Friday, June 16, 2006

বিশ্বাস করলেই কি সত্য হয়?

চাঁদ বা সুর্য যখন দিগন্তের কাছে থাকে তখন বড় দেখায় কেন? প্রতিসরণ নাকি ওরা কাছে চলে আসে। গবেষণার আগে কোন পুর্ণিমার দিন সন্ধ্যায় চাঁদের একটা ছবি তুলুন, কয়েক ঘন্টা পর একই জুম রেখে আবার চাঁদের ছবি তুলুন, এখন তুলনা করলেই রহস্য পরিস্কার হবে। ভিজুয়াল ইলিউশন অবশ্য নতুন কিছু নয় (ছবি: ১)। এরপরও বিশ্বাস আর সত্যের মধ্যে যে ব্যবধান আছে তা সহজে ধরা দিতে চায় না।


আমরা যখনই কোন কিছুর বিশ্লেষন করি তার ভিত্তি থাকে আমাদের মনে ঐ ঘটনার প্রতিবিম্ব (ঘটনা নিজে নয়)। যেমন আমি আপনাকে একটা গল্প বলে যদি উপসংহার টানতে বলি, আপনার উপসংহারের ভিত্তি হবে আমার গল্পের যতটুকু আপনি মনের ছবিতে ধারণ করতে পেরেছেন। গল্পের যে সব অংশ ভালোমতো মনে মনে আঁকেননি তাদের স্বমন্ধে বিশ্লেষন পরবর্তিতে সঠিক নাও হতে পারে। সমস্যাটা হচ্ছে আমি আমার মানসপটে ভুল ছবি আঁকলেই যে ছবির উত্সেও সে ভুল ছড়িয়ে পড়বে তা কিন্তু নয়। সবাই মিলে যদি বিশ্বাস করি চঁাদ দিগন্তের কাছে আসলেই আকারে বড় থাকে তাহলেই কি চঁাদ সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করে বড় হবে? গ্যালিলিও কে বলাতে বাধ্য করেছিল ক্যাথলিক চার্চ যে পৃথিবীর চারদিকে সুর্য ঘোরে, আরও কোটি কোটি ইউরোপিয়ানও তা বিশ্বাস করত, তাই বলে সুর্য কি পৃথিবীর চারদিকে ঘোরা শুরু করেছে? এত বিশ্বাসীর প্রভাবে সুর্য তার গতিপথ একচুলও কি পরিবর্তন করেছে? আমাদের বুঝতে হবে বিশ্বাস এবং সত্য আলাদা, বিশ্বাসের বসবাস কেবলই আমাদেরমনের মধ্যে, বিশ্বাস করলে আছে না করলে নেই। ঋথধয় বিশ্বাসীর ওপর নির্ভর করে না, আমরা সবাই মিলে অবিশ্বাস করলে বা চোখ বন্ধ করে রাখলেই তা মিথ্যে হবে না। ২/১ বিলিয়ন সমর্থকও যথেষ্ট নয়।


