Thursday, November 16, 2006

অপস্তম্ব আর পাণিনি


বানান দুটো ঠিক আছে আশা করি। ৫০% অফ পেয়ে কিছু বই কিনেছিলাম দুমাস আগে। আগের কেনা গুলোই এখনো পড়ে শেষ করতে পারি নাই, এর মধ্যে আরো নতুন বই। সকালে প্রাকৃতিক কর্ম করতে গিয়ে পড়ি, এই নিয়ে দুর্মুখেরা অনেক বাজে কথা বলেছে, বাস্তব সত্য হচ্ছে আগের মতো সোফায় শুয়ে টিভি দেখে বই পড়ার মতো সময় আর নেই, সারাদিন কাজ শেষে রাতে আসি, এসে হয়তো রান্নাবান্না করতে হয়, অনেক সময় অন্যান্য কাজ থাকে শেষমেশ সকালের ঐ এক ঘন্টাই (ঞ!) শুধু নিয়মিত বই পড়া হয়। নতুন গুলোর একটা কিনেছিলাম স্রেফ পৃষ্ঠা/মুল্য অনুপাতের আধিক্য দেখে, যদিও মাথাভারী নাম God Created Integers। ইউক্লিড নিয়ে লেখাটার এক পর্যায়ে পেলাম অপস্তম্বের নাম, আগে শুনেছি, কিন্তু বিশদ জানা ছিল না।

অনেক সময় এরকম ঘরের খবর পরের কাছ থেকে শুনতে হয়। পিথাগোরাসের উপপাদ্য তো সেই স্কুলে পড়ে আসছি। এখন দেখা যাচ্ছে গ্রীকদের আগেই ভারতে ঐ উপপাদ্য জানা ছিল। এই উপপাদ্যের নাম হতে পারে অপস্তম্বের উপপাদ্য(?)। আরেকটা ব্যাপার আগে জানতাম সেটা হলো আমরা এখন যে ডেসিমাল নাম্বার সিস্টেম ব্যবহার করি তা আসলে ভারতীয় উপমহাদেশে আবিস্কৃত। হরপ্পার সভ্যতার সময় থেকেই ভারতে এ ধরনের সংখ্যা পদ্ধতি ব্যবহার হয়ে আসছে। দশমিক নিয়মের সুবিধা বুঝতে হলে, অন্য নিয়মগুলোর অসুবিধাটা দেখলেই চলবে। যেমন রোমান নিয়মে যদি আমরা সংখ্যা লিখতাম তাহলে ভেবে দেখুন যোগ, বিয়োগ, গুন, ভাগ করা কতটা কঠিন হতো। এক অর্থে আধুনিক বিজ্ঞান পুরোপুরি ভারতীয় সংখ্যা পদ্ধতির ওপর দাড়িয়ে আছে। হরপ্পা,মহেঞ্জোদারোর সভ্যতা বৈদিক যুগেরও আগের, মোটামুটি ৩৩০০খৃষ্ট পুর্বাব্দ থেকে ১৩০০ খৃষ্ট পুর্বাব্দ পর্যন্ত। মানে এখন থেকে প্রায় সাড়ে পাচ হাজার বছর আগের। এই সভ্যতার নিদর্শন, এবং এরা কারা, কোথায় গেল এই নিয়ে পরে কোন লেখায় লিখব, আজকে গনিতে ফেরত যাই।

অপস্তম্ব অবশ্য অত পুরোনো নন, আনুমানিক খৃষ্ট পুর্ব পঞ্চম শতাব্দির সময়কালের (এখন থেকে আড়াই হাজার বছর আগের)। তার লেখা “কল্পসুত্র “ বই-এর ৩০তম অধ্যায় “সুল্বসুত্রে“ (বানান ভুল হতে পারে) গনিত এবং জ্যামিতির অনেকগুলো উল্লেখযোগ্য সুত্র আছে। যেমন একটা হচ্ছে irrational সংখ্যার ব্যবহার, এটাই মানব সভ্যতায় প্রথম এরকম সংখ্যার উল্লেখ। Irrational সংখ্যা হচ্ছে যাদেরকে দুটো সংখ্যার অনুপাত হিসেবে প্রকাশ করা যায় না (একারনে এসব সংখ্যার ডিজিট লিখে শেষ করা যায় না, পৌন পুনিক নয়), যেমন ২ এর স্কয়ার রুট, অথবা পাই (বৃত্তের ব্যস এবং পরিধির অনুপাত)। দেখা যাচ্ছে অপস্তম্বের সময়ে তারা ২ এর স্কয়ার রুট (১.৪১২১৫৬ ...) বের করার একটা পদ্ধতিও (approximation) বের করেছিলেন, এটাও ঐ সময়ে অন্য কোন সভ্যতায় কারো জানা ছিল না:
sqrt(২) = ১ + ১/৩ + ১/(৩*৪) - ১/(৩*৪*৩৪)

আর সমকোনী ত্রিভুজের সুত্র a^2 = b^2 + c^2 যেটা আমরা পিথাগোরাসের বলে জানি দেখা যাচ্ছে এগুলো ভারতে পিথাগোরাসের আগে থেকেই জানা ছিল।

আরো ঘাটতে ঘাটতে পেলাম পাণিনির নাম। পাণিনি ৫২০-৪৬০ খৃষ্টপুর্বাব্দের কোন সময়ে গান্ধারা (এখন যেখানে পাকিস্তানের পেশোয়ার) রাজ্যে বাস করতেন। পাণিনি সংস্কৃত ব্যকরনের জন্য প্রসিদ্ধ, তবে আমার নিজের ব্যকরন নিয়ে কোন আগ্রহ নেই। একবার একটা গ্রাড কোর্স নিয়েছিলাম কম্প্লেক্সিটি থিওরীর ওপরে, থিওরেটিকাল কম্পিউটার সায়েন্সের অংশ হিসেবে, ওখানে একবার মনে হয় প্রফেসর পাণিনি নামটা বলেছিলেন। তখন ভালো মতো খেয়াল করিনি, অপস্তম্ব নিয়ে ঘাটতে গিয়ে পেলাম formal language theory এর অনেক সুত্রই পাণিনির গ্রন্থে আড়াই হাজার বছর আগে ছিল যেমন
Panini-Backus form। সেই আমলে পাণিনি মেটারুল, ট্রান্সফরমেশন, রিকার্শন (recursion) ব্যবহার করেছেন। দু:খজনক যে তার এ গবেষনা আর আবিস্কার আড়াই হাজার বছর পরে আবার আবিস্কার করতে হচ্ছে।

আসলে উপমহাদেশে আমাদের সমস্যা হচ্ছে পরবর্তিতে এ ধারা আমরা আর অব্যহত রাখতে পারি নি। বিভিন্নভাবে stagnation চলে এসেছিল, তার ওপর শেষের এক হাজার বছর প্রথমে মুসলিম, পরে ইউরোপীয়ান কলোনাইজেশনে সামনে আগানো আর হয়ে ওঠে নি। ঐ সময়টাতে বুদ্ধির চেয়ে তরবারীর জোরের প্রয়োজনীয়তা ছিল বেশী।

