Friday, August 11, 2006

পরকীয়াঃ বৈধ না অবৈধ?


মানব সমাজে পরকীয়ার অবস্থান নিষিদ্ধের কাছাকাছি, অনেক দেশে (যেমন মধ্যপ্রাচ্যে) পরকীয়া/ব্যাভিচার আইনত দন্ডনীয় (অবস্থা বিশেষে গুরুতর শাস্তিযোগ্য অপরাধ), পশ্চিমে অনেক দেশে পরকীয়ার বিরুদ্ধে আইন থাকলেও হালে কমই প্রয়োগ হয়, তবে নৈতিকভাবে এখনও অপরাধ হিসেবে দেখা হয়। যাহোক নৈতিক হোক বা সামাজিক বা আইনগত হোক পরকীয়া কোন সমাজেই ভালো চোখে দেখা হয় না। আমার প্রশ্ন হচ্ছে সমর্থন না করলেও ঠিক কি কারনে আমরা পরকীয়ায় আকৃষ্ট হই।

মানুষ বাদ দিয়ে অন্যান্য প্রানীর দিকে তাকালে দেখব প্রানী সমাজে পরকীয়ার বেশ প্রচলন আছে। এমনকি প্রকৃতি পরকীয়াকে অনেক সময় উত্সাহ দিয়ে থাকে। গত কয়েক দশক ধরেই জানা ছিল যে পাখীদের একটা বড় অংশ (৯২%) scoially monogamous, মানে সামাজিক ভাবে তাদের মাত্র একজন সঙ্গী থাকে, পুরুষ এবং মেয়ে পাখী দুজনেই অনেক সময় বাসা বানায়, বাচ্চা ফোটার পর একসাথে খাবার সংগ্রহ করে। পাখীর বাচ্চা খুব দ্রুত বড় হয় এবং বেড়ে ওঠার সময় প্রচুর খাবার দাবী করে, একা মা পাখীর পক্ষে এত খাবারের ব্যাবস্থা করা সম্ভব নয়। অনেক পাখী আছে যেখানে একজোড়া ছেলে এবং মেয়ে পাখী সারা জীবনের জন্য একসাথে থাকে। স্তন্যপায়ী দের মধ্যেও বেশ কিছু প্রানী আছে যারা এরকম মনোগ্যামাস (যেমন Gibbon)। ৮০র দশকে অনেক বিজ্ঞানী গবেষনা করতে শুরু করেন যে পাখীদের এই social monogamy এবং [ইংলিশ]ংবীঁধষ সড়হড়মধসু[/ইংলিশ]-এর কোন সম্পর্ক আছে কি না। নবŸই দশকে ডিএনএ প্রযুক্তি সহজলভ্য হলে সম্পর্ক নির্ধারন আরও সহজ হয়ে যায়। এখানে পাখীদের সামাজিক মনোগ্যামি বলতে বোঝানো হয়েছে, একজোড়া পাখীর আপেক্ষিক সামাজিক বন্ধন (যেমন মানুষের ক্ষেত্রে বিয়ে), আর যৌন মনোগ্যামী বলতে পাখীদের যৌনসঙ্গী সত্যিকার অর্থে মাত্র একজনই কিনা তা বোঝানো হয়েছে। বারবার বিভিন্ন প্রজাতির পাখীর মধ্যে গবেষনা করা হলেও ফলাফল মোটামুটি একই রকম ১০% থেকে ৪০% পর্যন্ত পাখীর বাচ্চার সত্যিকার বাবা, তাদের সামাজিক ভাবে স্বীকৃত বাবা এক নয়। এই ফলাফল এমনকি বিজ্ঞানীদের কাছেও আশ্চর্যজনক।

