Saturday, September 30, 2006

মুসলিমদের আলাষ্কা ভ্রমন থেকে বিরত থাকা উচিত

বিশেষ করে রমজান মাসে তো ওমুখো হওয়াই উচিত না। শুধু আলাষ্কা না অন্যান্য আর্কটিক (N66° 33' 39" latitude এর উত্তরে) এলাকা যেমন গ্রীনল্যান্ড, সাইবেরিয়া, অথবা অ¨ান্টার্কটিক এলাকা (S66° 33' 39" latitude এর দক্ষিনে) তেও যাওয়া উচিত না। স্বল্প সময়ের জন্য গেলেও দশবার ভেবে, ভালোমতো খোজখবর নিয়ে যাওয়া উচিত (পারলে বিরত থাকাই শ্রেয়)। ঈমানদার মুসলিম ওখানে গিয়ে বিপদে পড়েছে এরকম অনেকের কাছে শুনেছি।

বেশ অতীতে আমি একবার সাঙ্গপাঙ্গ সহ সময় নিয়ে আলাষ্কায় গিয়েছিলাম। গ্রী®§ কাল ছিল তখন (জুন-জুলাই)। প্রবাসী বাঙালী সাধারনত বেশী ভ্রমন করে না, ছাত্রাবস্থায় প্রথম প্রথম কাছে ধারে ঘুরলেও , পরে মোটামুটি আত¥ীয় স্বজনের বাসায় যাওয়া ছাড়া বাঙালীকে ঘরোয়া আড্ডা , পরচর্চা আর দাওয়াত চক্র থেকে বের করা মুষ্কিল। এছাড়া খরচের ব্যাপারটা তো আছেই। ল্যান্ডষ্কেপ আর বিচিত্র উদ্ভিদ-প্রানীকুল দেখার মতো কাজে কয়েক হাজার ডলার ঢালার মতো উচ্ছন্নে যাওয়া বাঙালী কম আছে। তারওপর আলাষ্কার মতো নিষিদ্ধ এলাকা।

কয়েক বছর আগের ঘটনা অবশ্য। জুনো (Juneau) থেকে অ¨াংকরেজে (Anchorage) গেলাম প্রথমে। তখন ওখানে প্রায় ২০ ঘন্টা দিন। বাকী কয়েক ঘন্টা রাতকে ঠিক রেগুলার রাত বলা যায় না, অনেকটা সন্ধ্যার মতো। যাই হোক মজা বুঝলাম ফেয়ারব্যাংকসে গিয়ে ওখানে রাত আরো কম, জুনে মোটামুটি ২৪ ঘন্টা দিন। বাসে করে যাওয়া যায় আর্কটিক সার্কেলে, যেখান থেকে পুরোপুরি ২৪ ঘন্টা দিন শুরু হয়েছে। আরেকটা ব্যপার আলাষ্কার এসব এলাকা অনেক উত্তরে হওয়ায় সুর্য কখনও দিগন্তের খুব বেশী ওপরে ওঠে না। বাংলাদশের মতো দুপুর ১২টায় মাথার ওপর সুর্য দেখতে পাবেন না। ২৪ ঘন্টা দিনে সুর্য অবশ্য এক জায়গায় স্থির থাকে না, বরং পুরো দিগন্ত বরাবর একটু বাঁকা ভাবে ঘুরতে থাকে। চমত্কার অভিজ্ঞতা ছিল সে টা, আগে বইয়ে পড়েছি শুধু, নিজে দেখে আমি মুগ্ধ। যদিও প্রথম প্রথম ঘুমাতে একটু সমস্যা হচ্ছিল, যেহেতু ঠিক রাত হচ্ছিল না। আলাষ্কার একদম উত্তর প্রান্তে আছে এষ্কিমোদের শহর Barrow, ছোট শহর যদিও, আর্কটিক সাগরের কুলে। শহরটার বিশেষত্ব হচ্ছে এখানে মে মাসের ১০ তারিখ থেকে আগস্টের ২ তারিখ পর্যন্ত সুর্য কখনই ডোবে না। এসব দিন গুলোতে সুর্য সারাক্ষন আকাশে থাকে। আবার নভেম্বরের ১৮ তারিখ রাতে সুর্য ডুবে যায় এবং তারপর ওঠে জানুয়ারীর ২৪ তারিখে। এই সময়ের পুরোটাতে সুর্যের কোন দেখা থাকে না।

তো মুসলিমদের অসুবিধা কি? মাঝে মাঝে রোজার মাস পড়ে যায় মে-জুন-জুলাই-আগস্টে। এখন Barrow তে গিয়ে যদি কারো রোজা রাখার খায়েশ হয় তাহলে তিনমাস না খেয়ে থাকতে হবে। আমার এক ঈমানদার দোস্ত তো পুরো ট্যুরে মাগরেব আর এশার নামাজই পড়তে পারল না, কারন সুর্যাস্ত হয় না । আরেকজন ফতোয়া বের করল এই গন গনে সুর্যের আলোতেই এশা পরা যাবে, টাইম হিসাব করে। আরেকটা সমস্যা হচ্ছে ছায়ার দৈর্ঘ্য নিয়ে, সুর্য যেহেতু সারাদিনরাত দিগন্তেই থাকে ছায়ার দৈর্ঘ্যও সব সময় থাকে ইয়া লম্বা। সৌদি থেকে লাঠি নিয়ে এসে মাপলেও নামাজের ওয়াক্ত আলাদা করা সম্ভব না। মরমী হায়াহায়া বৈজ্ঞানিকরা অনেক সময় কস্টকল্পিত ব্যাখ্যা নিয়ে হাজির হন, তারা যতই ভুজুং ভাজুং দিন না কেন, সার্বজনীন নীতির পরিনতি দেখে আতকে উঠতে হয়। আসলে হাজার বছর আগে আরবের লোকের আর্কটিক এলাকা নিয়ে কোন ধারনাই ছিল না। আরব উপদ্বীপ বিষুব রেখা থেকে বিশেষ দুরে না, এজন্য ঐ ধরনের এলাকায় সারা বছরে দিন রাত্রির বিশাল কোন পার্থক্য হয় না, অন্যদিকে যতই মেরূর দিকে যাওয়া যাবে এই পার্থক্য ততই বড় হতে থাকবে।