ছবি: ভারতের ডাকটিকেট

Wednesday, November 15, 2006

উত্স-ব

দলবদ্ধভাবে আমরা যেসব কাজে অংশ নেই যেমন প্রার্থনা, যুদ্ধ , শিকার এসব ছাপিয়ে উত্সব বোধ হয় সবচেয়ে জনপি্রয়। লোকে যখন শৈশবের স্মূতিচারন করে তখন সুখ স্মূতিগুলোর মধ্যে প্রায়ই মেলা, ঈদ , পুজা, পার্বন চলে আসে। আমার মনে পড়ে যখন আমি নিজেও একজন শিশু ছিলাম, দিনক্ষন ঠিক করে যে সব উত্সব হতো, সেসব ক্ষেত্রে উত্সবের দিন ছাড়াও, অমুক দিনে উত্সব হবে এই আগ্রহের build up টাও খুব উপভোগ্য থাকতো। আমি অনেক সময় দাবি করতাম ঈদের চেয়ে ঈদের আগের দিন সন্ধ্যার মজা বেশী। চাঁদ দেখা গেলে কাল ঈদ এই নিয়ে তখন আমরা যত উল্লাস করতাম শেষমেশ ঈদের দিন দেখা যেত আশানুরুপ মজার কিছু হতো না। শৈশব শেষ করে একসময় যখন বাল+ষ্ঞক হলাম, তখন ঈদের স্বাভাবিক আনন্দের সাথে যোগ হলো টিনএজ ডেটিং গেম। অন্যান্য সময়ের চেয়ে ঈদে ডেটিং করা তুলনামুলক ভাবে সহজ ছিল, বাবা মা বড় ভাইয়ের চোখ রাঙানীও একটু শিথিল থাকতো ঐ দিনের জন্য। ছেলেদের দলে এক দুইজন সৌভাগ্যবানের সত্যিকার বান্ধবী ছিল, বাকীদেরকে সখা হয়েই কাটাতে হতো, তাতে কি, গন্ধ শুকলেও অর্ধেক খাওয়া হয়। যৌনতা জড়ালে স্বভাবতই থ্রীলের মাত্রা বেড়ে যায়, বোধ করি এজন্যই সেরা ঈদের দিন গুলো জীবনের ঐ অংশেই সীমাবদ্ধ।

ইন্টেনসিটি চিন্তা করলে ঈদ/পুজার সমমানের বা একটুবেশী গাঢ় উত্সব বোধ হয় “বিয়ে“। যখন ছোট ছিলাম পর পর কয়েক বছর অনেকগুলো খালা, ফুপু এবং চাচার বিয়ে হলো। বিয়ের অনুষ্ঠানের সুবিধা হচ্ছে উত্সব বেশ কয়েকদিন ধরে চলে, ঠিক একদিনেই ফুরিয়ে যায় না। আর বিয়ের মধ্যে যৌনতার অভাব বোধ হয় কমই আছে। গ্রামের দিকের বিয়েগুলোতে আড়ালে আবডালে এমন সব সুযোগ পাওয়া যায়, যেগুলো স্বাভাবিক অবস্থায় বড়দের চোখ এড়ানো মুস্কিল । বিয়ের হুল্লোড়ের মাঝেও চেনা অচেনা কিশোর কিশোরীদের মাঝে একরকম অদূশ্য টানাপোড়ন চলতে থাকে ।ঢাকায় আমার ধারনা ঈদ, পুজা এসব ধর্মীয় উত্সব ছাড়া, আর সত্যিকার উল্লেখযোগ্য উত্সব বলতে নববর্ষ এবং একুশের বইমেলা । নববর্ষ আমাদের সাংস্কূতিক উত্সব। কয়েকটা রাষ্ট্রীয় উত্সবও আছে, স্বাধীনতা দিবস, বিজয় দিবস। সরকারী খরচে প্যারেড, আর কিছু টুকটাক অনুষ্ঠান ছাড়া এসব উত্সবের প্রভাব ভীষন সীমিতই বলতে হয়।

উত্সব অবশ্য কোনভাবেই বাঙালীর একার সম্পত্তি নয়। সবদেশে, সব জাতির মধ্যেই নানা রকম উত্সব আছে। আধুনিক ধম ê ,রাষ্ট্র, সংস্কূতি গুলোর আবির্ভাবেরও হাজার হাজার বছর আগে থেকে মানব সমাজে উত্সব আছে। যেসব আদিমতম সমাজ এখনও টিকে আছে তাদের মধ্যেও বিভিন্ন ধরনের উত্সব প্রচলিত। প্রশ্ন হচ্ছে উত্সবের এত ছড়াছড়ি কেন? ধর্ম, দেশ এদের উত্সব নিয়ে এত মাথা ব্যাথা কেন? একদম সব ধর্মেই আর কিছু না থাকুক উত্সবের ব্যাবস্থা আছে। এসব উত্তরের জন্য পুরো ব্যপারটা উলটো দিক থেকে দেখা যাক।

যদি কেউ আমাকে বলে এমন একটা সংস্কূতি ডিজাইন করতে যেটা বহু বছর টিকে থাকবে, তাহলে আমি কি কি উপাদান এর মধ্যে যোগ করবো? মিম নিয়ে আমার একটা লেখা ছিল, হাতে সময় থাকলে পড়ে নিতে পারেন। ধর্ম , সংস্কূতি প্রত্যেকেই এক ধরনের মিম বলা যেতে পারে। জিন বা ভাইরাসের মতো এদের সাফল্য নির্ভর করে হোস্টকে কতখানি সফলভাবে exploit করতে পারছে তার ওপর। হোস্টের দুর্বল দিকগুলোর ওপর ভিত্তি করে এরা বিস্তার লাভ করে। যেহেতু উত্সবের দিকে মানুষ হিসেবে আমাদের আকর্ষন আছে, সুতরাং একটা সফল সংস্কূতি মিম নিশ্চিতভাবে মানুষের এ দুর্বলতাকে (আরো অন্যান্য দুর্বলতা সহ) কাজে লাগাতে চেষ্টা করে। সংস্কূতি যেটা করে উত্সবকে রিচুয়ালের রুপ দেয়, পুজা, ক্রিসমাস, ঈদ প্রত্যেক উত্সবের সাথেই খেয়াল করলে দেখবেন বেশ কিছু আনুষ্ঠানিকতাও জড়িয়ে দেয়া আছে। যেসব সংস্কূতি উত্সবকে কাজে লাগাতে পারে না, তাদের অনেকের ভিত্তিই ক্রমশ দুর্বল হয়ে যায়, ঠিক যেমন আমাদের ২৬শে মার্চ আর ১৬ই ডিসেম্বরের অবস্থা। ৩০ বছরেই পাত্তা না পাওয়ার মত অবস্থা। কয়জন শিশু কিশোর আছে যারা ১৬ই ডিসেম্বরের জন্য ঈদের মত আগ্রহ নিয়ে অপেক্ষা করে?

আমার ধারনা এটা আমাদের একটা পরিকল্পনার ভুল। আরও অন্যান্য মিম যেমন থার্টি ফার্স্ট নাইট বা ভ্যালেন্টাইন্স ডে কিন্তু গত এক দশকেই ভালো রকম বাসা বেধেছে বাংলাদেশে, অথচ বিজয় দিবস পারল না। থার্টি ফার্স্ট বা ভালোবাসা দিবস দুটোই যৌনতাকে চমত্কার ভাবে ব্যবহার (exploit?) করেছে। ১৬ই ডিসেম্বর বা ২৬শে মার্চ নিয়ে এরকম মেমেটিক কোন প্ল্যান করা যায়? যেমন হতে পারে ঐ দিন গুলোতে আমরা Halloween এর আদলে একটা থিম বেজড কিছু করব, যেখানে কিশোর কিশোরীরা অংশগ্রহন করবে? অথবা পাবলিক কনসার্ট এবং শেষে আতশবাজি পোড়ানো? উত্সবগুলোর মধ্যে মানবীয় আকর্ষক উপাদান থাকতে হবে। একদমই সরকারী রাস্তায় ফেলে রাখলে জাতীয় দিবসগুলো অচিরেই আরো মুল্যহীন হয়ে পড়বে„

বিশ্বায়ন অনিবার্য?

I made this post some time back in somewhereinblog got some valuable comments from Himu and Suman, copied them here too.

