Thursday, July 12, 2007

আমার ডিএনএ’র পথচলা

ডিএনএ সংক্রান্ত নানা লেখা লিখেছি গত দেড় বছরে৷ এমনিতে আমি বায়োলজির ছাত্র নই৷ কিন্তু স্কুলে থাকতে মানুষের উৎস নিয়ে খুব আগ্রহ ছিল৷ দেশে সেরকম ভালো বইপত্র পাওয়া যেত না৷ শিশু একাডেমি পাতাবাহার নামে একটা বই বের করেছিল, ওখানে একটা প্রবন্ধ ছিল, “মানুষ কি করে মানুষ হলো”৷ টু’তে থাকতে কিনেছিলাম মনে হয়৷ তখন ঠিক বিষয়টা ধরতে পারি নি, কিন্তু কৌতুহলটা তৈরী হয়েছিল৷ এরশাদ বিবর্তনবাদ থাকার জন্য “জ্ঞানের কথা” বইটি ব্যান করে দেয় আশির দশকের মাঝামাঝিতে৷ ওই বইটাতেও অনেকগুলো ভালো প্রবন্ধ ছিল এরকম বিষয়ে৷ শৈশবের কৌতুহল কালক্রমে দানাপানি পেয়ে আরো বেড়ে উঠলে, যখন যুক্তরাষ্ট্রে আসি তখনই ঠিক করে রেখেছিলাম আমার নিজের ইতিহাসটা আমার জানতে হবে৷

ইতিহাসের সাথে ডিএনএর একটা ভালো সম্পর্ক আছে৷ পুনরাবৃত্তি তবুও সংক্ষেপে আবার বলি ডিএনএ আর ইতিহাস কিভাবে জড়িত৷ আমাদের সবার শরীরে বেশীরভাগ কোষে একরকম সূত্র দেয়া আছে আমাদের শরীরটা কিভাবে বানাতে হবে, বা শরীরের দৈনন্দিন কাজ কর্ম কিভাবে করতে হবে৷ সূত্রটা আছে এভাবে “ATTCTAATTTAAACTATTCTCTGTTCTTTC…”৷ A,T,C,G গুলো আসলে লেখা আছে ছোট ছোট অনু আকারে সাজিয়ে৷ আমাদের জন্মের সময় এই সুত্রগুলো দেখে দেখে আমাদের শরীরটা তৈরী হয়েছে মায়ের পেটের ভেতরে৷ আবার এখনও আমাদের শরীরে নানা কাজকর্ম এগুলো ধরে হচ্ছে, যেমন রক্ত বানানো, পেশী, হাড়গোড় বানানো, রিপেয়ার করা ইত্যাদি৷ তবে এই সূত্রগুলো শুধু মানুষের শরীরেই না, সমস্ত প্রানী, উদ্ভিদ, ব্যাক্টেরিয়া, ভাইরাস সবার মধ্যেই আছে৷ সবাই তাদের কাজকর্ম চালাচ্ছে এগুলোর ওপর ভিত্তি করে৷ ঘটনা হচ্ছে এসব সুত্র একেকজনের একেকরকম৷ যেমন গাছের কাছে সূত্র আছে কিভাবে পাতা বানাতে হবে, আবার আমাদের কাছে সুত্র আছে কিভাবে হাত, মুখ বানাতে হবে৷ আবার অনেক সূত্র একই রকম, বা কাছাকাছি৷ আমাদের শরীরে খাবার থেকে শক্তি তৈরী করার যে সূত্র, বহু প্রানীর কাছে একই সুত্র হবহু আছে৷