ফজলে ভাইর লেখা থেকে দেখা যায় সব জাতির ওপর রোজা রাখা ফরজ ছিল, অন্তত কোন না কোন সময়ে তাদেরকে এই বানী দেয়া হয়েছিল। বোধ করি আলাষ্কার অধিবাসী এষ্কিমো, এবং আথাবাষ্কানদের ওপরও রোজা রাখার নিয়ম ধার্য ছিল। আধুনিক এষ্কিমোরা এসব নিয়মের ধারে কাছ দিয়েও যায় বলে মনে হয় না। কিন্তু ওরা রোজার ব্যপারটা ভুলে গেল কিভাবে? আমার থিওরী এরকম, বহুকাল আগে ওরা ঠিকই রোজা রাখত, বহুকাল বলতে প্রায় ১৫ থেকে ১৭ হাজার বছর আগে যখন বরফযুগ চলছিল। তখন ওরা সাইবেরিয়াতে ছিল, একটু সাউদার্ন ল্যাটিচ্যুডে, যেখানে দিনরাত্রির ব্যবধান সহনীয়। তখন মাঝে মাঝে গরমের দিনে একটু কষ্ট হতো (১৮ ঘন্টা দিন) তবে রোজা রাখা একদম অসম্ভব ছিল না। পরে ওরা মাইগ্রেট করে বেরিং প্রনালী পার হয়ে আলাষ্কায় আসে। ওরা বেশ অল্প সময়েই এই মাইগ্রেশন করেছিল, ফলে যেটা হয় আলাষ্কায় এসে যথারীতি রোজা রাখা শুরু করল, কিন্তু তখন ছিল মে মাস তাই দিন আর শেষ হয় না, যারা বেশী ঈমানদার ছিল ওরা আগস্ট পর্যন্ত না খেয়ে অপেক্ষা করতে করতে শেষ মেশ মারাই যায়, আর বাকীদের মধ্যে অনেকে ছিল মোশরেক ওরা রোজা না রেখে গোপনে ঠিকই খাওয়া দাওয়া করতে থাকে। ওরা সে যাত্রা টিকে যায়, পরের বছর থেকে মোশরেকরা রোজা রাখার প্রথা উঠিয়ে ফেলে, তাদের বংশধররাই এখনো বেচে আছে। একটা ব্যপার নিশ্চিত না যে এই ঘটনাটা নুহ নবীর বন্যার আগের না পরের। থিওরী অবশ্য ভুলও হতে পারে। আপনাদের কাছে অন্য ব্যখ্যা থাকলে জানাবেন

Original blog and comments - http://www.somewhereinblog.net/utsablog/post/20509

Friday, September 29, 2006

সমতল পূথিবী

নাহ, ব্লগের পুরানো তর্ক পূথিবী সমতল না গোল এই নিয়ে বা ধর্ম সংক্রান্ত নয় আজকের লেখা। নামটা আসলে ধার করা Thomas L. Friedman এর বই The World Is Flat: A Brief History of the Twenty-first Century থেকে। অর্থনীতির বই খুব কম পড়েছি, আন্ডারগ্রøাডে একটা কোর্স নিয়ে ছিলাম মোটামুটি অতটুকুই ছিল, কিন্তু এই বইটার নামডাক শুনে ভাবলাম কিনে দেখি আসলে কি আছে। গ্লোবালাইজেশন নিয়ে এত সহজবোধ্য বই কম আছে।

গ্লোবালাইজেশন নিয়ে আমাদের মধ্যে অনেক ভুল ধারনা আছে। আমার এক পরিচিত ঢাকায় আইন ও সালিশ কেন্দে্র চাকরী করত, একবার শুনলাম বম্বে (মুম্বাই) গেছে মিছিল করতে অফিসের হয়ে, এবং মিছিলের উদ্দ্যেশ্য গ্লোবালাইজেশনের বিরোধিতা করা। আমি ঠিক জানি না নীতি নির্ধারক বা বুদ্ধিজীবিরা কি ঠিক বুঝে শুনে না অন্য কোন উদ্দ্যেশ্য থেকে বিশ্বায়নের বিরোধিতা করেন। কিন্তু সত্যিকার অর্থে বাংলাদেশের মতো দেশের জন্য বিশ্বায়নে ক্ষতির চেয়ে লাভ অনেক বেশী।

দেশে এখন যে রকম অস্থিরতা চলছে একটা পরিবর্তন আসন্ন মনে হয়, ঠিক কিভাবে আর কোন দিকে হবে বলা মুস্কিল। আসলে দেশের মানুষ যেমন শাসকরা তার চেয়ে খুব কি ভিন্ন হওয়ার উপায় আছে, যে দলই আসুক, বা সমরতন্ত্র আসলেও ঘুরে ফিরে সেই একই অবস্থা থাকবে। এর একটা কারন মনে হয় বিশ্ব গতি প্রকূতি আমরা বুঝতে চাই না বা বোঝার মতো চেষ্টাও নেই। ইদানিং একটা ভুল ধারনা আমাদের “মাইরের ওপর ওষুধ নাই“, শক্ত হাতে শাসন করলেই বুঝি সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে। আরও অনেক দেশ এরকম একতরফা সমাধানের চেষ্টা করেছে (উদাহরন পাকিস্তান, সুদান, লিবিয়া) এখনও সফল হয় নাই, হওয়ার সম্ভবনাও কম। অন্যদিকে আপাত দূষ্টিতে সমস্যা সংকুল শপঢ়ঢ়ী নপশসধড়থধী ভারতের প্রবূদ্ধির হার এখন ১০ ছুই ছুই, অথচ ৫০/৬০ এর দশকে সুবিধাজনক অবস্থানে থেকেও পাকিস্তান প্রতি বছর পিছিয়ে পড়ছে। এমনকি বাংলাদেশের প্রবূদ্ধির হার বনাম মুল্যস্ফীতি পাকিস্তানের চেয়ে বেশ ভালো, যদিও দেশে কয়েক বছর ধরেই আমাদের দেশে রাজনৈতিক অস্থিরতা হরতাল ধর্মঘট লেগে আছে। ভারত বলতে মার্কিনীরা এখন ভাবে হাইটেক সেন্টার আর পাকিস্তান শুনলে ভাবে টেররিýট। ঠিক কি কারনে ভারত এবং চীনের এত শনৈ: শনৈ: উন্নতি হচ্ছে এর একটু গভীরে আমাদের যাওয়া দরকার এবং আমরা ঠিক কিভাবে এই পরিস্থিতির সর্বোচ্চ ব্যবহার করতে পারি সেটাও বোঝা দরকার। আমার মনে হয় জনসাধারনের মধ্যে আমাদের এই তথ্যগুলো ছড়িয়ে দেয়ার যথেষ্ট প্রয়োজনীয়তা আছে, কেবল নীতিনির্ধারক ছাড়াও ছোটখাট ব্যবসায়ী, ছাত্রদের বিশ্বয়ানের সুযোগ নেয়ার সমূহ সম্ভাবনা আছে, কেবল না জানা বা ভুল ধারনার জন্য এসব সুযোগ আমরা হারাচ্ছি।