পুরুষ পাখীরা সুযোগ পেলে পরকীয়া করে আগে থেকেই জানা ছিল, কিন্তু মেয়ে পাখীরা কেন করছে তার ব্যাখ্যা ঠিক সহজ নয়। এর কারন মেয়ে পাখী পরকীয়ায় ধরা পড়লে সঙ্গী পুরুষ পাখী সাধারনত তাকে ছেড়ে চলে যায়, এবং মেয়ে পাখীর পক্ষে একা পাখীর বাচ্চা বড় করা প্রায় অসম্ভব। সুতরাং পরকীয়ায় মেয়ে পাখীর ঝুকি অনেক বেশী। পুরুষ পাখী কেন পরকীয়ায় অধিকতর আকৃষ্ট হয় তার একটা বায়োলজিকাল কারন আছে। তবে কারনটা খোলাসা করার আগে প্রজননের উদ্দ্যেশ্যটা পরিষ্কার করা দরকার। জীব প্রজননে আগ্রহী কারন সে তার জিন (gene) পরবর্তি প্রজন্মের মধ্যে প্রবাহিত করতে চায় (অবচেতন ভাবে), কেন চায় তার সংক্ষিপ্ত ব্যাখ্যা এরকম (বিস্তারিত লিখতে গেলে মুল বিষয় থেকে দুরে সরে যাবো) - ধরা যাক কোন প্রানী সমাজে ১০০ টা প্রানীর মধ্যে ৫০ টা ছিল বংশ বিস্তারে আগ্রহী আর ৫০ টা অনাগ্রহী, স্বভাবতই অনাগ্রহীরা চেষ্টা কম করায় তাদের পরবর্তি প্রজন্মের সংখ্যা আগ্রহীদের পরবর্তি প্রজন্মের চেয়ে কম হবে, ধরা যাক এক জেনারেশন পরে আগ্রহীদের সংখ্যা বেড়ে হলো ৮০, আর অনাগ্রহীরা কমে গিয়ে ২০, এভাবে চলতে থাকলে একসময় কয়েক প্রজন্ম পরে অনাগ্রহীরা বিলুপ্ত হয়ে যাবে। বাস্তবের প্রানীজগতেও আসলে তাই আগ্রহীরাই টিকে আছে। সে যাক, বাচ্চা তৈরীতে ছেলে আর মেয়ে (পাখী) দের ভুমিকার গুরুত্বপুর্ন একটা পার্থক্য আছে, ছেলেরা তৈরী করে স্পার্ম এবং স্পার্ম অত্যন্ত স্বল্প ব্যায়ে তৈরী করা যায়, তুলনা মুলকভাবে মেয়েরা তৈরী করে ডিম, যা অত্যন্ত ব্যয়বহুল। কোন পুরুষ তার জীবদ্দশায় মিলিয়ন মিলিয়ন স্পার্ম তৈরী করলেও, মেয়ে প্রানী মাত্র গুটিকয়েক ডিম তৈরী করতে পারে। ডিমের বৃদ্ধি এবং সেখান থেকে বাচ্চা ফোটানোর জন্য মেয়ে প্রানীকে প্রচুর বিনিয়োগ করতে হয়। ছেলে-মেয়ে দুদলেরই লক্ষ্য কিভাবে নিজের পরবর্তি প্রজন্ম বাড়ানো এবং তাদের সারভাইভাল নিশ্চিত করা যায়, ছেলেরা যেহেতু অল্প খরচেই স্পার্ম বানায় তাই তাদের স্ট্র্যাটেজী থাকে কিভাবে বেশী বেশী মেয়ে প্রানীর সাথে বাচ্চা বানানো যায়, অন্য দিকে ডিমের সংখ্যা যেহেতু সীমিত এবং ব্যায়স্বাপেক্ষ মেয়ে প্রানীর স্ট্র্যাটেজী হয় দুই ধরনের (১) নির্ভরযোগ্য পুরুষ পাখী বের করা যে সন্তানদের খাদ্য সংগ্রহে সাহায্য করবে, এতে ডিম ফুটে বের হওয়া বাচ্চাদের জীবনধারন নিশ্চিত করা যাবে এবং (২) নির্ভরযোগ্য পুরুষ পাখী সবসময় আকর্ষনীয় পুরুষ পাখী নাও হতে পারে (এখানে আকর্ষনীয় বলতে বোঝানো হয়েছে যে সব বৈশিষ্ট্য জঙ্গলে পাখীর টিকে থাকাকে maximize করতে পারবে, যেমন শক্তিশালী গড়ন), সেক্ষেত্রে মেয়ে পাখী সুযোগ পেলে ঝুকি নিতে পারে, পাখী মহল্লার সবচেয়ে হ্যান্ডসাম পুরুষ পাখীর কাছ থেকে স্পার্ম নিয়ে আসতে পারে, যতক্ষন সঙ্গী পুরুষ টের না পাচ্ছে। ছেলে পাখীরাও যে চাইলেই পরকীয়া করতে পারে তা নয়, অন্য পুরুষ পাখীরা যতদুর সম্ভব বাধা দেয়া বা নিজেদের মেয়ে পাখীকে চোখে চোখে রাখার চেষ্টা করবে। এ কারনে মনোগ্যামাস পাখী সমাজে পরকীয়া বেশ প্রচলিত।