বিশ্বায়ন নিয়ে আমাদের মধ্যে অনেক দ্বিমত আছে, বিশেষত কেন বিশ্বায়ন হচ্ছে, কাদের মদদে হচ্ছে, এর ফলাফলই বা কি, বাংলাদেশের মতো দেশের জন্য কতটুকু ভালো বা খারাপ এবং বিশ্বায়ন কি অনিবার্য ইত্যাদি। হিমু একটা লেখা দিয়েছে কয়েকদিন আগে, পড়ে দেখতে পারেন। বিভিন্ন কারনে বিশ্বায়নকে আমরা সাম্রাজ্যবাদ, ঔপনেবিশকবাদের কাতারে ফেলি যদিও বিশ্বায়নের সাথে এদের মৌলিক কোন মিল নেই।
ধরা যাক মেঘনা পাড়ে কার্ত্তিকপুর আর নোয়ার্দ্দা দুই গ্রাম আর তাদের মাঝে মেঘনা নদী। মেঘনা ওখানে বেশ মাইল খানেক চওড়া, একারনে দুই গ্রামের মধ্যে যোগাযোগ কমই হয়, এবং প্রশাসনিক ভাবেও তারা দুই জেলায় পড়েছে। কার্ত্তিকপুরের তাতের কাপড় বিখ্যাত তবে নোয়ার্দ্দার বাজারে ঐ কাপড় খুব একটা পাওয়া যায় না। ৮০র দশকে সেচের জন্য শ্যালো মেশিন বহুল প্রচলিত হলে অনেকে ঐ মেশিন যোগ করে একরকম ইঞ্জিনের নৌকা তৈরী করে (স্থানীয় ভাবে ট্রলার নামে পরিচিত)। শ্যালো নৌকা আসার পর থেকে দুই গ্রামের যোগাযোগ সহজ হয়ে গেল। কয়েকমাসের মধ্যেই নোয়র্দ্দা হাটে কার্ত্তিকপুরের কাপড় বিক্রি হওয়া শুরু হলো। অবধারিতভাবেই নোয়ার্দ্দায় যে সব স্থানীয় তাতী ছিল তাদের অনেকের ব্যবসা হুমকির মুখে পড়ে, শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত এদের অনেকে পেশা পরিবর্তন করতে বাধ্য হয়েছিল।
এখন প্রশ্ন হচ্ছে নোয়ার্দ্দায় কার্ত্তিকপুরের কাপড় বিক্রি হওয়াকে আমরা কিভাবে দেখব। কার্ত্তিকপুরের কাপড়ের নোয়ার্দ্দার বাজার দখল কি কোন ভাবে রোধ করা যেত? রোধ করা যেত যদি১. নোয়ার্দ্দার লোক এই কাপড় না কিনত (দাম কম বা মান ভালো হওয়ার পরেও)।২. যদি নোয়ার্দ্দার কাপড়ের মান কার্ত্তিকপুরের চেয়ে বেশী হতো বা দাম কম হতো। সেক্ষেত্রে অবশ্য ঠিক উলটো ঘটনাটা ঘটতো, অর্থাত্ নোয়ার্দ্দার কাপড় এসে কার্ত্তিকপুরের বাজার দখল করত। সুতরাং (২) কোন সমাধান নয়।৩. যদি শ্যালো নৌকা এসে যোগাযোগ ব্যবস্থা সহজ না করে দিত।
সমাধান (১) প্রয়োগ করা খুব কঠিন, কারন লোকে দামে কম হলে বা একই দামে মান ভালো হলে সেটাই কিনবে। এই প্রবনতা থেকে লোকজনকে বিরত করা কঠিন। দেশে আমরা দেশী পেয়াজ আর ভারতীয় পেয়াজের মধ্যে দাম কম হলে ভারতীয়টাই কিনি, ক্রেতাকে আটকে রাখা মুস্কিল। (২) আগেই বলেছি কোন সমাধান নয়, কারন একই সমস্যা তখন কার্ত্তিকপুর গ্রামের জন্য হবে। (৩) একটা সমাধান হতে পারে, এবং সমাধান হিসেবে টিকে ছিল যতদিন না শ্যালো প্রযুক্তির আবির্ভাব হলো। কিন্তু প্রযুক্তির প্রসার যেহেতু খুব দ্্রুত হচ্ছে, একদিন না একদিন দুই গ্রামের মধ্যে যোগাযোগ হয়েই যেত।
তো দেখা যাচ্ছে কার্ত্তিকপুরের তাতীদের নোয়ার্দ্দার বাজার দখল আসলে ছিল সময়ের ব্যাপার। স্বাভাবিকভাবে আটকে রাখার তেমন কোন উপায় নেই। ঠিক এই ঘটনাটাই যদি গ্রামের স্কেল থেকে জাতীয় স্কেলে নিয়ে আসে তাহলে তাকে বলা হচ্ছে বিশ্বায়ন। যে কারনে নোয়ার্দ্দার পরিবর্তন আটকে রাখা মুস্কিল ছিল ঠিক একই কারনে বিশ্বায়ন আটকে রাখা কঠিন, এবং আসলে অসম্ভব। অবশ্য আটকে রাখার আরেকটা পদ্ধতি ছিল যেট উপরে উল্লেখ করি নি তাহলো:৪. নোয়ার্দ্দা গ্রামের মাতবর রা যদি বাজারে কার্ত্তিকপুরের কাপড় বেচতে না দিত।
জাতীয় পর্যায়ে (১) এবং (৩) প্রতিরোধ না করা গেলেও, রাষ্ট্রনায়করা (৪) এর বহুল প্রয়োগ করতেন। যেমন বিদেশী পন্যের ওপর বেশী বেশী শুল্ক আরোপ করে, বিদেশী পন্য আমদানী নিষিদ্ধ করে। বেশ কিছু কারনে গত কয়েক দশকে অধিকাংশ দেশ এসব রীতিনীতি শিথিল করা শুরু করেছে। এর পরিবর্তে মুক্তবানিজ্য শুরু করেছে, কেন শুরু করলো সে আলোচনায় পরে আসছি।
একদিক থেকে চিন্তা করলে কার্ত্তিকপুর-নোয়ার্দ্দার পরিবর্তিত পরিস্থিতি অবশ্য কোন ত্ষমক্ষত্প ঘটনা নয়। নতুন পন্যের প্রভাবে পুরোনো পন্যের বাজার নষ্ট হয়ে যাওয়া অনেক আগে থেকেই হচ্ছে। প্রাচীন যুগেও দেশে দেশে বানিজ্য চলতো। যতদুর শুনেছি পিরামিডের আমলে মিশরে মসলিন রপ্তানী করা হতো। ঘটনা সত্য হয়ে থাকলে বলতে হবে বিশ্বায়ন কোন ভাবেই নতুন কিছু নয়। ইউরোপীয়ানরা রেনেসার সময় থেকে জলপথে বিশ্বব্যাপী বানিজ্য শুরু করলে সত্যিকার বিশ্বায়ন তখন থেকেই শুরু হয়ে যায়। আধুনিক সময়ে কেবল তার ধারাবাহিকতা চলছে, পার্থক্য হচ্ছে যোগাযোগের অভুতপুর্ব উন্নতি হয়েছে এখন (উপরের পয়েন্ট -৩), অসংখ্য নতুন গবেষনা এবং আবিস্কার হয়েছে যে কারনে পন্যের দাম যেমন কমে গেছে (উদাহরন ইলেকট্রনিক্স), মান এবং গুন গেছে বেড়ে (উপরের পয়েন্ট -১)। একারনে বিশ্বায়ন এখন ভীষন দ্্রুত গতিতে বিস্তূত হচ্ছে, ব্যক্তিবিশেষেও এখন আমরা পরিবর্তনটা টের পাচ্ছি।