এবার বদরুল ভাইয়ের নুহ নবী সংক্রান্ত পোস্টের ব্যাপারে আসি। আপনার যুক্তি আমি বুঝতে পেরেছি। স্রষ্টার কুদরতের ওপরে কোন যুক্তি প্রয়োগ করা চলে না, বৈজ্ঞানিক যুক্তি তো নয়ই। স্রষ্টা চাইলে একবার কেন হাজার বার বিশ্বব্যাপী বন্যা বাধাতে পারবেন, কোন জিওলজিকাল রেকর্ড না রেখেই। তুচ্ছ বৈজ্ঞানিকের সামর্থ্য নেই যে কুদরতের মর্মোদ্ধার করবে। পাচশ বছর আগে জন্মালে আমার মনেও কোন প্রশ্ন হতো না। সময়টা যে বদলে গেছে, তৃতীয় বিশ্ব থেকে এসে যখন একজন ছাত্র দেখে মাইক্রোস্কোপের নীচে জীবানুরা ডারউইনের সুত্র মেনে চলছে, বার্ড ফ্লু , HIV বিবর্তনবাদ মেনে চলে তখন আদম-ইভের জন্য খুব কষ্ট হয়, স্যাটেলাইটের সোলার প্যানেলের সফটওয়্যার লিখতে গিয়ে দেখি গ্যালিলিওর কথাই ঠিক ধর্ম গ্রন্থের নয় তখন বিশ্বাসে ফাটল ধরে, ভুমিকম্প গবেষনা করতে গিয়ে দেখি এর কারণ Plate Tectonics তখন পাহাড়গুলো স্থাপন করা হয়েছে, অথবা দুমোখো সাপের মাথা বদলেই ভুমিকম্প , এ বিশ্বাস সত্যের কাছে ভেঙ্গে পড়তে চায়। বদরুল ভাই আমি আপনাকে দোষ দেই না, আজন্ম লালিত বিশ্বাসকে রাতারাতি অস্বীকার করা যায় না, কিন্তু ঐ যে বললাম সময়টা বদলেছে, মুল্য দিয়ে হলেও শিখতে হচ্ছে: “বিশ্বাস করলেই সত্য হয় না, আর সত্য হলেই তা বিশ্বাসযোগ্য হবে এমনও নয়“।

ভক্তি-শ্রদ্ধা

গত সপ্তাহে ব্লগ সাইট খুজে পাওয়ার পর প্রতিদিন ২/১ ঘন্টা ব্যয় করছি লেখা গুলো পড়ার জন্য । অনেকে খুবই ভালো লিখেন, অন্যরাও ক্রমশ উন্নতি করছেন। পুরোনো লেখা পড়া মোটামুটি শেষ পর্যায়ে, লেখা ছাড়া মন্তব্যও বেশ মজার। একটা কমন থীম এখানে ধর্ম সংক্রান্ত আলোচনা, সব পক্ষের কথায়ই কম-বেশী যুক্তি আছে। লেখা পড়তে পড়তে আমার নিজের একটা ঘটনা মনে পড়ে গেল, ভাবলাম এই নিয়েই লিখি না কেন।

