থেকে আসে৷ এজন্য এই টেস্ট হচ্ছে বাবার বাবার বাবার … বাবার ইতিহাস বের করবে৷ ছেলেরা দুরকম টেস্টই করতে পারে৷ কিন্তু মেয়েদের কাছে ওয়াই ক্রোমোজোম না থাকায় শুধু মাইটোকন্ড্রিয়াল ডিএনএ টেস্ট করা সম্ভব৷

আমার টেস্টের যে ফলাফল এখানে বলেছি, ওটা আমার ওয়াই ক্রোমোজোম ডিএনএর৷ মানে আমার পিতৃপুরুষ বরাবর৷ এর মানে এই না যে আমার পিতৃপুরুষদের সবাই M130৷ যেমন আমার দাদীর বাবা হয়তো M20৷ আবার আমার দাদার নানা হয়তো M69৷ মানে আমার মধ্যে আসলে অসংখ্য লোকের জিন আছে বা থাকতে পারে৷ সমস্যা হচ্ছে এরা সবাই আমার পূর্বপুরুষ হলেও এদের উপস্থিতি প্রমান করাটা বেশ জটিল৷ এসব টেকনোলজী যতদিন না সহজলভ্য হচ্ছে ততদিন অপেক্ষা করতে হবে৷ সুতরাং আমার পূর্বপুরুষদের বলা যায় একটা অংশ (হয়তো সামান্য অংশ) M130৷ আমি যদি আমার দাদার দাদার … দাদা বরাবর যেতে থাকি এবং এভাবে ৬০ হাজার বছর পিছনে চলে যাই তাহলে যে লোকটিকে পাবো সে নিশ্চিতভাবেই একজন M130৷ এতটুকুই প্রমান পেয়েছি৷ M130 নিয়ে আরো আলোচনা পরে আসছে৷

ঈশ্বরের নিরাপত্তার অভাব

ওইদিন একজায়গায় পড়ছিলাম তালেবান আমলে কিভাবে হাজার বছরের পুরোনো বৌদ্ধ মুর্তিগুলো ধ্বংস করা হয়েছিল আফগানিস্থানে (বামিয়ান ২০০১)৷ বিশ্বব্যাপী প্রতিবাদের ঝড় উঠলেও মোল্লাদের সে নিয়ে মাথাব্যথা ছিল না৷ তবে ব্রোঞ্জের বিশালাকার মুর্তিগুলোর উপর আক্রমন এই প্রথম নয়৷ মুঘল সম্রাট আওরঙ্গজেবও তার আমলে ওগুলোর ক্ষয়ক্ষতি করেছেন৷ সম্ভবত তার আমলেই মুর্তি থেকে হাত কেটে নেয়া হয়৷ মুসলিমরা ছাড়াও মুর্তি ধ্বংস, স্থাপত্য কীর্তি ধ্বংস এগুলো ঐতিহাসিকভাবে আরো অনেকে করেছে৷

বেশীরভাগ ধর্মের ঈশ্বর অন্য ধর্মের ঈশ্বরের ধর্মের মুর্তি বা অন্য কোন সিম্বল সহ্য করতে পারেন না৷ তারা তাদের প্রেরিত গ্রন্থে একথাটা বারবার ভালো করে মনে করিয়ে দিয়েছেন (I, the Lord your God, am a jealous god)৷ পৌত্তলিক মুর্তি ভাঙ্গাটা একরকম পবিত্র দায়িত্বের মধ্যে পড়ে৷ আমার শুধু খটকা লাগে মহা পরাক্রমশালী ঈশ্বর ঠুনকো কাদামাটির/পিতলের মুর্তিকে এত ভয় পান কেন৷ এটা কি তার ট্যাবু? উত্তম তো অধমের সাথে নিশ্চিন্তে চলে, তাহলে কি ঈশ্বর কোনভাবে মধ্যম যে ওনাকে তফাত রাখতে হচ্ছে৷ নাকি insecurityর কারন ঈশ্বরের শৈশবকালিন কোন ঘটনা৷ কখনো কি উনি অন্য ঈশ্বরদের হাতে নিগৃহিত হয়েছিলেন৷ আবার হওয়ার ভয় পাচ্ছেন৷ দ্বিতীয় স্বামীর মতো প্রথম স্বামীর সব চিহ্ন মুছে ফেলতে চান৷ ঈশ্বর বোধহয় একটু ভীতু টাইপের৷ এত ক্ষমতা থাকতেও এত ভয়৷