বিশ্বায়নের কুপ্রভাবও কার্ত্তিকপুর-নোয়ার্দ্দার ঘটনা থেকে বোঝা যাচ্ছে। নোয়ার্দ্দার তাতীদের ব্যবসা গুটিয়ে ফেলতে হয়েছে, অনেকে পেশা পরিবর্তন করেছে, বলাবাহুল্য পেশা পরিবর্তন মোটেই সহজ নয়, অনেককে বেকার হয়ে যেতে হয়েছে। বিশ্বায়ন বিরোধিতার এটা একটা মুল কারন। ৮০র দশকে ম্যানুফ্যাকচারিং কাজগুলো যখন আমেরিকা থেকে চীনে চলে যাওয়া শুরু করে তখন আমেরিকায় অনেক আন্দোলন হয়েছে। একই অবস্থা হয়েছে যখন আইটি রিলেটেড চাকরী গুলো কয়েক বছর আগে ভারতে আউটসোর্স হওয়া শুরু করে। আমাদের দেশে ভারতীয় পন্য আসার পর বহু কলকারখানা বন্ধ হয়ে গেছে।
তবে আসল ব্যপারটা হচ্ছে এর একটা ফ্লিপ সাইডও আছে। ধরা যাক কার্ত্তিকপুরের কাপড়ের দাম কম ছিল, তার মানে দাড়াবে নোয়র্দ্দার তাতীরা চাকরী খোয়ালেও সাধারন গ্রামবাসীদের অনেক সাশ্রয় হচ্ছে। বেশীরভাগ ক্ষেত্রেই এই সাশ্রয়ে লাভ জনা পাচেক তাতীর চাকরী হারানোর ক্ষতির চেয়ে বেশী। তার মানে মোটের ওপর দেশের জন্য লাভই হচ্ছে। নোয়ার্দ্দার তাতীরা যেটা করতে পারতো তা হলো প্রতিযোগীতার মুখে নিজেদের কাপড়ের দাম কমাতে বা মান বাড়াতে পারত। তাহলে কিন্তু তারা টিকে যেত, এবং শেষমেশ ক্রেতারা লাভবান হতো। ঠিক এই যুক্তিটাই মুক্তবানিজ্যের পেছনে। বেশীরভাগ দেশ প্রথমে গড়িমসি করলেও পরে বুঝতে পেরেছে বেশ কিছু লোক চাকরী হারালেও মোটের ওপর মুক্তবানিজ্যে দেশের লাভ হয়, এজন্য উপরের উল্লেখ করা প্রতিরোধক (৪) সবদেশই ক্রমশ শিথিল করে দিচ্ছে।
আমরা নিজেরাও প্রতিমুহুর্তে জেনে না জেনে বিশ্বায়নকে নানা ভাবে সাহায্য করছি। প্রতিবার মাথাব্যাথা হলে যখন ভেষজ/হোমিওপ্যাথিক না খেয়ে প্যারাসিটামল খাই তখন এর আবিস্কারক পশ্চিমা কম্পানীর শ্রেষ্ঠত্বকে মেনে নেই (উপরের-১)। একই কাজ করি জরুরী সংবাদ দিতে গিয়ে যখন সেল ফোন ব্যবহার করি। অথবা আড্ডা মারি ফোনে, সশরীরে বন্ধুর বাসায় না গিয়ে। কিংবা যখন যাত্রাপালাগান, হুজুরের ওয়াজ বাদ দিয়ে এমটিভি দেখি। আবার যখন বিশ্বায়নকে তুলোধুনো করে চীন থেকে আমদানী করা চায়ের কাপে ঝড় তুলি। একইভাবে আমেরিকানরা যখন আমাদের রপ্তানী করা জামাকাপড় কিনছে, বা বাংলাদেশের চিংড়ি খাচ্ছে, তখন ওরাও বিশ্বায়নে অংশগ্রহন করছে। ঠিক এ কারনে বিশ্বায়নকে বন্ধ করে দেয়ার মতো সত্যিকার বাধা নেই, যতদিন না মুক্তবিশ্ব তৈরী হচ্ছে, আমরা সবাই একটা গ্লোবাল সোসাইটির সদস্য হচ্ছি ততদিন এই পরিবর্তনের প্রক্রিয়া চলতে থাকবে। বিশ্বায়নকে খুব অপছন্দ হলে আমরা অবশ্য দেশের চারপাশে ৫০০ ফুট উচু লোহার দেয়াল দিতে পারি, সাথে সাথে সাবমেরিন কেবল কেটে, ভু-উপগ্রহ কেন্দ্র , এয়ারপোর্ট , সিপোর্ট বন্ধ করে থাকতে পারি, তাহলে হয়তো বিশ্বায়ন থেকে বাচা যাবে।
যেহেতু বিশ্বায়নকে আমরা থামাতে পারব না, বা চাইও না সেক্ষেত্রে আমাদের উচিত বিশ্বায়নকে ভবিতব্য ধরে নিয়ে স্বিদ্ধান্ত নেয়া। যেমন বিশ্বায়নের কারনে যারা চাকরী হারাবে, পেশা পরিবর্তনে বাধ্য হবে তাদের জন্য কি করা যায়। মুক্তবাজারে কিভাবে আমাদের প্রতিযোগীতামুলক মনোভাব বাড়ানো যায়। এবং সাংস্কূতিক বিশ্বায়নে কিভাবে আমরা অংশগ্রহন করব (পরের লেখা লিখতে চাই) তা নিয়ে চিন্তা ভাবনা করা।
সুমন চৌধুরী বলেছেন:২০০৬-১০-২৭ ০৫:১৭:১৭
এই লিংকটা একটু দেখুন আমি ঘন্টা খানেক পরে আসছি । আমি বিশ্বায়ন বিরোধী না - ভবিতব্য বলে মানতে পারছি না । আর বিষয়টার গতি সরলরৈখিক না । পুঁজির বিশ্বায়নের পাশাপাশি শ্রমের বিশ্বায়নও ঘটছে । তাই একমাত্রার ঢাল দিয়ে তেমন কিছু বোঝা যাবে না ।
সাইফ ভুইয়া বলেছেন:২০০৬-১০-২৭ ০৬:০০:০১
আমি ব্যক্তিগত ভাবে বিশ্বায়নের অকুনঠ সমর্থক হয়েও পর্যায়ক্রমে আগাতে আগ্রহী। হঠাত্ করে নয়।
হিমু বলেছেন:২০০৬-১০-২৭ ০৬:২৭:২৭
বিশ্বায়নের শক্তিকে কাজে লাগাতে পারলে কিন্তু এ নিয়ে আমরা তর্ক করতাম না। আমরা বিশ্বায়নের প্রবাহটাকে ঠিকমতো বুঝে ওঠার আগেই মুক্তবাজার মুক্তবাজার করে গলা ফাটিয়ে এখন একটা ভোক্তা দেশে পরিণত হয়েছি। ড. জাফরুল্লাহ খান কিন্তু স্বৈরশাসক এরশাদের সময় উদ্যোগ নিয়ে এদেশে ফার্মাসিউটিক্যাল ইন্ডাস্ট্রির জন্য বড় একটি সুযোগ করে দিয়েছিলেন, যে কারণে আজ প্রায় কুড়ি বছর পর ফার্মা শিল্পের ভিত বাংলাদেশে অত্যন্ত মজবুত। আমরা যদি এভাবে অন্য শিল্পগুলিকেও ছাতা ধরে বেড়ে ওঠার সুযোগ দিয়ে বিশ্বায়নে অংশগ্রহণ করতাম, তাহলে দর্শক নয়, খেলোয়াড় হিসেবেই মাঠে ঢুকতে পারতাম, যেটা ভারত পেরেছে। আমরা এখন একটা দর্জি ও কামলা জাতিতে পরিণত হয়েছি, দেশে জামা বুনি, বিদেশে কামলা খাটি, এ-ই আমাদের আয়ের মূল উত্স। বিশ্বায়নের সুফল আমরা ভোগ করতে পারতাম যদি ভোগমাত্রা সীমার মধ্যে রাখতে পারতাম। ওদিকে বিএমডব্লিউ কিন্তু ঠিকই হাঁকাচ্ছি, ইসলাম ইসলাম ইসলাম বলে মুখে ফেনা তুলে তারপর বিয়ারের ফেনায় মুখ দিচ্ছি, দেশে টাকা লুট করে থাইল্যান্ডে গিয়ে মাগীবাজি করছি। বিশ্বায়নের সুফল ম্যাকে্রাপর্যায়ে ভোগ না করে মাইকে্রাপর্যায়ে ভোগ করছি, এ-ই হলো সমস্যা। আর বাণিজ্যিক কূটনীতিতে আমরা মূর্খ, সেটা আমরা প্রমাণ করেছি, তাই কোন দর কষাকষিতেই আমরা জিততে পারি না। ফলাফল, নিম্নমানের নিরমা সাবান এসে দেশে বাজার খোঁজে, ওদিকে বিশ্বমানের লুকাস ব্যাটারি অ্যান্টিডাম্পিং আইনে মামলা খেয়ে প্রতিবেশী দেশের বাজারে ঢুকতে পারে না।