নব্বই দশকের প্রায় মাঝামাঝি তখন ঢাকা কলেজে পড়তাম। সে সময় ঢাকা কলেজে ক্লাশ খুব একটা হতো না, ছাত্ররা আমরা নিজের বাসায় বা প্রাইভেট স্যারের কাছেই যা একটু পড়াশোনা করতাম। এরকম একদিন কোন কারণে দুপুরে কলেজে এসেছি, ৩টায় লুত্ফুজ্জামান স্যারের কাছে পড়া, কলেজের কাজ শেষ করে ভাবলাম বাকীসময়টুকু ফাকা ক্লাশরুমের শেষে একটু ঘুমিয়ে নিই। এমন সময় দেখি ২০/২৫ জন ছাত্র সমেত একজন প্রৌঢ় শিক্ষক বাংলা পড়াতে এসেছেন। আমি তো মহা বিরক্ত। উনি পরিচয় দিলেন আখতারুজ্জামান ইলিয়াস। কিছুক্ষনেই বুঝলাম উনি আর দশজন শিক্ষকের মতো নন, কবিতা প্রসঙ্গে বলতে বলতে তিনি একটি আপাত: জটিল (অন্তত তখন আমার কাছে) বিষয়ে আলোচনা শুরু করলেন। বিষয়টি হলো ভক্তি এবং শ্রদ্ধার পার্থক্য । আমি ততদিন পর্যন্ত দুটোকে মোটামুটি একই ভেবে এসেছি। স্যার ভুল ভাঙ্গালেন এভাবে, ভক্তি হলো নি:শর্ত বিশ্বাস, আত্মসমর্পন, শ্র দ্ধা অন্যদিকে নি:শর্তও নয়, সন্দেহের উর্দ্ধেও নয়। শ্রদ্ধায় প্রশ্ন করার অধিকার আছে, ভুল থাকলে শোধরানোর সুযোগ আছে, ভক্তি প্রশ্ন প্রশ্রয় দেয় না, ভক্তির মুলভিত্তি প্রশ্নের বাইরে । যেমন আমরা সচরাচর বিজ্ঞান, বিজ্ঞানীকে শ্র দ্ধা করি, কিন্তু ধর্ম , ধর্ম প্রনেতা, অনেকক্ষেত্রে সংস্কৃতিকে ভক্তি করি। উদাহরণস্বরূপ, বিজ্ঞানী নিউটন বা তার মহাকর্ষ সুত্রকে আমরা ভক্তি করি না কিন্তু শ্রদ্ধা করি। নিউটনের ব্যক্তিগত জীবন বা সুত্র নিয়ে সন্দেহ করতে কোন সমস্যা নেই। এমন আসলে হয়েছিলও, উনিশশতকে তখন ক্লাসিকাল মহাকর্ষ সËুত্রর দোর্দন্ড প্রতাপ, কিন্ত কোন ভাবেই বুধ গ্রহের কক্ষপথ মেলানো যাচ্ছিল না। সমাধান হিসেবে ভালকান নামে অনাবিষ্কৃত গ্রহের প্রস্তাব করা হলো, তাতেও শেষ রক্ষা হচ্ছিল না। শেষমেশ আইনস্টাইনের আপেক্ষিক তত্ত্ব প্রমান করল যে, নিউটনের সুত্রগুলো আসলে আরও সাধারনীকৃত সমীকরণের বিশেষ অবস্থা, অনেকক্ষেত্রে প্রয়োগ করা গেলেও এগুলো সার্বজনীন নয়। নিউটনের সুত্রকে অংশত ভুল প্রমানের জন্য কেউ আইস্টাইনের ওপর আক্রমন করেনি, আর সুত্রগুলোর দুর্বলতা প্রকাশ পেয়েছে বলে যে নিউটনের গৌরব কমে গিয়েছে তাও নয়। এখানেই ভক্তির সাথে পার্থক্য, ভক্তি সমালোচনা পছন্দ করে না, ভক্তি ভুল থাকলে তা শোধরাতেও চায় না। ধর্ম ছাড়াও আরও ভক্তির ক্ষেত্র আছে, যেমন অনেক আওয়ামী লীগ সমর্থকদের বঙ্গবন্ধু ভক্তি। বাংলাদেশের অভ্যুদয়ে বঙ্গবন্ধুর অবদান খাটো করার কোন উপায় নেই, তাই বলে শাসক হিসেবে তার ব্যর্থতার সমালোচনা করা যাবে না এমন তো কোন কথা নেই, সমালোচনা আওয়ামী লীগ বা বঙ্গবন্ধুর ভুমিকাকে কোন ভাবেই ছোট করবে না। ধর্ম সংক্রান্ত ভক্তিগুলোর ক্ষেত্রে এগুলো আরও বেশী করে সত্য।

আসলে ভক্তি-শ্রদ্ধা নিয়ে এত সমস্যা হতো না, আপাত দৃষ্টিতে যে যার চরকায় তেল দিলেই তো হয়। সমস্যা হচ্ছে ভক্তির ওপর ভিত্তি করে আমরা ব্যক্তিগত, সামাজিক, রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত নিয়ে বসি। অপ্রমানিত সুত্র দিয়ে সমীকরণের সঠিক সমাধান আশা করা যায় না। প্রোগ্রামিং-এর ভাষায় untested code is borken code । অনগ্রসর দেশ গুলোর দিকে তাকালেই বোঝা যায়, আপাতদৃষ্টির নিরীহ ভক্তি পরিস্থিতি কতদুর নিয়ে যেতে পারে।

আখতারুজ্জামান স্যার দু:খজনক ভাবে এর কিছু পরেই ক্যান্সারে মারা যান। আমি পরেও অনেকদিন ওনার ক্লাশের জন্য অপেক্ষা করেছি, তবে ঢাকা কলেজে ঐ বছর আর কেউ বাংলা ক্লাশ করেছে বলে শুনিনি।