পাখী ছাড়াও অন্যান্য আপাত সামাজিক মনোগ্যামাস প্রানীদের কেউই যৌন মনোগ্যামাস নয়, গত কয়েক দশকের গবেষনায় তা প্রমানিত হয়েছে। পরকীয়ার অনেক ঝুকি আছে তবে বুঝে শুনে পরকীয়া করতে পারলে প্রকৃতি সেটা সমর্থনও করে, এবং প্রকৃতি এজন্য বোনাস incentive -এর ব্যবস্থাও রেখেছে।

মানুষ নিজে প্রানীকুল থেকে ভীষন আলাদা কিছু নয়, আমাদের মনোগ্যামির প্রধান শত্রু আমাদের বায়োলজি। আমাদের কিছু কিছু বৈশিষ্ট্য যেমন, ছেলেরা মেয়েদের চেয়ে আকারে বড়, ছেলেরা তুলনামুলক ভাবে বেশী সহিংসতাপুর্ন, ছেলেদের প্রতিযোগীতাপুর্ন মনোভাব, মেয়েদের তাড়াতাড়ি পরিপুর্ণতা লাভ এগুলো নিশ্চিতভাবেই polygynous প্রজাতির বৈশিষ্ট্য। এতে মনে হয় মানব সমাজে পরকীয়ার প্রচলন অনেক পুরোনো, লক্ষ বছরের বিবর্তনে opportunistic adultery আমাদের জেনেটিক কোডে ভালোভাবেই বাসা বেধেছে। পরকীয়া বিরোধী আইন কানুন, অনুশাসনের বহুল উপস্থিতি প্রমান করে পরকীয়া নির্মুল করা সহজ নয়। অবশ্য প্রকৃতির কাছে যৌক্তিকতা থাকাই নৈতিক বৈধতার প্রমান হিসেবে যথেষ্ট নয় ।
Original post with interesting comments - http://www.somewhereinblog.net/utsablog/post/12355

বই: দুনিয়া মাতানো বিশ্বকাপ

বইটা এখন হাতের কাছে নেই, যতদুর মনে পড়ে এর লেখকের নাম শামসুজ্জামান খান। লেখাটা প্রথমে পড়েছিলাম ধানশালিকের দেশে ম্যাগাজিনে, পরে যখন বই আকারে প্রকাশ হলো, সাথে সাথেই কিনে ফেলি। মুল বিষরবস্তু ফুটবল বিশ্বকাপ ১৯৮৬। বাসার সবার সাথে খেলাগুলো দেখলেও ফুটবল মনে দাগ কেটেছিল বইটা পড়ে। এরপরের বছরগুলোতে বইয়ের একই লেখা বারবার পড়তে ভালো লাগতো। আর্জেন্টিনা-ইংল্যান্ড কোয়ার্টার ফাইনাল, আর আর্জেন্টিনা-বেলজিয়াম সেমি ফাইনাল অনেকবার দেখেছি, এখনও ভালো লাগে। কারন বোধ হয়, “ম্যারাডোনা“। আরেকটু বড় হয়ে ৯০, ৯৪, ৯৮ বিশ্বকাপ অনেক ভালভাবে দেখেছি, ম্যাথেয়াস, ব্যাজ্জিও, কারেকা, রোমারিও, গুলিট, জিডান আর হালে রোনালডিনহোর খেলা আগ্রহ নিয়ে দেখি, কিন্তু কেউই ম্যারাডোনা নয়। বাংলায় লেখা খেলা নিয়ে ভালো বই বেশী পড়ি নি, এই বইটি সেদিক থেকে অসাধারন। অনেকবার কৌতহুল হয়েছে শামসুজ্জামান খান কি খেলা নিজে মেক্সিকো গিয়ে দেখেছিলেন, না টিভিতে দেখে লিখেছেন, লেখা পড়ে মনে হয় তিনি মেক্সিকো গিয়ে দেখেছেন।

