আল্লাতু এবং দেবতাদের মৃত্যু
ব্যবিলনীয়দের মৃতের দেবী আল্লাতু, অনেকদিন পর নামটা খেয়াল হল দশদিনের ছুটিতে পড়ার জন্য বই ঘাটতে গিয়ে৷ বাংলাদেশ শিশু একাডেমী আশির দশকে শিশুদের জন্য একটা ভালো, বেশ মোটাসোটা বই বের করেছিল, নাম রেখেছিল “জ্ঞানের কথা”, এরশাদ সরকার পরে অবশ্য বইটা ব্যান্ড করে দেয়, সম্ভবত বিবর্তনবাদ নিয়ে তথ্য ছিল বলে৷ এর আগে পরে বাংলা ভাষায় ওরকম বই চোখে পড়ে নি৷ যাহোক ব্যান্ড করার আগেই আমার কেনা ছিল ওই বইটা, ওখানে পৃথিবীর সবচেয়ে পুরোনো মহাকাব্য গিলগামেশ সংক্ষেপে গদ্য আকারে ছিল৷ উরুকের (এখনকার দক্ষিন পূর্ব ইরাকে) রাজা গিলগামেশকে নিয়ে চমত্কার কাহিনী৷ আরেকটা সমসাময়িক কাব্য যেটা গিলগামেশের মত পপুলার নয়, সেটা হচ্ছে “ইসথারের অবতরণ”৷ ইসথারের কাহিনীটা তার সাথে মৃতের দেবী আল্লাতুর শত্রুতা নিয়ে৷ ইসথার আল্লাতুর সাথে পাতালে দেখা করতে গেলে আল্লাতু তাকে নানাভাবে অপমানের চেষ্টা করে শেষমেশ ব্যর্থ হয় ইত্যাদি ইত্যাদি৷
ব্যবিলনীয়দের (অথবা ইরাকীদের পুর্বপুরুষদের) ধর্ম বিশ্বাসের সাথে এসব কাহিনী জড়িয়ে ছিল৷ কোন সন্দেহ নেই আজকের যুগের ধর্মীয় কাহিনী আমরা যেভাবে বিশ্বাস করি পাচ হাজার বছর আগে উরুক, বা সুমেরের লোকজন সেভাবেই গিলগামেশ, ইসথার বা আল্লাতুর কাহিনী বিশ্বাস করত৷ ধর্মীয় এসব কাহিনী মজাদার এবং যথেষ্ট কৌতুহলোদ্দিপক সন্দেহ নেই৷ অনেক ক্ষেত্রে কাহিনীর পেছনে বেশ কিছু বক্তব্যও লুকিয়ে আছে৷ কিন্তু বক্তব্যের বাইরেও সুমের বা উরুকের লোকেরা নিশ্চয়ই বিশ্বাস করত পাতালে আল্লাতুর সত্যই অস্তিত্ব আছে৷ সে মৃতদেরকে পাহারা দিচ্ছে৷ গ্রীক বা রোমানদেরও এরকম অসংখ্য কাহিনী, দেব দেবী ছিল৷ দেবরাজ জিউস ছিলেন (এখনও আছেন কি?) বজ্রের দেবতা, ভীনাস ভালোবাসার, অথবা পসাইডন সমুদ্রের ইত্যাদি৷
তো এসব দেবদেবীরা এখন কোথায়৷ জিউস কি এখনও ঝড়বৃষ্টি নিয়ন্ত্রন করছেন, নাকি সময়ের পরিবর্তনে এসব দ্বায়িত্ব এখন মাইকেল (মিকাইল?), গ্যাব্রিয়েলদের হাতে৷ ক্ষমতার এই হাত বদল কবে হল, এই কাহিনী কোথায়, অন্তত কোন ধর্মগ্রন্থে জিউসের কাছ থেকে মাইকেল দ্বায়িত্ব নিচ্ছে এমন বৃত্তান্ত চোখে পড়ে নি৷ আর পাচ হাজার বছর পর আল্লাতু এখন কোথায়, পাতালে কি সে এখনও মৃত্যুর দেবী, না কি আজরাইল সেই দ্বায়িত্ব নিয়ে নিয়েছে৷