যেটা করা যায় তাহলো এই মিল আর অমিলের ওপর ভিত্তি করে বের করা যেতে পারে কার সাথে কার কি সম্পর্ক৷ কারন সূত্রগুলো আমরা পাই বাবা-মার কাছ থেকে৷ বাবা ৫০%, মা ৫০%৷ তবে এর মধ্যে ব্যাপার আছে৷ বাবা আর মার কাছে এসব সূত্র যখন কপি করা হয় তখন টুকটাক ভুল ঢুকে যায় সূত্রের মধ্যে৷ যে কারনে বাবা-মার কাছ থেকে সবসূত্র একদম একই না হয়ে একটু আধটু এদিক-ওদিক হয়ে যায়৷ সাধারন নাম হচ্ছে মিউটেশন৷ সেকারনে অনেক দুরের আত্মীয় যারা তাদের সাথে ধরা যায় আমার অনেক পার্থক্য থাকবে সূত্র গুলোয়, আবার কাছের যারা তাদের সাথে তুলনামুলক কম পার্থক্য থাকবে৷ আবার অন্যদেশের মানুষের সাথে বেশ পার্থক্য হওয়ার কথা৷ বলতে গেলে ডিএনএ থেকে বেশ ভালোভাবে বোঝা যায় কে কার কতটুকু কাছাকাছি৷ অন্য প্রানীর সাথে যেমন আমাদের অনেক পার্থক্য৷ যত দুরের প্রানী তত বেশী পার্থক্য (অন্য প্রানীর মধ্যে শিম্পাঞ্জি সবচেয়ে কাছাকাছি)৷

গত কয়েকবছর ধরে বিজ্ঞানীরা একটা প্রজেক্ট হাতে নিয়েছেন পৃথিবী বিভিন্ন জাতির মধ্যে কার সাথে কার কি সম্পর্ক বের করার৷ ফলাফল মারাত্মক৷ বারবার আমার শুধু রবীন্দ্রনাথের “গোরা” উপন্যাসটার কথা মনে আসে৷ প্রজেক্টের আরেকটা ফলাফল হচ্ছে বের করতে পারা কে কিভাবে কোন দেশে গিয়েছে৷ প্রজেক্ট এখনও শেষ হয় নি, হয়তো অনেক বছর লাগবে৷ তবে এখন পর্যন্ত এসব নানা গবেষনার ফলাফল হচ্ছে এরকমঃ আমরা যারা Homo Sapiens Sapiens, মানে আধুনিক মানুষ (কারা আধুনিক না হিমুকে জিজ্ঞাসা করেন), ৭০ হাজার বছর আগে আফ্রিকা থেকে ছড়িয়ে পড়তে থাকি৷ খুব সম্ভব এখনকার সোমালিয়া, ইয়েমেন হয়ে আফ্রিকা থেকে আমাদের পুর্বপুরুষ বের হয়েছিল৷ ধারনা করা হয় মানুষের এ দলটি Beach Combing (মাছ ধরে, শামুক, ঝিনুক খেয়ে) করে জীবনধারন করত৷ এদের সংখ্যা ১৫০-২০০র বেশী হবে না৷ আজকে পৃথিবীতে আফ্রিকার বাইরে যত মানুষ আছে (ইউরোপ, এশিয়া, অস্ট্রেলিয়া বা আমেরিকাতে) তারা সবাই এই কয়েকজন লোকের বংশধর৷ এরা উপকুল বরাবার আস্তে আস্তে ছড়িয়ে পড়তে থাকে৷ উপকুল ধরে কয়েক হাজার বছর পরে এরা ছড়াতে ছড়াতে ভারত হয়ে মালয়শিয়া, ইন্দোনেশিয়া পার হয়ে, অস্ট্রেলিয়াতে গিয়ে পৌছেছে৷ তখন সমুদ্রপৃষ্ঠের লেভেল বেশ নীচে ছিল, এখন যেখানে সমুদ্র ওগুলো হেটেই পার হওয়া যেত৷ তবে সবাই উপকুল ধরে ধরে ছড়ায়নি, অনেকে খাবারের সন্ধানে মেইন ল্যান্ডে আস্তে আস্তে ঢুকে পড়ে৷