Bangla text converter (Boishakhi <-> Bijoy <-> Unicode)


বাংলা বিজয় বা বৈশাখী টেক্সট থেকে ইউনিকোড টেক্সটে কনভার্ট করার প্রোগ্রাম লিখেছি কিছুদিন আগে। ইউনিকোড থেকেও বিজয় বা বৈশাখীতে কনভার্ট করা যাবে। উত্সাহী কেউ ডাউনলোড করে বাগ রিপোর্ট দিলে খুশী হব। কমেন্ট আকারে এখানে বাগ রিপোর্ট দিতে পারেন।

Program - http://utsablogger.googlepages.com/BanglaTextConverter.exe
Data Files - http://utsablogger.googlepages.com/Bijoy-Unicode.txt and http://utsablogger.googlepages.com/Boshakhi-Unicode.txt.

After download keep all 3 files in same directory.

[Update: Thanks for all the comments and feedback, you have given me. I am going to revamp the program, will add compact data files + batch processing, ETA Dec 15th.]

Friday, June 02, 2006

মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ ১.২

রুয়ান্ডার গনহত্যা আমার কাছে গুরুত্বপুর্ন মনে হয় বেশ কয়েকটি কারনে, এটা সা¤প্রতিক অতিতের ঘটনা, আমি নিজেই বিবিসি, সিএনএন-এ শুরু থেকে ঘটনাগুলো দেখেছি, আমাদের দেশীয় প্রচার মাধ্যমে এর উপস্থাপনাও দেখেছি। আন্তর্জাতিক স¤প্রদায় জেনেও কোন সাহায্যে এগিয়ে আসে নি। মানুষের গনহত্যা প্রবনতার উত্স এবং বিস্তার বিশ্লেষনে রুয়ান্ডার ওয়েল ডকুমেন্টেড ঘটনা প্রবাহ যথেষ্ট গুরুত্বপুর্ন। এখানে আবারও দেখব গনহত্যায় সাধারন মানুষের ব্যাপক অংশগ্রহন এবং সমর্থন। নাত্সীদের জার্মান জাতীয়তাবাদের মতো এখানেও হুটু (Hutu) জাতীয়তাবাদ, অনেকক্ষেত্রে দেশপ্রেম, স্বজাতিপ্রেম, সামাজিক সংগঠন এবং প্রচার মাধ্যম হত্যাকান্ডে উল্লেখযোগ্য ভুমিকা নেয়। আমরা দেখব বেশীরভাগ গনহত্যাগুলোতে উপরের একই প্রতিষ্ঠান, ভাবধারা গুলো কারন হিসেবে থাকে, এবং আমরা সচরাচর এদের বিস্তারে বাধা দেই না, বিশেষ করে দেশপ্রেমের মতো মহত্গুন নিয়ে সমালোচনা আমার চোখে খুব কম পড়েছে। দেশ-জাতি প্রেম নিয়ে আলোচনা আরও কয়েকটা লেখা পরে করব, আপাতত রুয়ান্ডায় ফেরা যাক।