আমার কেন যেন মনে হয় এসব অজস্র দেব-দেবী-দেবদুতদের অনেকেরই আসলে মৃত্যু হয়েছে৷ মৃতের দেবী আল্লাতু বহু আগে নিজেই মারা গেছে৷ আর ক্ষমতার হস্তান্তর হয়েছে যখন শেষ সুমেরিয় আল্লাতুর পূজা বাদ দিয়ে মাইকেল-গ্যাব্রিয়েলের কাহিনীতে নাম লিখিয়েছে৷ তাহলে দেখা যাচ্ছে দেবতারাও আসলে অমর নন, দেবরাজ জিউসকেও ইতিহাস রেহাই দেয় নি, আজকে আর পূজা মন্ডপে, টেম্পলে জায়গা হয় না জিউসের, গল্পের বইয়ের কল্পকাহিনীতেই জিউস সীমাবদ্ধ৷
কিন্তু দেবতারা কেন মরল? আমার একটা লেখা ছিল মিম নিয়ে৷ মিম, ঠিক জিনের মত, তার একরকম জীবন আছে৷ হোস্টকে এক্সপ্লয়েট করে সে বাচে৷ কোন হোস্ট না পেলে মরে যায় (যেমন “গুজব”, একসময় হারিয়ে যায়)৷ পরাক্রমশালী জিউস বা আল্লাতুর দূর্দশার কারন আসলে মিম৷ আল্লাতু, ইসথার আর গিলগামেশের ঘটনা বেচে ছিল মানুষের মনে মিম হয়ে৷ হাজার বছর তাদের মেমেটিক বিস্তার হয়েছে, সংখ্যায় বেড়েছে, কমেছে৷ এক সময় আরও শক্তিশালী মিম ছড়ালে তারা বিলুপ্ত হয়ে গিয়েছে, দেব-দেবী সমেত৷ ক্রিশ্চিয়ানিটি (মতান্তরে এর মিম) রোমান সাম্রাজ্যে ছড়িয়ে পড়লে জিউসের মিমের মরে যাওয়া ছাড়া উপায় ছিল না৷
আসলে এইসব দেব-দেবী-দেবদুতরা আগেও কখনই ছিলেন না, এখনও নেই, এরা কেবলই বেচে ছিলেন/আছেন মানুষের মনে কাহিনী হয়ে৷ আজকের যুগেও তাই, কাহিনী উপকাহিনী শুনেই আমরা উরুকবাসীদের মতো নিঃশর্ত আত্মসমর্পন করে বসি, এর পেছনে সত্যতার যৌক্তিক বিশ্লেষনের প্রয়োজন বোধ করি না৷ তবে শুধু এটুকু মনে রাখতে পারি, পাচ হাজার বছর পরে আজকে যেমন আল্লাতুকে আর আমরা ভয় পাই না মৃত্যুর দেবী হিসেবে, ভবিষ্যতে একদিন আসবে যখন আজকের মহাপরাক্রমশালীকেও এমন ফুত্কারে উড়িয়ে দেয়া যাবে৷
ছবিঃ গিলগামেশ৷
See same post and comments - http://www.somewhereinblog.net/utsablog/post/28691667
ব্যবিলনীয়দের (অথবা ইরাকীদের পুর্বপুরুষদের) ধর্ম বিশ্বাসের সাথে এসব কাহিনী জড়িয়ে ছিল৷ কোন সন্দেহ নেই আজকের যুগের ধর্মীয় কাহিনী আমরা যেভাবে বিশ্বাস করি পাচ হাজার বছর আগে উরুক, বা সুমেরের লোকজন সেভাবেই গিলগামেশ, ইসথার বা আল্লাতুর কাহিনী বিশ্বাস করত৷ ধর্মীয় এসব কাহিনী মজাদার এবং যথেষ্ট কৌতুহলোদ্দিপক সন্দেহ নেই৷ অনেক ক্ষেত্রে কাহিনীর পেছনে বেশ কিছু বক্তব্যও লুকিয়ে আছে৷ কিন্তু বক্তব্যের বাইরেও সুমের বা উরুকের লোকেরা নিশ্চয়ই বিশ্বাস করত পাতালে আল্লাতুর সত্যই অস্তিত্ব আছে৷ সে মৃতদেরকে পাহারা দিচ্ছে৷ গ্রীক বা রোমানদেরও এরকম অসংখ্য কাহিনী, দেব দেবী ছিল৷ দেবরাজ জিউস ছিলেন (এখনও আছেন কি?) বজ্রের দেবতা, ভীনাস ভালোবাসার, অথবা পসাইডন সমুদ্রের ইত্যাদি৷