আমি বরাবরই ন্যাচারাল ট্যালেন্টের ভক্ত, এজন্য ল্যাটিন আমেরিকার ফুটবল ভালো লাগে, আর ইউরোপিয়ান ঘরানা বিশেষ করে জার্মানীর খেলা খুবই খারাপ লাগতো। ছকে বাধা রুটিন ফুটবল অসহ্য। যদিও পুরোপুরি আর্জেন্টিনার সাপোর্টার নই, তবে ম্যারাডোনা ভক্ত, তা ব্যাক্তি জীবনে ম্যারাডোনা যেমনই হন না কেন। এবার বিশ্বকাপে আমি ব্রাজিল-আর্জেন্টিনা দুই দলেরই সাপোর্টার, তবে এরা মুখোমুখি হলে কাকে সাপোর্ট করবে এখনও ঠিক করিনি।

বইয়ে ম্যারাডোনার বাইরে ফ্রাëস ব্রাজিলের কোয়ার্টার ফাইনাল বা পুরোনো বিশ্বকাপগু লোর চমত্কার বর্ননা আছে। উত্সাহী শিশু কিশোরদের জন্য আমি রেকমেন্ড করবো।

বই - Guns, Germs and Steel

গতকাল বিকেলে ন্যাশনাল জিওগ্রাফিকের তৈরী করা চমত্কার একটা ডকুমেন্টারী দেখলাম। Prof. Jared Diamond- এর বই Guns, Germs, and Steel এর ওপর ভিত্তি করে চিত্রিত। ড. জ্যারেড তার ত্রিশ বছরের বিভিন্ন গবেষনার সুত্র ধরে উপসংহার টেনেছেন ইউরোপের গত কয়েক শতাব্দির সাফল্যের মুলে আছে ইউরোপের সুবিধাজনক ভৌগলিক অবþÿান। তবে এই উপসংহারের জন্য নয়, বরং তথ্যবহুল বিশ্লেষনের জন্য বইটি গুরুত্বপুর্ন, জ্যারেড অনেকগুলো প্রশ্নের উত্তর দেয়ার চেষ্টা করেছেন, যেমন, কূষিকাজের উদ্ভব কেন সীমিত কিছু þÿানে হলো, ধাতুর ব্যবহার কেন অনেক পুরনো সমাজ আয়ত্ব করতে পারল না, অথবা জ্ঞানের প্রসার কেন সমভাবে সব সভ্যতায় হয় নি। তবে এসব প্রশ্নের মুলে ছিল বহু বছর আগে তাকে একজন পাপুয়া নিউগিনিয়ানের করা প্রশ্ন - “শ্বেতাঙ্গরা কেন আদিবাসীদের চেয়ে ধনী“। হাতে সময় থাকলে ডিভিডি গুলো যোগাড় করে দেখতে পারেন। আরো বেশী সময় থাকলে বইটাও পড়ে দেখতে পারেন, আমি অবশ্য এখনও পড়ে শেষ করি নি।

Original post - http://www.somewhereinblog.net/utsablog/post/9759


Saturday, August 05, 2006

বেশ কিছু ছায়াছবি


গত এক মাসে অনেকগুলো মুভি দেখলাম, অনেকগুলোই গত এক বছরে মুক্তি পাওয়া। আসলে আমাদের স্থানীয় ভিডিও-র দোকান মামুলী পয়সায় দিনে ৩টা করে ছায়াছবি রেন্ট করার সুযোগ দিচ্ছে। একমাসে টার্গেট ছিল ৬০-৭০টা মুভি দেখব, শেষের দিকে খুব পরিশ্রম সাধ্য কাজ হয়ে যাচ্ছিল, মজা পাওয়া থাক দুরের কথা কবে এক মাস শেষ হবে সে অপেক্ষায় ছিলাম। তবে অনেকগুলো ভালো ছবিও দেখেছি।