তথ্য প্রযুক্তির কর্নুকোপিয়া থেকে দুয়েক ঢোঁক খেয়েই আমরা গলা ফাটাই, ছাগলের তিন নম্বর বাচ্চারা সাবমেরিন ক্যাবল সংযোগ দিয়েই বিরাট সাফল্য বিরাট সাফল্য বলে নাচে। বিশ্বায়নের পাল্লায় পড়ে শিয়ালের হাতে মুরগি বর্গা দেয়া ছাড়া আর কিছু আমরা করতে পারিনি।
উত্স বলেছেন:২০০৬-১০-২৭ ০৭:০৮:৩২
সুমন, আমার ধারনা সাধারনভাবে বিশ্বায়ন আর ৯০ দশকের ডটকম বুম এবং পরে বার্স্ট এর মধ্যে পার্থক্য আছে। গ্রীনস্প্যানের নিউ ইকোনোমি কতখানি ঠিক বা ভুল সময়ের সাথে তার পরীক্ষা হবে। কিন্তু ফ্রীডম্যানের সমতল পূথিবী পড়ার পরে আমি কনভিন্সড ওভারঅল বিশ্বায়ন আমরা সবাই চাই। ইউনিফাইড ওয়ার্লড মোটামুটি সব লিবারেল মাইন্ডেড লোকের লং টার্ম ভিশন। যদিও ধনতন্ত্রের হাত ধরে হচ্ছে, কিন্তু সমাজতন্ত্র বা অন্যান্য গায়ের জোরের তন্ত্রের পক্ষে ঙষপ ডসড়লন অ্যাচিভ করা কঠিন, হয়তো অসম্ভব। গতি সরলরৈখিক না ঠিক আছে, আর শুধু পুঁজি নয়, শ্রম, মেধা, সংস্কূতি সবকিছুরই তো বিশ্বায়ন হচ্ছে, প্রত্যক্ষ-পরোক্ষভাবে অংশগ্রহন তো সবাই করছি।
উত্স বলেছেন:২০০৬-১০-২৭ ০৭:১৭:২৬
হিমু, এই কথাগুলো একটা পোস্ট আকারে লিখুন, কেন যেন লেখায় আমি জ্বালাময়ী বক্তব্য তুলে ধরতে পারি না।
সুমন, হিমুর সাথে আমি একমত, আমরা আসলে বিশ্বায়নকে ঠিকমতো ব্যবহার করতে পারি নি, গার্মেন্টস আর জনশক্তি রপ্তানীতে করেছি কিন্তু এর চেয়ে বেশী দুর যেতে পারি নি, এটা আমাদের দুরদর্শীতার অভাব। এমনকি এবার যেমন সুযোগ থাকতেও এশিয়ান হাইওয়েতে যোগ হলাম না, দশ বছর পর হয়তো নাকে খত দিয়ে হবো, তখন অনেক কাঠখড় পুড়িয়ে হতে হবে এই আর কি।
বিশ্বায়ন যদি ভবিতব্য না হয়, আমার ঘোরতর সন্দেহ আছে এখনকার রাষ্ট্রভিত্তিক কাঠামো কতদিন ধরে রাখা সম্ভব। ইন্টারনেট, স্যাটেলাইট মিডিয়ার কারনে পুরো পূথিবীর লোকজনের চিন্তা ভাবনার ব্যবধান ক্রমশ কমে আসছে (বিশেষ করে যাদের বয়স ৩০ এর নীচে)। এই ব্যবধান যদি না থাকে তা হলে জাতীয়তা/মানচিত্র ভিত্তিক দেশের মুল্য খুবই কম।
এস এম মাহবুব মুর্শেদ বলেছেন:২০০৬-১০-২৭ ০৭:৩১:২০
বিশ্বায়ন আসলে বড় স্কোপে চিন্তা করে না কেউ। কোন একটা কোম্পানী আউটসোর্স করবে কিনা সে সিদ্ধান্ত নেবার সময় তাদের দেশের কতজন মানুষ বেকার হবে সেটা গৌনই থাকে। পুরো ব্যাপারটাই তাই ব্যাক্তি বা ছোট্ট জনগোষ্ঠীর স্বার্থের হাতিয়ার। বড় স্কোপে কেউ কাজে লাগিয়েছে সেটা দেখিনি।
উত্স বলেছেন:২০০৬-১০-২৭ ০৮:০৭:৩৫
মাহবুব, এইখানেই বিশ্বায়ন নিয়ে ভুল বোঝাবুঝি তৈরী হয়। কম্পানীগুলো মোটেই বিশ্বায়নের প্রসারের জন্য সরাসরি কাজ করছে না, আর আউটসোর্সিং মানেই বিশ্বায়ন তাও নয়। বরং বিশ্বায়ন আমাদের প্রযুক্তির উত্কর্ষের স্বাভাবিক পরিনতি। লোকের যত আগ্রহই থাকুক টেকনোলজির সাপোর্ট না থাকলে বিশ্বয়ান সম্ভব না, এ কারনে ব্যাপক বিশ্বায়ন ১০০ বছর আগে না হয়ে এখন হচ্ছে।
সুমন চৌধুরী বলেছেন:২০০৬-১০-২৭ ০৮:৩৮:১৩
হিমু,ঠিকাছে ।উত্স,সমাজতন্ত্র বা রাষ্ট্রীয় পুঁজিবাদের কথা আমি বলি নাই । মনোপলির বিরুদ্ধে সেটা একধরনের ডকটি্রন হিসেবে এসেছিলো । সেখানে রাষ্ট্রীয় উদ্বূত্ত , অভ্যন্তরীন অবকাঠামোর পুঁজিতে পরিনত না হয়ে আমলাদের দ্বারা লুঠ হয়েছে এবং বেনামে বিনিয়োগ হয়েছে মেইনস্ট্রিম মনোপলির সাথে । তাই তথাকথিত সমাজতন্তে্রর পতন কোন অস্বাভাবিক ঘটনা ছিল না ।কিন্তু আরও একটা বিষয় এখানে লক্ষ্য করার মতো । রাষ্ট্রীয় পুঁজিবাদের ক্ষেতে্র , আমরা যদি সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নকে মডেল ধরি , দেখতে পাবো আমলাতন্ত্র রাষ্ট্রীয় উদ্বূত্তকে কুক্ষিগত করার আগ পর্যন্ত সেখানে ভারী শিল্পের বিকাশ ঘটেছে পশ্চিম ইউরোপের সাথে পাল্লা দিয়ে ।এই প্রকি্রয়া চলেছে ১৯৫০ দশকের প্রথমার্ধ পর্যন্ত এবং তার ডিরেকশান ছিল গ্লোবাল মনোপলির বিপরীতে পালটা বিশ্বায়নের দিকে। ১৯৫৫-৫৬র পরে গ্রহন করা সহাবস্থান নীতির কারণে সেখানে আর অবকাঠামোগত বিকাশ হয়নি , বদ্ধ বাজারে (ধলসঢ়পন শথড়রপয়) উদ্বূত্ত কেন্দ্রিভূত হওয়ায় মার্কেট ফেইলিওর জাতীয় ঘটনা ঘটেছে । এই বিষয়টি উল্লেখ করার উদ্দেশ্য হচ্ছে কেন্দ্রিভূত পুঁজি যখন আর বিনিয়োগের পথ পায়না তখনই ধ্বসে পড়ে ।