ডিএনএ দেখে যেটা বোঝা যায় তাহলো কারা কখন কোথায় ছিল৷ কিভাবে? ধরা যাক আজকের দুনিয়াতে কারো এরকম ডিএনএ সিরিজ “AAACTATTCTCT”, আরেকজনের “CAACTATTCTCT”, আবার আরেকজনের “ACACTATTCTCT”, খেয়াল করলে দেখবো প্রথমজনের সিরিজের প্রথম অক্ষরটা পাল্টে দিলে দ্বিতীয়টা পাওয়া যাচ্ছে৷ আবার প্রথমজনের ২য় অক্ষরটা পাল্টে দিলে ৩য় জনেরটা পাওয়া যাচ্ছে৷ এখন যদি বলি এদের যে কোন একটা হচ্ছে আদি ডিএনএ আর বাকী দুটো ওখান থেকে একটু অদলবদল করে বানানো হয়ছে৷ তাহলে আদি ডিএনএ কোনটা হতে পারে৷ যদিও যেকোনটাই হতে পারে, তবে যদি মিনিমাম পরিবর্তন চাই তাহলে প্রথমটা অবশ্যই আদি ডিএনএ৷ বাস্তবের পরীক্ষা গুলো এর চেয়ে অনেক জটিল, তবে মোটামুটি ধারনা নেয়া যেতে পারে এখান থেকে৷ তো পৃথিবীর বিভিন্ন মানুষের ডিএনএ নিয়ে এরকম টেস্ট করলে পরিস্কার ভাবে বোঝা যায় দক্ষিন/দক্ষিন-পূর্ব আফ্রিকার লোকদের কাছে আদি ডিএনএ সিরিজগুলো (মার্কার) আছে৷ এরকম অনেকগুলো মার্কার দিয়ে বোঝা সম্ভব কে কার আগে বা কতটুকু আগে ইত্যাদি৷ এরকম একটা মার্কারের নাম হচ্ছে M130৷ এই মার্কারটি বেশ পুরোনো, অন্তত ৬০ হাজার বছর আগের৷ এতে মনে হয় উপকুল বরাবর যারা আফ্রিকা থেকে বের হয়ে এসেছিল তাদের মার্কার এটি৷ এখন খুজলে সবচেয়ে বেশী আছে অস্ট্রেলিয়ার আদিবাসীদের মধ্যে৷ এছাড়া জাপান, মালয়শিয়া, আমেরিকার উপকুলবর্তি এলাকার অল্প কিছু মানুষের মধ্যে আছে৷ এদের অরিজিনাল জনগোষ্ঠি অন্যান্য জায়গা থেকে মোটামুটি নিশ্চিহ্ন হয়ে গেছে, অথবা এদের থেকেই নতুন মার্কারের উদ্ভব ঘটেছে পরবর্তিতে (নতুন মার্কার মানে আদি মার্কারটি মিউটেশনে বদলে গিয়ে অন্য কিছু হয়েছে)৷ ভারতীয় উপমহাদেশে খুব অল্প কিছু লোকের মধ্যে আদি M130 আছে৷ ভারতীয়রা বেশীর ভাগই অন্যান্য মার্কারের লোকজন, যেমন M20, M52, M69, M201, M124 ইত্যাদি৷

আমি একজন আদি M130, কোন পরিবর্তন ছাড়া৷

2 Comments:

Anonymous saifulhasan said...

আমাদের বেঁচে থাকার জন্য খাদ্যের ভূমিকা অনেক। আমরা অনেকেই নানা রকম খাবার ভালোবাসি। আমরা সবাই কম বেশি মাছ ভালোবাসি। কিন্তু বর্তমানে তাজা বা টাটকা মাছ খোঁজে পাওয়া যাই না। আপনি কি সামুদ্রিক মাছ, গলদা চিংড়ি, চিংড়ি, তাজা জল-মাছ, কাঁকড়া, ইত্যাদি দরণের মাছ খোঁজ করছে? তাহলে ভিজিট করুন freshfishbd.

Thursday, May 28, 2015 9:19:00 PM  
Blogger Unknown said...

See hot Mobile video --

Bangla Mobile Video

Indian Mobile Video

Hot Mobile Video

Pakistani Mobile Video

XXXXX Mobile Video

Deshi Mobile Video

Real Mobile Video

Adult Mobile Video

Saturday, March 05, 2016 1:57:00 AM  

Post a Comment

<< Home

eXTReMe Tracker