সবচেয়ে ভালো লেগেছে ভুটানের পটভুমিতে নির্মিত ট্রাভেলার্স এ্যান্ড ম্যাজিশিয়ানস, সবার কাছে হয়তো এত ভালো লাগবে না, আমার কাছে কেন জানি খুব ভালো লেগেছে। ইদানিং খুব ভুটান, বার্মা , লাওস এসব দেশে বেড়াতে যেতে ইচ্ছা হয়। লোকমুখে শুনেছি মায়ানমারের শহর মান্দালয় দেখলে মনে হবে দুশ বছর পেছনে চলে এসেছি। সিনেমা হলে গিয়ে দেখলাম পাইরেটস অফ দ্য ক্যারিবিয়ান। জনি ডেপের ফ্যান নই, তবে পাইরেটস দুটোই ভালো লেগেছে। হাসির সিনেমার মধ্যে 40 years old virgin, আর ক্যাসানোভা দুর্দান্ত মনে হয়েছে। ক্যাসানোভাকে নিয়ে আগেও কার্টুন, সিনেমা দেখেছি তারপরও সিয়েনা মিলার আর হীথ লেজারের এই চিত্রায়ন ভালো লাগতে পারে। চরম ফালতু মনে হয়েছে American Pie III, Your, Mine and Ours। জেনিফার এ্যানিস্টনকে কখনই ভালো লাগে না, ফ্রেন্ডস নিয়মিত দেখেছি তারপরও ভালো লাগে না, Rumor Has It দেখেও সন্তুষ্ট হতে পারলাম না। উডি এ্যালেন কি হিন্দী সিনেমা বানানো শুরু করলো না কি, ম্যাচ পয়েন্ট দেখলে অন্তত তাই মনে হবে।

কিছু ফ্রেঞ্চ এবং চীনা সিনেমাও দেখলাম। ফ্রেঞ্চ সেমি-পর্ন অথবা R-rated মুভি আমার ভালোই লাগে। যেমন Néa: A Young Emmanuelle বা I Love You Too এখনও কাহিনী মনে আছে। এবার চীনা মুভিতে খুব একটা সুবিধা করতে পারিনি। বেশীর ভাগই মনে দাগ কাটতে পারে নি, আর ভাগ্য খারাপ ছিল ঘুরে ফিরে সবগুলোতেই দেখি Li Gongই নায়িকা। একমাত্র Memoirs of a Geisha ভালো লেগেছে।

মাঝে মাঝে মনে হয় সিনেমা শুধু দর্শন আর শ্রবনের বিষয়বস্তু না হয়ে যদি কাহিনীতে অংশ গ্রহনের সুযোগ থাকতো তাহলে খুব ভালো হতো। কেউ কি নব্বই দশকের শেষের দিকে জনি কোয়েস্ট কার্টুনটা দেখেছেন, ওখানে এরকম একটা কনসেপ্ট ছিল। তাই বলে অবশ্য পাইরেট মুভিতে অংশ নিয়ে আহত/নিহত হতে চাই না।

আবার ডিসেম্বর বা জানুয়ারীতে সিনেমা প্রজেক্ট নিয়ে বসব, আপাতত কিছুদিন না দেখলেও হবে। নীচে প্রথম ২০ টার তালিকা দিলাম, আর রেটিং আমার নিজের, দেখার পর পর যেমন মনে হয়েছে।

Travellers and Magicians - 9.5
Casanova-8
40 Years Old Virgin 7.5
Xiu Xiu 7.5
Corpse Bride 7.5
Artemisia 7.5
16 Blocks 7.5
Brothers Grimm 7.5
Grandmothers Son 7.5
Prime 7.5
Syriana 7.5
Novo 7
Fantastic Four 7
Pride & Prejudice 7
Lord of War 7
A Good Woman 7
Walk The Line 7
Pretty Persuation 6.5