যাহোক বিশ্বায়নে ফিরে আসি। যদি জানতে চাই গনতন্ত্রের সাথে রাজতন্ত্রের পার্থক্য কোথায়। সহজ কথায় উত্তর হবে গনতন্ত্রে সবাই সমান, অন্যদিকে রাজতন্ত্রে রাজা-উজিরদের অধিকার বেশী, অন্যদের কম। বিশ্বায়নকে ধরা যেতে পারে বিশ্ব অর্থনীতির গনতন্ত্রায়ন। কিভাবে? মুক্তবাজার অর্থনীতি এবং বিশ্বায়ন প্রক্রিয়া ব্যপকভাবে শুরুর আগে বিশ্বের ধনী দেশগুলোর লোকজন কেবল ধনী দেশে জন্মানোর সৌভাগ্যে অনেক সুবিধা পেত। ধনী দেশগুলো পন্য তৈরী করে গরীব দেশে বিক্রী করতে পারত। মনে আছে? আমাদের দেশে একসময় নিক্সন মার্কেট ছিল, আমরা নিজেরাও অনেক বিদেশে তৈরী জামা/কাপড় কিনে পড়তাম। কিন্তু এখন জামা কাপড় কোথায় তৈরী হয়- আমাদের দেশের গার্মেন্টসে তৈরী পোশাক এখন উলটো দিকে যাচ্ছে। ৭০/৮০-এর দশক থেকে ৯০ দশক এবং তার পরে পোশাকের এই উলটো প্রবাহ আসলে সম্ভব হয়েছে বিশ্বায়নের কারনে। যদি এমন হতো যুক্তরাষ্ট্র অস্বাভাবিক পরিমান শুল্ক রাখত বাংলাদেশে তৈরী পোশাকের ওপরে তাহলে যুক্তরাষ্টে্র বাংলাদেশের তৈরী পোশাক রপ্তানী করা যেত না। অন্যদিকে আমরা যদি উন্নতবিশ্ব থেকে যন্ত্রপাতি এবং প্রযুক্তি আমদানী না করতে পারতাম তাহলে এত গার্মেন্টস কারখানা দেয়াও সম্ভব হতো না। এখন বাংলাদেশে তৈরী পোশাকের যতটুকু অধিকার যুক্তরাষ্টে্রর বাজারে ততটুকুই অধিকার চীনের পোশাকের, আবার ততটুকুই ফ্রাËëসর পোশাকের। কোন দেশ থেকে এসেছে তার গুরুত্বের চেয়ে মানের গুরুত্ব বেশী। এটাই হচ্ছে গনতন্ত্রায়ন। বাংলাদেশের শুধু পোশাক নয়, এবং বাংলাদেশী ইঞ্জিনিয়ার আর একজন মার্কিন ইঞ্জিনিয়ারের সমান গুরুত্ব মালটি ন্যাশনাল কম্পানী গুলো কাছে। যে দক্ষ তাকেই ওরা চাকরী দেবে, তা যে দেশ থেকেই আসুক না কেন। এই পরিস্থিতি ২০ বছর আগে ছিল না, ৫০ বছর আগে কল্পনাও করা যেত না। হাইটেক কম্পানী যেমন ইনটেল, এইচপি , মাইক্রোসফট বা আই বি এম এ পাচবছর আগের চেয়ে এখন পাচগুন বেশী বাংলাদেশী চাকরী করে।

তো রাজতন্ত্রে থেকে গনতন্ত্রে উত্তরনে কে হারে আর কে জেতে। রাজাউজিরদের লোকসান সবচেয়ে বেশী, আর একদম সাধারন জনগনের লাভ তুলনামুলক ভাবে বেশী। বিশ্বায়নেও মোটামুটি তাই, দরিদ্্রদেশ হিসেবে বাংলাদেশ হারাবে কম, কিন্তু ঠিকমতো (যেমন ভারত বা চীন করছে) কাজে লাগাতে পারলে লাভ বেশী। অন্যদিকে বিশ্বায়নে শেষমেশ অবস্থান হারাবে উন্নত বিশ্ব, বিশেষ করে যেসব দেশে জনসংখ্যা কম। ফি্রডম্যান গত কয়েক বছরের পরিবর্তনকে বলেছেন বিশ্বায়ন ভার্সন ৩.০। চমত্কার কিছু উদাহরন দিয়েছেন তার তত্ত্বের ওপর, এ নিয়ে এবং আমাদের কি কি মানসিকতা বদলানো দরকার তার ওপর পরের পর্বে আরো লিখব।