গ্লোবাল মনোপলি, যার পপুলার নাম আজকের বিশ্বায়ন , সে নিজেও কিন্তু একই ধরনের সঙ্কটে পড়তে পারে এবং পড়েছে ।যখনই এই সঙ্কট সূষ্টি হয় তখনই তার মধ্যে গায়ের জোরে বাজার দখলের (প্রাকূতিক সম্পদ লুন্ঠনও বাজার দখলের আওতায় পড়ে) প্রবণতা সূষ্টি হয় । এই লুঠতরাজ ছাড়া কেন্দ্রিভূত পুঁজির টিকে থাকা অসম্ভব ।সেই আদিম সঞ্চয়ণ থেকে আজ পর্যন্ত যতপ্রকার যুদ্ধ দেখা গেছে সবই পাকে চকে্রবাজার দখলের লড়াই ছিল ।এই লড়াই এ অন্যসব লড়াই এর মতো আক্রমণকারী এবং আক্রান্ত এই দুই পক্ষের অস্তিত্ব ছিল ।আক্রান্তের পক্ষের লড়াইগুলোকে আমরা গণযুদ্ধ, বিপ্লব,স্বাধীনতা সংগ্রাম ইত্যাদি নামে ডেকে থাকি আর আক্রমণকারীকে উপনিবেশবাদী বা সাম্রাজ্যবাদী ।
বিশ্বায়নের গতি সরলরৈখিক নয় এই বাক্যের গূঢ়ার্থ হচ্ছে , আক্রান্ত পক্ষ প্রত্যাঘাত করবেই আর তাতে আক্রমণকারীর পক্ষে সবসময়ে আত্মরক্ষা করা সম্ভব হবে না । বিভিন্ন সময়ে তাকে পিছু হঠতে হবে কখনও কখনও পরাজিতও হতে হবে । আর তাতে তার তরফ থেকে বিশ্বায়ন সবসময় তার পরিকল্পনা মাফিক এগোবে না ।
বিশ্বায়ন পে্রমিকদের বহুব্যবহৃত দুটি উদাহরণ ভারত আর মালোএশিয়ার ইতিহাস থেকে নেহেরু আর টুংকু আব্দুর রহমানের সময়কার অবকাঠামো নিমর্ানের ফেইজ বাদ দিয়ে , দেশ দুটিকে আন্তজর্াতিক পুঁজির আক্রমণের মুখে ভেবে নিন...এক ধরনের বাংলাদেশ দেখতে পাবেন ।গণপ্রজাতন্ত্রী চীনের ইতিহাস থেকে এড়পথয় খপথহ ঋসড়াথড়ন বাদ দিন...এক ধরনের কম্বোডিয়া দেখতে পাবেন ।
বিশ্বায়নের সুফল নিতে গেলে নিজের ঘটে কিছু থাকতে হয় । নিজের ঘটের জিনিস বাঁচাতে হয় ডাকাতের সঙ্গে লড়াই করে । ডাকাত কিন্তু ডাকাতই । সে আপনার আমার কারোই দুলাভাই না ।
সুমন চৌধুরী বলেছেন:২০০৬-১০-২৭ ০৮:৪৫:০৫
আর একটি কথা । পুঁজির কেন্দ্রিভবন অগর্ানিক প্রকি্রয়াতেই রাষ্টে্রর ভূমিকাকে মিনিমাইজ করে আনছে । এই প্রকি্রয়ার দ্বন্দ্ব-সংঘর্ষ দূশ্যত রাষ্টে্রর ভূমিকাকে বদলালেও কার্যত আক্রমণ করছে রাষ্টে্রর কাঠামোকে ।
হিমু বলেছেন:২০০৬-১০-২৭ ১০:৫৮:০৬
আমরা যতই সভ্য হবার চেষ্টা করি না কেন, আমাদের সমাজ কাঠামো স্পষ্টতই বর্ণবাদী। বিশ্বায়ন এই বর্ণবাদী চেহারাকে কিছুটা চিনির প্রলেপ দিয়ে ফুটিয়ে তুলছে আরো। বাংলাদেশের স্বাধীনতার অব্যবহিত পরে ভারতীয় শিল্পপতিদের পরামর্শ ছিলো, এই ছোট দেশে ভারি শিল্পের প্রসারের কোন প্রয়োজন নাই, ভারতীয় উত্পাদন দিয়েই চাহিদা মেটানো সম্ভব, কাজেই শিল্পে সহায়তা ফালতু কাজ হবে। যে ক্ষুদ্র ঋণ নিয়ে ড. ইউনূস দুনিয়া জুড়ে দরিদ্র হঠাও আন্দোলন লম্ফঝম্প করছেন, সেই ক্ষুদ্র ঋণ দিয়েই বাংলাদেশকে শুরুর দিকে পোষ মানানোর চেষ্টা চলেছে, যাতে আমরা পেটেভাতে গতর খাটিয়ে বড় পুঁজিবাদের হিন্টারল্যান্ড হিসেবে থেকে যাই। আমাদের মধ্যে একটা অংশ জাতে উঠতে না উঠতেই তাকে পোষা ভোক্তা বানিয়ে ফেলা হোক, যাতে সে বিনা প্রশ্নে শুধু গিলে যায়। আমাদের অবকাঠামো গড়েই উঠতে পারেনি। সমাজতন্ত্র যাতে শেকড় গাড়তে না পারে, সেজন্য কোন শ্রমনির্ভর ভারি শিল্পই বাংলাদেশে উত্সাহিত হয়নি। যা কিছু হয়েছে, ছাড়া ছাড়া ভাবে। বাংলাদেশের একটা বিরাট সম্ভাবনাময় শিল্পাঞ্চল ছিলো দক্ষিণাঞ্চল, ঠুঁটো জগন্নাথ হয়ে পড়ে আছে বছরের পর বছর। আজকে চীন আর ভারত এক লাফে চড়ে বসেছে বিশ্বায়নের ঘোড়ার ওপর, কারণ তারা তিলতিল করে আগে অবকাঠামো গড়ে তুলতে পেরেছে। বাংলাদেশ পারেনি। আমরা কত সম্ভাবনা নিয়ে একটা দেশ শুরু করেছিলাম, আমরা আজ দেড়শো মিলিয়ন লোক এক ভাষায় কথা বলি, এক খাবার খাই, এক কাপড় পড়ি, কিন্তু এগিয়ে যেতে পারি না একসাথে। বিশ্বায়নের চাবুক এসে আমাদের মরা ঘোড়ার ওপর থেকে মাছি উড়িয়ে দিতে পারে শুধু। বিশ্বায়নের মুখে আমরা অন্যদের মতো করেই লাগাম পরাতে পারতাম, পারিনি দূরদূষ্টিসম্পন্ন নেতূত্বের অভাবে। আমাদের রাজনীতি দু:খজনকভাবে নিজেদের কোন উপকারে আসেনি, উপকূত করেছে আমাদের প্রতিদ্বন্দ্বীদের। আজকে সমাজতন্তে্রর চামড়া গায়ে চীন সবচেয়ে কার্যকরী পুঁজিবাদের মধু চাটছে, আমরা অমুকবাদ তমুকবাদের নামে শুধু নিজেদের উন্নয়ন বাদ দিয়ে এর ওর পাছায় আঙ্গুল দেই।
বিশ্বায়নের এই ঘূর্ণিতে আমাদের অবস্থান কোথায়? আগেও যা বলেছি, মানুষ শেষ পর্যন্ত বর্ণবাদী, আর আমরাও ক্রমাগত শূদ্রায়নের শিকার হয়ে চলছি। আজকে আমরা বিশ্বমাকড়সার জালে এমনভাবে ফেঁসেছি, চাইলেও এখন আর আমাদের উত্তরণ সম্ভব নয়। আমরা শুধু উটচোদা সৌদীদের দেশে কামলা পাঠাই, আর তাদের পাঠানো রোজগার খরচ করে আসি অন্য দেশে ফূর্তি মারতে গিয়ে। আর দর্জিগিরি করি, দর্জি ব্যবসায়ীদের মুখ দিয়ে বড় কথার খই বার করি। টাটা আসে আমাদের পাছা মারতে, সেই আনন্দে আমরা লোশন মাখি। ক্ষতি্রয় আর বৈশ্যদের জালে জড়িয়ে জড়িয়ে আমরা এখন সেই আর্যতন্তে্রর শুরু থেকে যেমন শূদ্র ছিলাম, তেমনি শূদে্র পরিণত হয়েছি। আমাদের যা কিছু জ্ঞান, শৌর্য আর বাণিজ্যবূদ্ধি সব আমরা কমোডে ফেলে ফ্লাশ করে দিয়েছি।