তো এসব দেবদেবীরা এখন কোথায়৷ জিউস কি এখনও ঝড়বৃষ্টি নিয়ন্ত্রন করছেন, নাকি সময়ের পরিবর্তনে এসব দ্বায়িত্ব এখন মাইকেল (মিকাইল?), গ্যাব্রিয়েলদের হাতে৷ ক্ষমতার এই হাত বদল কবে হল, এই কাহিনী কোথায়, অন্তত কোন ধর্মগ্রন্থে জিউসের কাছ থেকে মাইকেল দ্বায়িত্ব নিচ্ছে এমন বৃত্তান্ত চোখে পড়ে নি৷ আর পাচ হাজার বছর পর আল্লাতু এখন কোথায়, পাতালে কি সে এখনও মৃত্যুর দেবী, না কি আজরাইল সেই দ্বায়িত্ব নিয়ে নিয়েছে৷
আমার কেন যেন মনে হয় এসব অজস্র দেব-দেবী-দেবদুতদের অনেকেরই আসলে মৃত্যু হয়েছে৷ মৃতের দেবী আল্লাতু বহু আগে নিজেই মারা গেছে৷ আর ক্ষমতার হস্তান্তর হয়েছে যখন শেষ সুমেরিয় আল্লাতুর পূজা বাদ দিয়ে মাইকেল-গ্যাব্রিয়েলের কাহিনীতে নাম লিখিয়েছে৷ তাহলে দেখা যাচ্ছে দেবতারাও আসলে অমর নন, দেবরাজ জিউসকেও ইতিহাস রেহাই দেয় নি, আজকে আর পূজা মন্ডপে, টেম্পলে জায়গা হয় না জিউসের, গল্পের বইয়ের কল্পকাহিনীতেই জিউস সীমাবদ্ধ৷
কিন্তু দেবতারা কেন মরল? আমার একটা লেখা ছিল মিম নিয়ে৷ মিম, ঠিক জিনের মত, তার একরকম জীবন আছে৷ হোস্টকে এক্সপ্লয়েট করে সে বাচে৷ কোন হোস্ট না পেলে মরে যায় (যেমন “গুজব”, একসময় হারিয়ে যায়)৷ পরাক্রমশালী জিউস বা আল্লাতুর দূর্দশার কারন আসলে মিম৷ আল্লাতু, ইসথার আর গিলগামেশের ঘটনা বেচে ছিল মানুষের মনে মিম হয়ে৷ হাজার বছর তাদের মেমেটিক বিস্তার হয়েছে, সংখ্যায় বেড়েছে, কমেছে৷ এক সময় আরও শক্তিশালী মিম ছড়ালে তারা বিলুপ্ত হয়ে গিয়েছে, দেব-দেবী সমেত৷ ক্রিশ্চিয়ানিটি (মতান্তরে এর মিম) রোমান সাম্রাজ্যে ছড়িয়ে পড়লে জিউসের মিমের মরে যাওয়া ছাড়া উপায় ছিল না৷
আসলে এইসব দেব-দেবী-দেবদুতরা আগেও কখনই ছিলেন না, এখনও নেই, এরা কেবলই বেচে ছিলেন/আছেন মানুষের মনে কাহিনী হয়ে৷ আজকের যুগেও তাই, কাহিনী উপকাহিনী শুনেই আমরা উরুকবাসীদের মতো নিঃশর্ত আত্মসমর্পন করে বসি, এর পেছনে সত্যতার যৌক্তিক বিশ্লেষনের প্রয়োজন বোধ করি না৷ তবে শুধু এটুকু মনে রাখতে পারি, পাচ হাজার বছর পরে আজকে যেমন আল্লাতুকে আর আমরা ভয় পাই না মৃত্যুর দেবী হিসেবে, ভবিষ্যতে একদিন আসবে যখন আজকের মহাপরাক্রমশালীকেও এমন ফুত্কারে উড়িয়ে দেয়া যাবে৷
ছবিঃ গিলগামেশ৷
See same post and comments - http://www.somewhereinblog.net/utsablog/post/28691667
1 Comments:
গিলগামেশ শিশু একাডেমী থেকে পাবলিশড ঊত্তরাধিকারে ও এসেছিলো। আমি পড়েছিলাম ওখান থেকে, আমার ভীষণ প্রিয় একটা মিথ কাহিনী। এই বই গুলো অনলাইনে পেলে খুব ভালো হতো।
Post a Comment
<< Home