Original post - http://www.somewhereinblog.net/utsablog/post/20340

Saturday, September 23, 2006

ইরোটিকা এবং পর্নোগ্রাফি

লিখতে দেরী হয়ে গেল, ব্লগের গত সপ্তাহের উদ্দাম ভাবটা কেটে গেছে, তবুও ...। পর্নোগ্রাফি- অশ্লীল সাহিত্য, ছবি, সিনেমা ইত্যাদির অবাধ প্রসারকে অনেক সময় আমরা আধুনিক পাশ্চাত্য সভ্যতার অংশ বলে মনে করি। বলাবাহুল্য আমাদের মধ্যে এই ধারনাটা বেশ প্রবল যে কয়েক প্রজন্ম আগেও আমাদের সমাজে অশ্লীলতার প্রকোপ কম ছিল, পশ্চিমের সং¯úর্শে আমাদের মুল্যবোধ উচ্ছন্নে যেতে বসেছে। কিন্তু আসলেই কি তাই।


ইরোটিকা, পর্নোগ্রাফি কোনটাই আধুনিক সভ্যতার আবিষ্কার নয়। মানুষের রাজনৈতিক ইতিহাসের বহু আগে থেকে এদের অস্তিত্ব আছে। প্যালিওলিথিক যুগের (পুরোনো প্রস্তর যুগ) বহু গুহাচিত্র (cave painting), ভাষ্কর্যে নগ্নতার ছাপ আছে । সময়ের সাথে সাথে মানুষের প্রযুক্তির যত উন্নতি হতে থাকে মানুষ ততই বিভিন্ন মাধ্যমে ইরোটিকার চর্চা করতে থাকে। মোটামুটি খৃষ্টপুর্ব ৪০০০ অব্দ থেকে পৃথিবীর বিভিন্ন স্থানের আলাদা আলাদা সভ্যতায় আলাদা ভাবে মানুষ যেখানে যেভাবে পেরেছে সেভাবে অশ্লীল ছবি, সিরামিক pottery, কাঠের ভাষ্কর্য্য, প্রস্তর মুর্তি, প্যাপিরাসে লেখা বই, ষ্কেচবুক, নাটক, গল্প, কবিতা, গান, কাব্য রেখে গেছে। গ্রীক এবং রোমান সভ্যতায় ইরোটিকাকে গ্রহনযোগ্যতার দৃষ্টিতে দেখা হতো। ১৮৬০-এ যখন পম্পেই এর excavation চলছিল তখনকার ভিক্টোরিয়ান যুগের প্রত্নতাত্ত্বিকরা রীতিমতো শকড হয়েছিলেন রোমানদের ইরোটিক আর্ট দেখে। অনেকদিন পর্যন্ত এসব চিত্রকর্ম এবং ভাষ্কর্য্য গোপন জাদুঘরে লুকিয়ে রাখা হয়েছিল যেন সাধারন মানুষ দেখতে না পারে। যদিও মিশরীয়, গ্রীক বা রোমান সভ্যতায় অশ্লীল ছবি/সাহিত্যের ওপর বিশেষ কোন নিষেধাজ্ঞা ছিল না, ধর্মের প্রভাব বাড়ার সাথে সাথে মধ্যযুগে এগুলোর ওপর বিধি নিষেধের খড়গ পড়তে থাকে। তাই বলে অবশ্য এদের চর্চা থেমে থাকেনি, তবে অনেকটাই সীমিত ছিল সমাজের গন্যমান্য, রাজা বাদশাহদের মধ্যে। মুসলিম সামªাজ্য গুলোতে হারেমে যেŠনতার ব্যপক চর্চা হলেও কেবল সামাজিক/রাজনৈতিকভাবে প্রতিষ্ঠিতদের সে সুযোগ ছিল (ছবি-১)।



প্রিন্টিং প্রেসের আবিষ্কারের পর্নোগ্রাফী প্রথমবারের মতো ব্যপক প্রচারের সুযোগ পায়। এরমক প্রথম ষ্ক্যান্ডালটি ছিল ১৫২৪ সালে Pietro Aretino এবং Marcantonio Raimondi র বের করা I modi বইটি (মুলত ১৬টি sexual position এর ছবির বই)। অষ্টাদশ শতাব্দিতে ফরাসি মুক্তচিন্তাবিদরা পর্নোগ্রাফিকে সমাজ, চার্চ এবং রাষ্টªতন্ত্রের বিরুদ্ধে ব্যবহার করা শুরু করেন। স্বভাবতই তখনকার (এবং অনেক পশ্চাত্মুখী দেশে এখনও) শাসক শেªনী এতে ভয় পেয়ে যেতে থাকে। উনবিংশ শতাব্দিতে ফটোগ্রাফি আসার সাথে সাথে পর্ন এই মাধ্যমটিকে লুফে নেয়। ১৮৮০ তে হাফটোন প্রিন্টিং শুরু হলে ইরোটিকা প্রকাশ নতুন মাত্রা পেয়ে যায়। পর্নোগ্রাফিক চলচ্চিত্র, সাধারন চলচ্চিত্রের প্রায় সমান পুরোনো, Eugene Pirou, Albert Kirchner সবচেয়ে প্রথম সিনেমাতে পর্ন ধারা প্রতিষ্ঠা করেন। এর পরে যতগুলো নতুন টেকনোলোজি আবিষ্কার পর্ন খুব দ্রুত তাতে আতি¥করন করেছে, ৮মিমি এবং সুপার-৮ ফিল¥ বের হলে অ¨ামেচার সিনেমা সেই সাথে পর্ন মুভি আরো বেড়ে যায়। আশির দশকে সংযোজন হয় ভিসিআর, মানুষ বাসায় বসেই পর্ন মুভি দেখার সুযোগ পায়।