বিশ্বায়নের স্রোতকে আমরা পাল্টাতে পারবো না, কাজেই সেই স্রোতকে নিজেদের কাজে লাগানোর ব্যবস্থাই করতে হবে। আমাদের হাতে ডুবে যাবার আগে খুব বেশি সময় নেই, এর মধ্যেই যা কিছু করার করতে হবে।
হিমু বলেছেন:২০০৬-১০-২৭ ১১:০৮:১৯
কার্ত্তিকপুর আর নোয়ার্দ্দার সরল মডেলে কিন্তু নোয়ার্দ্দার লোকজন একদিক দিয়ে লাভবানই হচ্ছে, যদিও তাঁতির ভিটামাটি চাঁটি হয়ে যাবার যোগাড়, কিন্তু আমাদের জটিল মডেলে কিন্তু এই সামগি্রক লাভটুকুর গুড় আবার অন্য কোন পিঁপড়া এসে খেয়ে যাচ্ছে। এ যেন সস্তায় কাপড় কিনে বাঁচানো পয়সা দিয়ে কার্ত্তিকপুরের বিখ্যাত শাহী চটপটি কিনে খাওয়ার মতো অবস্থা। নিজেদের টিকে থাকতে গেলে নোয়ার্দ্দাবাসীকেও কিন্তু ঐ ভটভটি ট্রলারকে কাজে লাগাতে হবে, যাতে ফিরতি খ্যাপে সেই ট্রলারে চড়ে কার্ত্তিকপুরেও নোয়ার্দ্দার কামারপাড়ার দা, পালপাড়ার হাঁড়ি আর বেদেপাড়ার বাঁশি যায়। নাহলে সব রিসোর্স সাইফন হয়ে নোয়ার্দ্দার লোকজনকে শেষমেশ ঢাকায় এসে ভিক্ষা করতে হবে।
এখানে মজার ব্যাপার হচ্ছে, কার্ত্তিকপুরের লোকজন কিন্তু চাইবে না নোয়ার্দ্দাকে এভাবে ছিবড়ে বানাতে, তারা চাইবে নোয়ার্দ্দার লোক যে করেই হোক একটা কিছু করে টাকাপয়সা রোজগার করে তাদের কাপড় কেনার মতো সামর্থ্য নিয়ে টিকে থাকুক। কাজেই তারা তাদের প্রতিদ্বন্দ্বী নয় এমন কোন ছোটখাটো খাত ধরিয়ে দেবে নোয়ার্দ্দাকে, প্রয়োজনে মহাজন পাঠিয়ে ঋণ দেবে। সেই মহাজনের কথা নোয়াদ্দর্ার লোকজন উঠবে বসবে।
কাজেই নোয়াদ্দর্ার লোকজনের যদি বিচি বলে কিছু থাকে, তাদের উচিত হবে ঐ শ্যালো ভটভটিকেই পাকড়াও করা। বিষে বিষক্ষয়।
এস এম মাহবুব মুর্শেদ বলেছেন:২০০৬-১০-২৭ ১১:১০:৩৪
বেড়ে বলেছ হিমু দাদা। কিক এস।
সুমন চৌধুরী বলেছেন:২০০৬-১০-২৭ ১১:১৩:০৯
পারফেক্ট @ হিমু।
একটু সমস্যা আছে । সামান্য । আমাগো নেতাদের (শাস্তে্র যাকে পলিটিক্যাল কõাস বলে)ভারী পাছায় একটা মোক্ষম বোলারস ব্যাক-ড্রাইভ করতে হবে । কিন্তু খালি লাইন মিস হইতাছে...
হিমু বলেছেন:২০০৬-১০-২৭ ১১:৪২:০৭
কিন্তু আমি ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা থেকে যা বুঝতে পারছি, আমরা খুব একটা নেটওয়র্কড না নিজেদের মধ্যে। দ্য ওয়ার্ল্ড ইজ ফ্ল্যাট বইটা আমি পড়ছি, শেষ হয়নি এখনো, কিন্তু এক একটা কেস স্টাডি চমকে দেবার মতো। ভারতীয় বা চীনারা অনেক বেশি নেটওয়ার্কড, এবং নিজেদের মধ্যে এ যোগাযোগটাই তারা লঞ্চপ্যাড হিসেবে ব্যবহার করতে পারছে। নিজেকে দিয়েই বিচার করে দেখতে পারি আমরা। আমরা উন্নত বিশ্বের সুযোগগুলো সম্পর্কে যে তথ্যগুলি পাই, তা কতটা নিজেরা খুঁজে বার করি, আর কতটা কোন যোগাযোগ নেটওয়ার্ক থেকে পাই? বিশ্বায়নের একেবারে প্রথম ধাপেই কিন্তু আমরা শুকনায় আছাড় খেয়ে পড়ে আছি।
সুমন চৌধুরী বলেছেন:২০০৬-১০-২৭ ১২:৩১:০৮
উদ্যোগ অবশ্যই নিতে হবে । তবে প্রতিবন্ধকতাগুলোও মাথায় রাখতে হবে । কারণ শেষ পর্যন্ত রাজনীতিতে এসে সবকিছু খাবি খায়। একটা পয়েন্ট যে কারণে আমি হইলাইট করতে চাচ্ছি, তা হলো আমাদের রাজনীতিক দের অদক্ষতার কারণে গড়ে ওঠা শিল্প ধ্বসে পড়েছে বা নতুন শিল্প গড়ে উঠতে পারছেনা এমন নয়, বরং এই কাজটা তারাই নিপুণহাতে করেছেন । এখনও করে যাচ্ছেন ।এই গোয়ামারা চালিয়ে যাওয়াই তাদের রিজিক ।তাদের সকি্রয় উপস্থিতিতে ব্যক্তিগত বা মাইকে্রাপর্যায়ের উদ্যোগগুলো কতটা সফল হতে পারে ?
হিমু বলেছেন:২০০৬-১০-২৭ ১২:৫৩:০১
কানসাট।
সুমন চৌধুরী বলেছেন:২০০৬-১০-২৭ ১২:৫৭:১৮
ক্ষুদ্র আঞ্চলিক প্রতিরোধ থেকে চেতনা আসে ঠিক । কিন্তু একে সংগঠিত না করলে বা না করতে পারলে নাইজেরিয়া থেকে মাগুরছড়ার পোড়া মাটি ছাড়া আর কি কি দেখা যেতে পারে ?
হিমু বলেছেন:২০০৬-১০-২৭ ১৩:০৩:৪৪
ফেরগে্রায়সারুং ডেস কানসাটস। ডি পলিটিকার মুয়সেন ইন ডের রাইখেভাইটে আইনগেশ্লসেন ভেয়ারডেন। দানাখ ...
সুমন চৌধুরী বলেছেন:২০০৬-১০-২৭ ১৩:০৫:৩১
ভুর্ডে হেয়ার শ্যামলাল গেফ্রাগড.....
হিমু বলেছেন:২০০৬-১০-২৭ ১৩:০৮:৪৮
বিশ্বায়নের ঔষধও কিন্তু বিশ্বায়ন। নীতিনির্ধারকদের কাজের জবাবদিহিতা নিশ্চিত করার কাজেও বিশ্বায়নকে ব্যবহার করতে হবে। জাতিস্বার্থের পরিপন্থী কোন নীতি গ্রহণের জন্য আজ পর্যন্ত কাউকে আইনী ব্যবস্থা বা বাংলা সংশোধনের মুখোমুখি করানো হয়নি, সে প্রকি্রয়া দিয়ে শুরু করা যেতে পারে। শনির আখড়ার সংসদসদস্যের জান নিয়ে ম্যারাথন এখানে উদ্ধূতির যোগ্য।
সুমেরু বলেছেন:২০০৬-১০-২৭ ১৩:১০:৪৭
ঠিক আছে। আপনারা গুরুচন্ডালি ডট কমে গিয়ে টইপত্তর এ বিশ্বায়নের পোষ্টগুলি পড়ুন।
সুমন চৌধুরী বলেছেন:২০০৬-১০-২৭ ১৩:১৫:৪২
বুঝলাম ।
তি্রভুজ বলেছেন:২০০৬-১০-২৭ ১৩:১৬:৩৭