পুর্ব-মধ্য আফ্রিকার দেশ রুয়ান্ডার ঐতিহাসিক ভাবে মুলত দুই জাতির লোকের বসবাস, হুটু এবং টুটসি (Tutsi)। তবে দুই জাতে বিভাজন আসলে যথেষ্ট বিতর্কিত, চেহারা বা ন্য কোন ভাবে এক জাত থেকে অন্য জাতকে সরাসরি আলাদা করা কঠিন। বরং বিভাজন অনেকটা বিভিন্ন সময়ে রাজনৈতিক ভাবে আরোপিত। টুটসিরা মুলত শাসক শেªনীর লোকজন, অন্যদিকে হুটুরা সমাজের নীচু শেªনীর লোক। এমনও আছে হুটু কেউ ধনশালী হয়ে টুটসি সমাজভুক্ত হয়েছে। সংখ্যায় অবশ্য হুটুরাই বেশী ছিল। যাহোক ১৮৯৭ সালে জার্মানী রুয়ান্ডাতে কলোনিয়াল শাসন শুরু করলে এই বিভাজন গাঢ় হতে থাকে। সে সময় ইউরোপে racism যথেষ্ট বিস্তৃত ছিল, জার্মানরা রুয়ান্ডায় এসেই তাদের raceভিত্তিক চিন্তা ভাবনা এখানে প্রয়োগ করতে থাকে। টুটসিদেরকে হুটুদের তুলনায় সেরা হিসেবে বিবেচনা করা শুরু হতে থাকে, এর পেছনে নানা ব্যাখ্যাও দাড় করানো হতে থাকে। প্রথম বিশ্ব যুদ্ধের সময় বেলজিয়ানরা জার্মানদের হটিয়ে রুয়ান্ডা দখল করে, কিন্তু পরবর্তিতে তারাও টুটসিদের শেªষ্ঠত্বকে romanticized করতে থাকে।

১৯৬২ সালে বেলজিয়ানদের হাত থেকে মুক্ত হয়ে স্বাধীন রুয়ান্ডা প্রতিষ্ঠি হয়। হুটুরা সংখ্যাগরিষ্ঠ হওয়ায় তাদের হাতেই ক্ষমতা থাকে। আস্তে আস্তে শুরু হয় টুটসি বিরোধী প্রচার, সমস্ত সমস্যার জন্যই টুটসিদের দায়ী করা হতে থাকে। হুটুরা জাতিগত বিভাজনকে প্রাতিষ্ঠানিক রুপ দিতে থাকে , ষ্কুল কলেজ, অফিস আদালতে টুটসিদের সুযোগ সীমিত করা হতে থাকে। এর মধ্যে বেশ কয়েকবার জাতিগত দাঙ্গা হলে, টুটসিরা গনহত্যার শিকার হয়, এবং আশেপাশের দেশে পালিয়ে যেতে থাকে। আন্তর্জাতিক স¤প্রদায় অবশ্য এসব সমস্যা মোটামুটি উপেক্ষা করতে থাকে। পরবর্তি কয়েক দশকে হুটু জাতীয়তাবাধ বিনা বাধায় বিস্তার লাভ করে।

নবŸই এর দশকের শুরুতে দেশত্যাগী টুটসিরা রুয়ান্ডায় ফিরে আসার চেষ্টা চালায়, হুটু সরকারের সাথে টুটসি সংগঠন RPF (Rwandese Patriotic Front) আলোচনাও চলতে থাকে কিভাবে টুটসিদের সম-অধিকার প্রতিষ্ঠা করা যায় এসব নিয়ে। বেশীরভাগ হুটু অবশ্য টুটসিদের এসব প্রচেষ্টা ভালো চোখে দেখেনি। ১৯৯০ -এ RPF উগান্ডা থেকে রুয়ান্ডায় আক্রমন করে, সরকারকে আলোচনায় বসার জন্য চাপ দিতে। তবে এই আক্রমনে টুটসিদের লাভের চেয়ে ক্ষতিই বেশী হয় । হুটুরা একে ক্ষমতা দখলের চেষ্টা হিসেবে দেখতে থাকে, পরিস্থিতি কাজে লাগিয়ে হুটু প্রেসিডেন্ট Habyarimana টুটসি গনহত্যার প্রাতিষ্ঠানিক প্রস্তুতি নিতে শুরু করেন।