সবশেষে বোধ হয় ইন্টারনেট, ইনফরমেশন সুপার হাইওয়ে যে তথ্য ট্রান্সফার করে তার একটা বড় অংশ অশ্লীলতা, নগ্নতা সংক্রান্ত। ইন্টারনেটের কারনে পর্ন এত সহজলভ্য এবং সস্তা যে পর্নের নিষিদ্ধ আকর্ষন অনেকটাই হারাতে বসেছে। স্বাভাবিক প্রশ্ন জাগে অশ্লীলতার এই ব্যপকতা আমাদের জন্য ভালো না খারাপ। প্রকাশ্য ফোরামে আমাদের বেশীরভাগই অবশ্য একপেশে মন্তব্যে ঝাপিয়ে পড়ব, একই সময় হয়তো বªাউজারে অন্য ট্যাবে/উইন্ডোতে পর্ন ডাউনলোড চলছে। যেহেতু দেখতে পাচ্ছি পর্ন ইরোটিকা এরা সভ্যতার চেয়েও পুরোনো, বহু আগে থেকেই আমাদের সাথে আছে, সুতরাং দ্বিচারিতাপ্রবন স্বিদ্ধান্ত নেয়ার আগে আরেকটু ভাবা উচিত।



গত এক দশকে পর্ন এবং সমাজে তার প্রভাব নিয়ে অনেক স্টাডি করা হয়েছে। আশ্চর্য্যজনকভাবে এদের ফলাফল বলে যে পর্ন বা ইরোটিকার চর্চা সমাজে যেŠন অপরাধ কমাতে সাহায্য করে। ষ্ক্যান্ডিনেভিয়া এবং পশ্চিম ইউরোপের দেশ পর্নের ব্যাপারে সবচেয়ে উন্মুক্ত এবং এই দেশগুলোতেই যেŠন অপরাধ সবচেয়ে কম। যারা মাঝে মধ্যে পর্ন দেখে তাদের ওপর গবেষনা করে দেখা যায় এসব দর্শকরা সেক্স নিয়ে কম আগ্রাসী মনোভাবে আক্রান্ত থাকে (Thompson, 1994)। মজার ব্যাপার হচ্ছে ইন্টারনেটে "sex" শব্দটা সবচেয়ে বেশী সার্চ হয় পাকিস্তান থেকে, আর প্রথম দশটি দেশের আটটিই মুসলিম (ক্রমানুসারে পাকিস্তান, মিশর, ভিয়েতনাম, ইরান, মরোককো, ইন্দোনেশিয়া, ভারত, সোদি আরব, তুরষ্ক, মালয়শিয়া)। ভাগ্য ভালো বাংলাদেশ নেই।



তো কথা হচ্ছে সমাজ, রাষ্টª, বিশেষ করে কিছু ধর্ম অশ্লীলতাকে এত বাধা দেয় কেন। আগ্রহ বাড়ানো যদি বাধা দেয়ার উদ্দ্যেশ্য হয় তাহলে অবশ্য অন্য কথা। অনেক সময় ছোট ভাইবোনের অজুহাত এসে যায়, আচ্ছা অশ্লীল ছবি দেখে বা লেখা পড়ে কি বড়রা বখে যেতে পারে না? বড়দের জন্য আমার একটাই উপদেশ practice what you preach। একসময় সমাজের উপরতলার মানুষ সাধারনের মধ্যে পর্ন নিষিদ্ধ করেছিল, কারন তাদের ধারনা ছিল সাধারন এগুলো দেখে বা পড়ে রাষ্টªীয় এবং সামাজিক প্রতিষ্ঠানের ওপর বিশ্বাস হারিয়ে ফেলবে, অথবা বৃত্তের বাইরে চিন্তা করতে শিখে যাবে। দুঃখজনক যে এই বৃত্তবন্দি করার চেষ্টা আজও শেষ হয়েও যেন শেষ হচ্ছে না।



পাঠকদের কাছে প্রশ্ন erotica যথাযথ বাংলা শব্দার্থ কি?

Friday, September 22, 2006

দিনকাল.১ (থাইল্যান্ডে ক্যু, শাবিতে মারধর)

বেশ ব্যস্ততার মধ্যে সময় যাচ্ছে। হাওয়া পরিবর্তনে গিয়েছিলাম এসে বেশ কাজের চাপ, ঘরে-বাইরে। যেসব নিয়ে লিখব লিখব ভাবি গুছিয়ে ওঠা হচ্ছে না, আবার নিয়মিত লিখতেও চাই, হয়তো ইনভেস্টমেন্ট কোনদিন কাজে লাগতে পারে, অথবা উলটোটা - লেখা আর মন্তব্যে অলক্ষ্যেই হয়তো বিপদজনক শত্রু তৈরী হচ্ছে। যাহোক সা¤প্রতিক ঘটনা নিয়ে ধারাবাহিক লিখতে চাই, ভয় নাই ফ্লাডিং করব না, আসলে চায়ের টেবিলের আলোচনা করতে ইচ্ছা হয়, বাস্তবে সেরকম সুযোগ না থাকায় দেখি ব্লগেই কতটা করা যায়।


থাইল্যান্ডে ক্যু
কয়েকমাস ধরেই থাইল্যান্ডে সমস্যা চলছিল, বিরোধিদলের অনুপস্থিতিতে গত এপ্রিল-মে তে ইলেকশনের পর থেকেই অস্থিরতা চলছে। প্রধানমন্ত্রী থাকসিনের বিরুদ্ধে দুর্ণীতির বেশ অভিযোগ আছে। কে জানে সেনাবাহিনী কতদিন ক্ষমতায় থাকবে। রাজার সমর্থনও থাকতে পারে। বাংলাদেশের পরিস্থিতির সাথে হয়তো পার্থক্য আছে আবার মিলও আছে। থাইল্যান্ডের খবর পড়তে পড়তে দেশের জন্য বেশ চিন্তা হচ্ছিল। থাই মুদ্রা বাহটের মুল্য বেশ পড়ে গেছে দেখা যায়। সেনাশাসন এলে অর্থনীতি খারাপের দিকে যাওয়ার সম্ভাবনা আছে, বিশেষ করে বহির্বিশ্ব বিনিয়োগের ব্যাপারে পিছিয়ে যাবে। বাংলাদেশের পরবর্তি কয়েকটা মাস খুব গুরুত্বপুর্ন।