তর্কে যেতে চাই না.... শুধু বলতে চাই আমি বিশ্বায়ন বিরোধীদের দলে আছি!
সাধক শঙ্কু বলেছেন:২০০৬-১০-২৭ ১৪:০১:৫৭
হে বরাহ ! জানিয়াছ কিবা হেথা কি লয়ে বিচার ?
সাধক শঙ্কু বলেছেন:২০০৬-১০-২৭ ১৪:০২:৪৮
মুখাক ডাকতিছি। কুন্ঠে গেলা ?
উত্স বলেছেন:২০০৬-১০-২৭ ২০:৪১:৩০
দেরী হয়ে গেল আসতে।
ধন্যবাদ সুমন, হিমু। বিশ্বায়নের কু-প্রভাব আছে ঠিকই কিন্তু আমার ধারনা সমাধানও বিশ্বায়নের মধ্যেই। এই পোস্টের একটা বক্তব্য ছিল যেহেতু বিশ্বায়নকে থামাতে পারব না, সুতরাং বিশ্বায়নকে প্রতিযোগী না ভেবে কিভাবে একে লাভজনক ভাবে ব্যবহার করা যায় সে উপায় খোজা উচিত আমাদের।
কয়েকটা জায়গায় একমত হতে পারলাম না যেমন- “গ্লোবাল মনোপলির পপুলার নাম বিশ্বায়ন“। আমার ভীষন দ্বিমত আছে এ প্রসঙ্গে। বরং বিশ্বায়নের কারনেই মনোপলি এখন অনেক কঠিন। উদাহরন আমেরিকান গাড়ী কম্পানী গুলো। আবার যেমন ইলেকট্রনিক্সের ক্ষেত্রে বিশ্বায়ন না হলে আজও ওদের গায়ে লেখা দেখতাম “শথনপ মষ যথহথষ“। বাজার দখলের লড়াইয়ের ব্যপারটা ঠিক আছে, কিন্তু আমার ধারনা বিশ্বায়নের কারনে এখন তবু স্বল্পোন্নত দেশ হিসেবে আমরা যে সুযোগ পাচ্ছি, সেটা ৩০ বছর আগে পাওয়া কঠিন ছিল। আমাদের ব্যর্থতা যে বাজার দখলের ক্ষেত্রে আমরা সবসময় রিসিভিং এন্ডে ছিলাম, আমরা তত্পর হলে আমরা নিজেরাই হয়তো অন্যদের বাজার দখল করতে পারতাম। আমরা পারি নাই সেটা আমাদের অযোগ্যতা, এখানে বিশ্বায়নের দোষ কমই। বিশ্বায়নের একটা দোষ হতে পারে প্রতিযোগিতার ব্যপক প্রয়োগ, এখন আমরা যদি নিজেদের যোগ্যতার অভাবে সব সময় লাস্ট বেঞ্চে থাকি তাতে বিশ্বায়নের কি করার আছে। আমি তো দেখতে পাই এখন এসব প্রতিযোগীতা যতটা স্বচ্ছ এবং বর্ণহীন ঐতিহাসিক ভাবে আগে এরকম কমই ছিল। আমরা শুদ্্রায়নের শিকার হচ্ছি আমাদের দোষে, বিশ্বায়ন তো আর লঙ্গরখানা বানাচ্ছে না যে আমাদের অযোগ্যতার পরেও মুখে তুলে খাওয়াবে। নতুন শিল্প গড়ে উঠছে না এর কারন রাজনৈতিক অদক্ষতা যেমন, তেমন আমাদের সংস্কূতি, মুল্যবোধ ও একটা বড় বাধা।
হিমু বলেছেন:২০০৬-১০-২৮ ০০:১৮:০৩
বিশ্বায়নের প্রবল তোড়কে কিন্তু কেটেছেঁটেও আমরা খানিকটা কাজে লাগাতে পারতাম। কিন্তু সেই ব্যারেজ-þöুইস-লক-গেট আমরা কোনটাই ঠিকমতো বসাতে পারিনি। রাজায় বলছে শালার ভাই, আনন্দের আর সীমা নাই, আমরা নাচতে নাচতে ন্যাড়ামাথা নিয়ে বিশ্বায়নের বেলতলায় চলে গেছি। গিয়ে দেখেছি অন্যদের মাথায় হেলমেট, তারা বেল ফাটিয়ে ভর্তা বানিয়ে খাচ্ছে, আমাদের ন্যাড়া মাথায় শুধু খুসকি। আর এখন এমন এক পরিস্থিতি, আমরা চাইলেও সেই বেলতলা ছেড়ে বেরিয়ে আসতে পারবো না।
জানি না সামনে কারা নীতিনির্ধারক, কিন্তু এখন আর শুধু আশেপাশের কয়েকটি দেশের কথা মাথায় রেখে নীতি নির্ধারণের দিন নেই। এখনসেনেগালের কোন দূরদর্শী আইনপ্রণেতার উদ্যোগ আমাদের বাংলাদেশের জিএনআইতে সরাসরি ছাপ ফেলতে সক্ষম। নেট-প্রøাকটিসের সময় আমরা কাচ্চু খেলেছি, এখন পিচে এসে বাউনসার ইয়কর্ার সব সামলাতে হবে। নীতিপ্রণেতাদের এই ব্যাপারটা যেন মাথায় থাকে।
আমরা যে ছুটতে জানি, তা আমরা প্রমাণ করেছি কয়েকবার। এখন একেবারে মরণপণ ছুট দিতে হবে। একেবারে ফরজ কাজটা দিয়েই শুরু করা যায়, মোবাইল ফোন সকলের হাতে হাতে যেভাবে চলে গেছে, সেভাবে গ্রামে গ্রামে এখন নেটারেসির হার বাড়াতে হবে। আমাদের মাইকে্রাপর্যায়ে যেসব সমস্যা, সেগুলোর কাস্টমাইজড সমাধান যদি আমরা পৌঁছে দিতে চাই জায়গামতো, এর বিকল্প নেই।
এক একটি ইউনিটে পল্লী অঞ্চলকে ভাগ করে সেখানে দুইতিনজন তথ্যবালক আর তথ্যবালিকা নির্বাচন করা হোক। প্রয়োজনে এদের বিশেষায়িত প্রশিক্ষণ দেয়া হোক পড়াশোনার পাশাপাশি। এদের কাজ হবে গ্রামবাসীর টেকনিক্যাল সমস্যাগুলোকে অনলাইনে পরিবেশন করা। আমি, আপনি, আমরা সেই সমস্যাগুলোকে সমাধান করতে পারবো। সারা দেশে যদি প্রতি বর্গ কিলোমিটারে একটি করেও তথ্য ইউনিট থাকে, তাহলেও দেড় লাখ মানুষ পাওয়া যাবে সেই প্রতিটি ইউনিটে একবার করে পাঁচ মিনিট সময় দেয়ার। টেলিমেডিসিন, টেলিথেরাপি, টেলিকাউনসেলিং। আমাদের জন্য আমরা।
আমরা নিজেদের শক্তিতে বিশ্বাস করতে পারলে কোন সমস্যাই সমস্যা না। ক্ষুদ্রঋণ নিয়ে এতো কথা, এতো মাতামাতি, কিন্তু ক্ষুদ্র সমাধান নিয়ে কোন গোলযোগ হওয়ার সম্ভাবনা কম। কারণ জ্ঞান বিতরণের জিনিস, যতই করিবে দান তত যাবে বেড়ে।

Tuesday, November 14, 2006

...

I could not post last few weeks due to different reasons, expecting a comeback this week. These days I guess people in general are more interested about political situation in Bangladesh, unfortunately I don't have much to say on that, consider reading mukhforr's blog at http://mukhforr.blogspot.com/ instead.
eXTReMe Tracker