ঈশ্বর লোকটা আসলে মজার৷ মাঝে মাঝে মনে হয় লোকটা হয়তো কমেডিয়ান ছিল প্রথম জীবনে৷

বিপ্লবী থেকে রাষ্ট্রনায়ক

রবার্ট মুগাবের দেশ জিম্বাবুয়ে নিয়ে প্রতিবেদন দেখছিলাম৷ হালে জিম্বাবুয়ের অবস্থার বেশ অবনতি হয়েছে৷ বিশেষ করে অর্থনৈতিক অবস্থার৷ কয়েক দশক আগের প্রাকৃতিক সম্পদে পরিপুর্ণ সম্ভাবনাময় আফ্রিকান দেশ জিম্বাবুয়ে এখন ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে৷ মুগাবে বৃটিশদের খেদিয়ে রোডেশিয়া থেকে জিম্বাবুয়ে স্বাধীন করেন৷ তখনকার ভুমিকার জন্য মুগাবে মুক্তিকামী জনতার নেতা হিসেবে পুরো বিশ্বে নন্দিত ছিলেন৷ সেই মুগাবে এখন তিন দশক পরেও জিম্বাবুয়ের ক্ষমতায়৷ বিরোধিরা মুগাবের কঠোর দমন নীতির পর এখন জান নিয়ে পালাতেই ব্যস্ত৷ দেশের মানুষও পালাচ্ছে যে যেভাবে পারে৷

অনেকসময় মনে হয় বঙ্গবন্ধু বেচে থাকলেও কি এরকম ফলাফল হতো৷ ৭৫ এর ১৫ই আগস্ট না হলে বঙ্গবন্ধু কি এখনও বাংলাদেশের ক্ষমতায় থাকতেন? তিন বছরেই জাতির জনক থেকে তার আচার আচরন অনেকটাই স্বৈরাচারদের মতো হয়ে উঠছিল, বিশেষ করে বাকশাল গঠন, পত্র পত্রিকা বন্ধ করে দেয়া৷ ব্যক্তি বঙ্গবন্ধুকে কাছ থেকে দেখেছেন এরকম অনেককে চিনি, তাদের ভাষায় বঙ্গবন্ধুর মতো উদার মনের রাজনৈতিক নেতা বাংলাদেশে কম এসেছে৷ কিন্তু বাকশালটাও তো সত্যি৷ আর বঙ্গবন্ধু যে প্রশাসক হিসেবে ভীষনভাবে ব্যর্থ সন্দেহ নেই৷ কে জানে আমরা একজন মুগারের হাত থেকে বেচে গেছি কি না৷

মোটরসাইকেল ডায়েরী সিনেমাটা দেখে তরুন চে’গুয়েভারাকে ভালো না লাগার কারন নেই৷ তরুন ফিদেল ক্যাস্ট্রোকেও হয়তো তাই লাগবে৷ কিন্তু চারদশক ধরে ক্ষমতা আকড়ে ধরে থাকা, লৌহমানব ফিদেলের দেশের এত দুরবস্থা কেন৷ মায়ামী, ফ্লোরিডাতে গিয়েছিলাম ঘুরতে, পথে ঘাটে কিউবা থেকে পালিয়ে আসা লোকজন৷ হায়রে চে, আর ফিদেল, এই ছিল তাদের স্বপ্ন৷

জর্জ ওয়াশিংটন, বা জেফারসন একটু ভিন্ন ধরনের৷ তারা মুগাবে, শেখমুজিব বা চে’র মতো অতটা ক্যারিসমাটিক নন৷ কিন্তু আড়াইশ বছর আগে জর্জ ওয়াশিংটন যেটা করেছিলেন আমাদের বঙ্গবন্ধু বলতেই হয় ততটা পারতেন না, পারেন নি৷ জর্জ ওয়াশিংটনের সুযোগ ছিল বৃটিশদের হারিয়ে নিজেকে রাজা ঘোষনা করার৷ জেফারসনও হয়তো করতে পারতেন৷ আধুনিক গনতন্ত্র তখনও অপ্রচলিত৷ তা না করে তারা নিশ্চিত করলেন তাদের সদ্য স্বাধীনকৃত দেশে সবার অধিকার, কথা বলার স্বাধীনতা হবে সর্বোচ্চ৷ তাদের দেশ আজকের মহা পরাক্রমশালী মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র৷
eXTReMe Tracker