শাবিতে মারধর
পত্রিকার খবরে দেখা যাচ্ছে মারামারি ছাত্রদের মধ্যে না থেকে ছাত্র বনাম শিক্ষক হয়ে যাচ্ছে। একজন শিক্ষক দেখা যাচ্ছে ছোট ভাই, ভাতিজা নিয়ে ছাত্রদের আক্রমন করেছে। এসব উদাহরন তৈরী করা দুঃখজনক, মুল্যবোধের অবক্ষয়ের জন্য রাজনীতিবিদদের ওপর দোষ চাপাই, দেখা যাচ্ছে শিক্ষকরা মোটেও পিছিয়ে নেই। বলা মুষ্কিল এসব করে ঠিক কার লাভ হচ্ছে।


আমার জন্য সপ্তাহের আরেকটা খারাপ খবর টাকার বিপরীতে ডলারের মুল্য পড়ে যাওয়া। ভালোই তো চলছিল, কিন্তু প্রবাসীরা বোধ হয় একটু বেশী টাকা পাঠাচ্ছে, এখন রমজান মাসের মুল্যবৃদ্ধি ভরসা।


প্রথম আলোতে জাফর ইকবাল আর আনিসুল হকের লেখা পড়লাম। জানিনা এসব লেখায় আদৌ কোন কাজ হয় কি না। তবে আনিসুল হকের ভবিষ্যত্ বানী নিয়ে সন্দেহ আছে। মনে আছে বিশ্নকাপের সময় তার ভবিষ্যদ্বানী একটাও মিলে নাই। আচ্ছা যারা আনিসুল হকে চিনেন (যেমন অমি ভাই) ওনাদেরকে ব্লগে লেখার অনুরোধ করা যায়?

Saturday, September 16, 2006

নিয়ান্ডারটাল এবং জেনেটিক্স

মাঝে মাঝে ভাবি যদি এমন হতো আমরা এখন মানুষের আরেকটা জীবন্ত প্রজাতি আবিষ্কার করে বসি তাহলে আমাদের প্রতিক্রিয়া কি হবে । আমরা কি ওদেরকে দাস বানাবো, চিড়িয়াখানায় বন্দি করে রাখবো না কি সুলতান মাহমুদের সৈন্যদের মতো গনিমতের মাল হিসেবে ওদের মেয়েদেরকে ধর্ষন করবো (একটু বেশী হয়ে গেল, তবে ইতিহাসে বারবার এমন হয়েছে)। আগের লেখায় বলেছি নিয়ান্ডারটালদের সবচেয়ে আধুনিক ফসিল অন্তত ২৫ হাজার বছরের পুরোনো। আসলে ওরা বরফযুগের শীতল আবহাওয়ার জন্য বেশী উপযোগী ছিল, বরফ যুগ শেষ হওয়ার সাথে সাথে ওদের সুযোগও সীমিত হতে থাকে, তার ওপর ততদিনে আধুনিক মানুষ আফ্রিকা থেকে বের হয়ে ইউরোপ এবং মধ্য এশিয়ায় বসতি স্থাপন শুরু করেছে। একটা সায়েন্স ফিকশন ধরনের কল্পনা করা যেতে পারে, যে নিয়ান্ডারটালরা এখনও সাবআর্কটিক পরিবেশে টিকে আছে (প্রায় অসম্ভব যদিও)।বিগ ফুট, ইয়েটি কে জানে আসলে হয়তো নিয়ান্ডারটাল।

যাহোক ফিকশনে সময় নষ্ট করার মানে হয় না, ফ্যাক্টে ফিরে আসি। একদল বিজ্ঞানীরা মনে করতেন (বা করেন) নিয়ান্ডারটালরা সম্পুর্ন বিলুপ্ত হয় নি বরং আধুনিক ইউরোপীয়ানরা আসলে তাদের এবং ক্রোমা¨নিয়নদের উত্তরপুরুষ। ৭০ এর দশকে এ ধারার থিওরী এতই শক্তিশালী ছিল যে নিয়ান্ডারটালের নতুন বৈজ্ঞানিক নামকরন করা হয়। পরবর্তিতে নিয়ান্ডারটাল ডিএনএ বিশ্লেষন করার পরে নিয়ান্ডারটালদের সাথে বর্তমান মানুষের সম্পর্ক পরিষ্কার হতে থাকে। গত দশ বছরে অনেকবার আলাদা ভাবে মানুষের এবং নিয়ান্ডারটাল মাইটোকন্ড্রিয়াল ডিএনএ তুলনা করা হয়েছে। যেমন একটি ক্ষেত্রে ৩৭৮ ইউনিট ডিএনএ স্ট্র্যান্ড নিয়ে গবেষনায় নিয়ান্ডারটালদের সাথে আমাদের পার্থক্য ২৭ টি স্থানে, শিম্পাঞ্জীর সাথে ৫৫টি স্থানে, আর মানুষের নিজেদের মধ্যে সর্বোচ্চ ৮টি স্থানে। এতে মনে হয় নিয়ান্ডারটালদের সাথে আমাদের সম্পর্ক বেশ দুরের। এমনকি নিয়ান্ডারটালদের সমসাময়িক ৪৫,০০০ বছরের পুরোনো অস্ট্রেলিয়ান আধুনিক মানুষের ফসিলের সাথে তুলনা করলে দেখা যায় অস্ট্রেলিয়ান ফসিলের সাথে বর্তমান জীবিত মানুষের পার্থক্য সামান্যই অথচ নিয়ান্ডারটালদের সাথে এই প্রাচীন অস্ট্রেনিয়ানদেরও যথেষ্ট পার্থক্য আছে।