গল্প নয়ঃ পুরুষিনী, তৃতীয় প্রকৃতি এবং বহু উভচর মানুষ

অনেক দিন আগের কথা (৩,০০,০০০+ দিন), আয়াজকে জিজ্ঞাসা করলেন মাহমুদ, "আমার চেয়ে বড় কোন সম্রাট কেউ আছে?", আয়াজ উত্তর দিলেন, "নিশ্চয়ই আমিই তো তোমার চেয়ে শ্রেয়তর সম্রাট"। মাহমুদ প্রমান চাইলেন, আয়াজ বললেন, "যদিও তুমি একজন সম্রাট, কিন্তু তোমার হৃদয় তোমার ওপর কর্তৃত্ব করে, আর এই দাস তোমার হৃদয়ের সম্রাট"। এ অংশটুকু ফরিদ উদ্দিন আত্তারের এলাহীনামা থেকে নেয়া। মাহমুদ হচ্ছেন গজনীর সুলতান মাহমুদ, যিনি পারস্য, আফগানিস্থান, পাকিস্তান এবং ভারতের উত্তরাংশের অধিপতি ছিলেন একাদশ শতাব্দিতে। আর আয়াজ? মালিক আয়াজ একজন দাস, এক পর্যায়ে লাহোরের অধিপতি এবং সুলতান মাহমুদের lover। মাহমুদ এবং আয়াজের ভালোবাসা নিয়ে বেশ কিছু সুফী সাহিত্য আছে (উত্সাহী পাঠকরা পড়ে দেখতে পারেন), তবে আমি আপাতত সুফীবাদ এবং ইতিহাস থেকে দৃষ্টি ফেরাতে চাচ্ছি আরেকটা জাগতিক প্রশ্নের দিকে। মাহমুদ এবং আয়াজ দুজনেই তো পুরুষ, তাদের মধ্যে আবার ভালোবাসা কি? এক হাজার বছর আগে সমকামীতা ছিল না কি? কারন সমকামীতাতো পাশ্চাত্যের বিকৃত নরনারীর ফ্যাশন।

আমরা বড় হয়ে ওঠার সময় বিশেষ করে ৫-১২ বছর বয়সের সময়ে অনেক সামাজিক মুল্যবোধ এমন ভাবে প্রোথিত হয়ে যায়, যে পরে মুল্যবোধগুলো আমাদের পরিচয় এবং স্বত্ত্বার অঙ্গ হয়ে দাড়ায়। যেমন বাঙালী শহুরে মধ্যবিত্ত সমাজে মাঝ বয়সী লোক আর কিশোরীর প্রেমকে কখনই সহজভাবে দেখতে অভ্যস্ত নই (হুমায়ুন আহমেদ নিয়ে ব্লগের ঝগড়াঝাটি দ্রঃ), অনেক ক্ষেত্রেই এগুলোকে অসুস্থ মানসিকতার প্রকাশ বলে মনে করি। অথচ ইতিহাসের দিকে লক্ষ্য করলে দেখব আমাদের প্রাতঃস্মরনীয় অনেক বীর, ধর্মীয় নেতা , রাজনৈতিক গুরু এই কাজটি অবলীলায় করে গেছেন, আমি নিজেও এর মধ্যে দোষের কিছু দেখি না, প্রেম তো আর বয়স মানে না, কিন্তু প্রেম কি লিঙ্গভেদ মেনে চলে, অথবা যৌনতা?

আসলে নৈতিকতার অনেকটাই সামাজিক মুল্যবোধ থেকে এসেছে। যেমন আরব সমাজে বয়ষ্ক পুরুষ এবং বালকের মধ্যে যৌন সম্পর্ক গ্রহনযোগ্য তো বটেই মধ্যযুগে (ইসলামের বিস্তৃতির সময়) বহুল প্রচলিতও ছিল। কোরানে বেহেশতের প্রসঙ্গে আছে "And there shall wait on them (the Muslim men) young boys of their own, as fair as virgin pearls." (Qur’an 52:24; 56:17; 76:19)। তবে শুধু ইসলামী সমাজে নয়, এর বাইরেও সমকামীতা সবসময়ই মানব সমাজে ভালোভাবেই ছিল। গ্রীক, রোমান, চৈনিক, পাপুয়া নিউ গিনি অথবা উত্তর আমেরিকার প্রাচীন সভ্যতায় সমকামীতার ভুরি ভুরি উদাহরন আছে। হিন্দু পুরানেও এরকম বেশ উল্লেখ পাওয়া যায়, যেমন পুরুষীনি অথবা তৃতীয় প্রকৃতি। আসলে ব্যাপারটা হচ্ছে সমকামীতা আধুনিক পশ্চিমাদের আবিষ্কার নয়, বরং এমন কিছু যা আমাদের ভেতরেই আছে, পত্র-পত্রিকা, ইলেকট্রনিক মিডিয়া আর উন্মুক্ত তথ্য প্রবাহের কারনে ইস্যুটা জনসমক্ষে চলে এসেছে।