এপ্রিল ১৯৯৪-এ Habyarimana-এর বিমান রকেট হামলায় ভুপাতিত হয়ে প্রেসিডেন্ট নিহত হলে সাথে সাথে গনহত্যা শুরু হয়। প্রেসিডেন্টের গার্ড বাহিনী কয়েক ঘন্টার মধ্যে রেডিওতে হুটুদেরকে উত্সাহ দিতে থাকে টুটসি গনহত্যার জন্য। সামরিক বাহিনীর সহায়তায় পাড়ায় পাড়ায় Interahamwe মিলিশিয়া বাহিনী গঠিত হয় সাধারন হুটু নাগরিকদের নিয়ে। সেনা বাহিনী এবং পুলিশের লোকজন বিভিন্ন (যেমন অস্ত্র) সহায়তা দিতে থাকে, এছাড়াও যারা গনহত্যায় অংশগ্রহন করবে তাদেরকে টাকাপয়সা, টুটসিদের জমি জমা দিয়ে সাহায্য করার প্রতিশªুতি দেয়া হয়। সাধারন লোকজন সুযোগ পেয়ে পাড়া প্রতিবেশী টুটসিদের হত্যা করতে থাকে বা ধরিয়ে দিতে থাকে। অনেক সময় টুটসিদের ষ্কুল বা চার্চে জড়ো করে পাইকারী হারে মেরে ফেলা হতে থাকে। মাত্র ১০০ দিনে ১০ লাখ টুটসি নিহত হয় (দিন গড়ে ১০ হাজার)। গনহত্যার আরেকটা গুরুত্বপুর্ন দিক হলো বুলেটের পরিবর্তে machete (ছুরি, রাম দা?) দিয়ে লক্ষ লক্ষ লোককে হত্যা, পরিস্থিতিতে একজন মানুষ কতটা নির্মম হতে পারে যখন দিনে কয়েকশ মানুষকে জবাই করেও অপরাধবোধ জন্মায় না।

আমার কাছে রুয়ান্ডার গনহত্যা খুবই দরকারী কেস স্টাডি মনে হয়, টিপিকাল জেনোসাইডের উপকরন গুলো সবই এখানে আছেt
- হুটু জাতীয়তাবাদি চেতনা
- প্রোপাগান্ডায় গন মাধ্যমের ভুমিকা
- মুক্তচিন্তার অনুপস্থিতি, বরং সা¤প্রদায়িক চেতনার ক্রমশ প্রাতিষ্ঠানিক রুপ দেয়া
- সাধারন মানুষকে গনহত্যায় সম্পৃক্ত করা, এবং ঘৃনার আবেগকে উষ্কে দেয়া। ঘৃনা যে ভালোবাসার চেয়ে মোটেও কম শক্তিশালী নয়, এটা আমরা বুঝতে চাই না।
- Romanticized Ideologyt এটা বোধ হয় গনহত্যার ব্যাপকতার সবচেয়ে দরকারী উপকরন। একদল লোককে এমন ভাবে মোটিভেট করা যেন, বিশেষ মতবাদকে বাস্তবায়িত করলেই সবসমস্যার সমাধান হয়ে যাবে। আশ্চর্যজনক যে মানুষ হিসেবে আমরা আবার এসব সব সমস্যার সমাধানে বিশ্বাসও করি। রুয়ান্ডায় হুটু মিলিশিয়াদের মুল বক্তব্য ছিল তাই, টুটসিরাই সব সমস্যার মুলে, ওদেরকে মেরে ফেলতে পারলেই রুয়ান্ডার সমস্যা সমাধান হবে। বেশীরভাগ হুটু তা বিশ্বাসও করেছে। নাত্সীবাদও জার্মানদের কে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে এভাবেই প্রভাবিত করেছিল। কমিউনিজম, ধর্মভিত্তিক মৌলবাদও একই ভাবে সমাধানের নামে সাধারন মানুষকে টানে। Romanticized Ideology-এর ওপর ভিত্তি করে মানুষ বড় বড় অপরাধের যেŠক্তিকতা খুজে পায়, সমর্থন এবং অংশগ্রহন করে।