জেনেটিক বিন্যাসের তুলনা করলে বোঝা যায়, শিম্পাঞ্জী এবং মানুষের পুর্বপুরুষ অন্তত ৫০ লাখ বছর আগে আলাদা হয়ে গিয়েছে। অন্যদিকে নিয়ান্ডারটাল এবং আধুনিক মানুষ আলাদা হয়েছে ৬ থেকে৭ লাখ বছর আগে। ওভারঅল ছবিটা দাড়াচ্ছে এরকম, ১৭-২০ লাখ বছর আগে হোমো ইরেকটাস (পরে কোন লেখায় এ প্রসঙ্গে লিখব) আফ্রিকা থেকে বের হয়ে এশিয়া-ইউরোপে ছড়িয়ে পড়ে, পরবর্তিতে এদের থেকেই পিকিং মানুষ, জাভা মানুষদের বিবর্তন ঘটেছে। ৭-৮ লাখ বছর আগে আরো একটা দল আফ্রিকা থেকে বের হয়েছে, তাদের থেকে নিয়ান্ডারটাল এবং এরকম আরো কিছু মানুষের বিবর্তন হয়েছে। অন্যদিকে যেসব হোমো ইরেকটাস আফ্রিকায় থেকে গিয়েছিল তাদের থেকে হোমো স্যাপিয়েন্সের উত্পত্তি ঘটেছে। এদের একটা ধারা আধুনিক মানুষ, যারা অনেক পরে ৬০-৯০ হাজার বছর আগে আবার আফ্রিকা থেকে বের হয়ে এশিয়া ইউরোপে ছড়িয়ে পড়েছে। ঠিক কি কারনে আধুনিক মানুষের আবির্ভাবের সাথে সাথে পুরোনো archaic মানুষেরা (যেমন পিকিং মানুষ বা নিয়ান্ডারটাল) বিলুপ্ত হয়ে গেল তার কারন পুরোপুরি পরিষ্কার নয়। হয়তো আমাদের পুর্বপুরুষরা গনহত্যা চালিয়েছে, অথবা হোমো ইরেকটাসরা স্রেফ প্রতিযোগীতায় সুবিধা করতে পারে নি। কে আধুনিক আর কে পুরোনো বোঝার একটা উপায় হচ্ছে আমাদের থুতনী এবং কপাল, আধুনিক মানুষের থুতনী সামনের দিকে বাড়ানো এবং কপাল খাড়া, অন্যদিকে নিয়ান্ডারটাল বা হোমো ইরেকটাসদের ক্ষেত্রে ওরা থুতনী বিহীন, এবং ঢালু কপাল (ছবি দ্রঃ)।

নিয়ান্ডারটাল আলাদা প্রজাতি হলেও কিছু সীমিত ক্ষেত্রে বোধ হয় ক্রোম্যানিয়নদের (আধুনিক মানুষ) সাথে ওদের মিশªন ঘটে থাকতেও পারে। কয়েকবছর আগে পর্তুগালে পাওয়া ২৪ হাজার বছর আগের এক কিশোরের কঙ্কাল দেখে মনে হয় তার মধ্যে নিয়ান্ডারটাল এবং আধুনিক মানুষ দুই বৈশিষ্ট্যই আছে। যদিও এ নিয়ে বিতর্ক আছে, তবুও মনে হয় নিয়ান্ডারটালদের অনেক রহস্য এখনও জানা বাকি।

ডিসকভারী চ্যানেলে (অথবা চ্যানেল ফোর) এ নিয়ান্ডারটাল নিয়ে চমত্কার একটা ডকুমেন্টারী আছে (
এখানে পাবেন)। যদিও ডªামাটাইজেশন, কিন্তু আগ্রহী হলে বেশ ভালো লাগবে।

Thursday, September 14, 2006

নিয়ান্ডারটাল রহস্য


আচ্ছা যদি আমি জানতে চাই গরু এবং ভেড়ার মিলন ঘটালে কি কোন প্রানীর জন্ম হবে, যদি না হয় তার কারন কি? এরকম অনেক উপলব্ধি আমাদের মধ্যে স্বতঃসিদ্ধের মতো আছে যে, দুটি সম্পুর্ন ভিন্ন প্রানীর মিলনে সন্তান তৈরী হয় না । অন্যদিকে পৃথিবীর যে কোন অঞ্চলের মানুষ, অন্য যে কোন অঞ্চলের মানুষের সাথে মিলিত হয়ে সন্তান জন্ম দিতে পারে, তা চেহারা-গঠনে আমাদের যত পার্থক্যই থাকুক না কেন। এর কারন সমস্ত মানুষ এখনও এক প্রজাতির অংশ, আর আমাদের প্রজাতির ( Homo sapiens sapiens) বয়সও খুব কম, আমি আগের একটি লেখায় উল্লেখ করেছিলাম জেনেটিক্স থেকে প্রমান করা যায় আমাদের প্রজাতির বয়স দেড় লাখ বছরের মতো। তবে পৃথিবী সবসময়ই এমন ছিল না, মানুষের যে মাত্র একটি প্রজাতি সবসময় ছিল তা-ও না, আসলে কয়েক হাজার বছর আগেও মানুষের অন্য প্রজাতি বেচে ছিল (যেমন এবু গোগো)। মানুষের অন্য প্রজাতি মানে দাড়াচ্ছে তাদের সাথে আমাদের মিলন ঘটিয়ে সন্তান জন্ম দেয়া কঠিন বা অসম্ভব, কারন তাদের সাথে আমাদের জেনেটিক পার্থক্য যথেষ্ট বেশী। এই অন্য মানুষদের মধ্যে সবচেয়ে বিখ্যাত মনে হয় নিয়ান্ডারটাল মানুষ (জার্মান উচ্চারন ঠিক কেমন হবে আমি নিশ্চিত নই, বানান এরকম - Neanderthal or Neandertal)।