সত্যিই কৌতুহলী হতে হয়, দুটি বিপরীত লিঙ্গের অস্তিত্ব থাকার পরেও সমলিঙ্গে আকর্ষনের দুর্ঘটনার কারন কি? এখানে বলে রাখা ভালো, দুই লিঙ্গের অস্তিত্ব কোন চিরন্তন সত্য নয়, বহু প্রানী আছে যাদের একটাই লিঙ্গ। মানুষের বাইরে বাইসন, ভেড়া, পেঙ্গুইন, গরু, ডলফিন, বিশেষ করে শিম্পাঞ্জীদের মধ্যে সমকামীতা প্রচলিত (ওদের অবশ্য পরকালে শাস্তির ভয় নেই)। সমকামীতার কারন নিয়ে অনেক গবেষনা হয়েছে এবং হচ্ছে, অনেক ক্ষেত্রে প্রমান দেখানো হয়েছে সমকামীতা আসলে জেনেটিক। কিছু গবেষনায় পাওয়া গেছে পুরুষ সমকামীদের মস্তিষ্কের গঠন আসলে বিষমকামী (heterosexual) মেয়েদের মতো। এসব নিয়ে অনেক বিতর্ক আছে এবং গবেষনাও চলছে, সামনের বছরগুলোতে আরও বিস্তারিত জানা যাবে।

তবে বেশীরভাগ বিজ্ঞানীরাই
Alfred Kinseyর গবেষনার সাথে সহমত পোষন করেন- মানব জাতির অধিকাংশ সদস্যই আসলে উভগামী (bisexual), ঠিক পুরোপুরি সমকামী বা বিষমকামী আসলে সংখ্যায় কম। শিকাগো বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষনায় দেখা গেছে মার্কিন মেয়েদের ৪%, এবং ছেলেদের ৫% জীবনের কোন না কোন সময় সমকামীতার চর্চা করেছে (এক বা একাধিকবার)। আমাদের দেশেও মাদ্রাসা, বোর্ডিং ষ্কুলে এসব ঘটনা ভালোই প্রচলিত। সরাসরি যৌন সম্পর্ক ছাড়াও উভচর প্রবৃত্তির আরও বহির্প্রকাশ আছে, যেমন ছেলেদের মধ্যে গভীর বন্ধুত্ব যেখানে একজন আরেকজনকে স্পর্শ করে আস্থা পুনর্প্রতিষ্ঠিত করে, একটু প্যাসিভ তবে প্রেরনা মনের ভেতর থেকেই আসে। একসময় সেনাবাহিনীতে ঐক্য অটুট রাখার জন্য এধরনের সম্পর্ক উত্সাহিত করা হতো।

বৃত্তের বাইরে চিন্তা করে অভ্যস্ত নই বলে আমাদের অনেকে সমকামীতা নিয়ে অহেতুক সংকটে ভুগতে থাকি, আসলে সমকামীতা, উভগামীতা, বিষমকামীতা সবগুলোই মানুষের জীবনের অংশ, প্রয়োজন শুধু দৃষ্টিভঙ্গীর পরিবর্তনের।

বিঃদ্রঃ লেসবিয়ানদের সংখ্যা সাধারনত গে দের চেয়ে কম। সিনেমায় লেসবিয়ানদের বেশী দেখা যায় কারন, বেশীর ভাগ বিষমকামী পুরুষ লেসবিয়ানদের নিয়ে ফ্যান্টাসীতে ভোগে। পর্ন ছবির একটা বড় অংশ লেসবিয়ানদের নিয়ে, এবং এদের দর্শক রেগুলার পুরুষরা।
eXTReMe Tracker