উনবিংশ শতাব্দির মধ্যভাগে জার্মানীর নিয়ান্ডার ভ্যালীতে প্রথম এ ধরনের মানুষের ফসিল আবিষ্কৃত হয়। যেহেতু নিয়ান্ডারটালদের বেশীরভাগ ফসিল ইউরোপে পাওয়া গেছে একসময় মনে করা হতো এরা হয়তো আধুনিক ইউরোপীয়ানদের পুর্বপুরুষ। ভালোমতো পরীক্ষা করলে অবশ্য বোঝা যায় নিয়ান্ডারটাল হাড়গোড়ের (কঙ্কালের) সাথে আধুনিক মানুষের কঙ্কালের গুরুত্বপুন পার্থক্য আছে। নিয়ান্ডারটালরা খর্বাকৃতির (পুরুষ গড়-৫'৫'' মেয়ে গড়-৫'২"), Barrel-shaped rib cage, পেশীবহুল গঠনের মানুষ (ছবি দ্রঃ)। নিয়ান্ডারটাল শারিরীক গঠন তখনকার বরফযুগের ইউরোপের আবহাওয়ার জন্য খুবই উপযোগী ছিল। ‡¯úন থেকে শুরু করে পুরো ইউরোপ, মধ্য এশিয়া এবং মধ্য প্রাচ্যে এদের ফসিল পাওয়া গেছে। পাচ-ছয় লাখ বছর আগে থেকে শুরু করে মাত্র ৩০ হাজার বছর আগেও নিয়ান্ডারটালরা পৃথিবীতে ছিল।

বেশীরফাগ ফসিলই পাওয়া গেছে বিভিন্ন গুহায়, এসব ফসিলের সাথে তখনকার আরো অনেক প্রানীর ফসিলও (যেমন বল্গা হরিন, ম্যামথ, আর্কটিক শেয়াল, বাইসন) পাওয়া গেছে। গুহার পরিস্থিতি দেখে মনে হয় ওরা সম্ভবত মৃতকে কবর দিত, আবার অনেক সময় আহত/অসুস্থদেরকে বহুদিন সেবা যত্ন করত (কিভাবে বোঝা গেল? - অনেক নিয়ান্ডারটাল হাড়ে দেখা যাচ্ছে মারাত¥ক ইনজুরীর পর সেটা আস্তে আস্তে ভালো হয়ে গিয়েছে, এত বড় আঘাতের পর বেচে থাকা তখনই সম্ভব যখন দলের অন্যরা সাহায্য করবে ইত্যাদি)। ক›ঠনালীর গড়ন থেকে মনে হয় নিয়ান্ডারটালরা মানুষের মতোই শব্দ করতে পারত, খুব সম্ভব ভাষাও (প্রিমিটিভ হতে পারে) ছিল তাদের। তবে বেশীরভাগ নিয়ান্ডারটালের কঙ্কালে এত ইনজুরীর ছাপ যে মনে হয় ওদের জীবনযাত্রা বেশ ভয়ঙ্কর ছিল। এর আরো প্রমান খাদ্যাভ্যাস বিশ্লেষন করলে, কার্বন-১৩, এবং নাইট্রোজেন-১৫ আইসোটোপের ওপর ভিত্তি করে ফসিল হাড় থেকে প্রানীটি কি খেয়ে থাকত তা মোটামুটি বোঝা যায়। নিয়ান্ডারটালরা পুরোপুরি মাংশাসী প্রানী ছিল, এবং তাদের টার্গেট ছিল বড় বড় জীবজন্তু যেমন ম্যামথ ( বরফযুগের অতিকায় হাতি, এখন বিলুপ্ত), বাইসন, বল্গা হরিন ইত্যাদি। আর প্রানী শিকারের হাতিয়ার ছিল মুলত বর্শা, পাথরের তৈরী কুড়াল। ওরা তীর ধনুক বা এধরনের দুর থেকে ছোড়া যায় এমন হাতিয়ার আবিষ্কার করতে পারে নি। একারনে স্বাভাবিক ভাবেই শিকারের খুব কাছে থেকে আক্রমন করতে হতো, যেটা হয়তো ইনজুরীর একটা বড় কারন।

নিয়ান্ডারটালরা কেন বিলুপ্ত হয়েছে, তার কারন এখনও অনেকটা বিতর্কিত। তবে তাদের তিরোধানের সাথে ইউরোপে আধুনিক মানুষের পদার্পনের একটা সম্পর্ক আছে বলেই মনে হয়। আধুনিক মানুষ ৫০-৬০ হাজার বছর আগে (আরো আছে এই
লেখায় আফ্রিকা থেকে মধ্য প্রাচ্য হয়ে ইউরোপে ছড়িয়ে পড়তে থাকে। ইউরোপে আধুনিক মানুষের এই ধারাকে বলা হয় ক্রোম্যানিয়ন (Cro-Magnon), তো এদের সাথে নিয়ান্ডারটালদের কয়েকটা গুরুত্বপুর্ন পার্থক্য ছিল - ক্রোম্যানিয়নরা উন্নত মানের হাতিয়ার তৈরী করতে পারত এবং শিকার করা প্রানীর হাড়গোড় থেকেই হাতিয়ার বানাতো (নিয়ান্ডারটাল মুলত পাথর আর কাঠের ওপর নির্ভরশীল ছিল), ক্রোম্যানিয়নরা সামাজিক ভাবে অনেক সংগঠিত ছিল। তবে সবচেয়ে গুরুত্বপুর্ন বোধ হয় ক্রোম্যানিয়নদের মধ্যে শিল্পকলার উপস্থিতি। কিন্তু শিল্পকলা কেন? কারন শিল্পের সাথে সৃজনশীলতা জড়িত, ক্রোম্যানিয়ন ক্রমাগত তাদের হাতিয়ারের উন্নতি করেছে, অন্যদিকে নিয়ান্ডারটাল লাখো বছরেও একই হাতিয়ার ব্যবহার করে চলছিল। সম্ভবত এই কারনে নিয়ান্ডারটালরা ক্রোম্যানিয়ন দের সাথে পেরে ওঠেনি। তবে বিলুপ্ত হওয়ার আগে ১০-২০ হাজার বছর ক্রোম্যানিয়ন এবং নিয়ান্ডারটালরা পাশাপাশি থেকেছে। শেষের দিকে নিয়ান্ডারটালরা অনেক কিছু ক্রোম্যানিয়ন দের কাছ থেকে নকল করা শুরু করেছিল, তবে ততদিনে অনেক দেরী হয়ে গিয়েছে।

আগামী পর্বে সমাপ্য - জেনেটিক্স ও নিয়ান্ডারটাল
eXTReMe Tracker