গনহত্যা নিয়ে আর দু-একটি লেখা লিখে অন্যান্য অমানবিক অপরাধে দৃষ্টি দেব

মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ-১.১

ইতিহাস যখন কাহিনী আকারে পড়ি, প্রায়ই যে ঘটনাটা ঘটে তা হলো চরিত্রগুলোকে মনের অজান্তে সাদা-কালোয় বিভাজিত করে ফেলি। কেউ ভালো আর কেউ খারাপ। ইতিহাসের সংঘর্ষগুলো হয়ে দাড়ায় শুভ-অশুভের নিরন্তর অতি পরিচিত সংগ্রামের কেবলই একটি দৃশ্য মাত্র, শুধু স্থান-কাল-পাত্র-পাত্রীরা বদল হয়। হয়তো এসব অতি সরলীকরনের অনেক সুবিধা আছে, সমস্যা হচ্ছে রwঙন ছবিকে সাদা-কালো করলে যা হয়, অনেক মৌলিক তথ্য বাদ পড়ে যেতে পারে।


দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ (১৯৩৯- ১৯৪৫) নিয়ে অনেক সিনেমা, ডকুমেন্টারী, বা টিভি সিরিজ দেখেছি, গল্প আলোচনাও কম করি নি, তারপরও একটা গুরুত্বপুর্ন প্রশ্ন কখনও ভালোভাবে মনে আসেনি, প্রশ্ন করার আগেই যখন উত্তরটা পেলাম তখন বুঝতে পারলাম শুধু আমি না অনেকেই এই অতিসরলীকরনে আক্রান্ত হয়েছে। আমার কলিগের বাবা দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময়ে হল্যান্ডে থাকতেন, একদিন কথায় কথায় তিনি বললেন, যুদ্ধের পরে তাদের অনেক আত¥ীয় স্বজন দক্ষিন আফ্রকায় পালিয়ে যেতে বাধ্য হয়, কারন যুদ্ধে তাদের অনেকে জার্মান বাহিনীকে সাহায্য করেছিলেন। খুব আশ্চর্য হলাম এটা শুনে, কারন আমি আমার কলিগদের ফ্যামিলিকে জানতাম সত্, ভদ্র, এবং অনেকটাই উদার মনোভাবের মানুষ হিসেবে, তারা কিভাবে সাক্ষাত ডেভিল হিটলারের লোকজনকে সাহায্য করলেন পরিষ্কার হচ্ছিল না। এরপর দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ নিয়ে অনেক ঘাটাঘাটি করেছি, অনেক তথ্য পেলাম যেগুলো সচরাচর সিনেমা, বা ডকুমেন্টারীতে থাকে না। প্রচলিত বর্ণনায় হিটলার, আর তার সাঙ্গপাঙ্গদেরকেই শুধু কোটি কোটি মানুষের মৃত্যুর জন্য দায়ী করা হয়, যে তথ্যটা থাকে না তা হলো, যুদ্ধের বিভিন্ন পর্যায়ে প্রতি ৩/৪ জন জার্মান পুরুষ নাগw রকের একজন সরাসরি যুদ্ধে অংশগ্রহন করেছে, অনেকক্ষেত্রেই সাধারন জনগন প্রত্যক্ষভাবে গনহত্যায় ভুমিকা রেখেছে, এবং জার্মানী যখন ডেথ ক্যাম্পে লক্ষ লক্ষ বন্দিকে বিষাক্ত গ্যাস দিয়ে মেরে ফেলছিল তখন নাগরিকরা কোন প্রতিবাদ তো করেই নি বরং অনেকেই যুদ্ধবন্দিদেরকে দাস হিসেবে কলকারখানায় কাজ করিয়েছে। জার্মানী যখন একটার পর একটা দেশ দখল করছিল দেশপ্রেমিক জার্মান নাগরিকরা সেটাকে ভালোভাবেই সেলিবেªট করত। হিটলার না হয় নরপিশাচ ছিল, তাই বলে কি দেশশুদ্ধ মানুষের কি কোন বিবেক বুদ্ধি ছিল না? এখানেই সরলীকরনের সমস্যা, টিভি সিনেমার দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ থেকে এসব উত্তর পাওয়া মুশকিল, বিভিন্ন দৃষ্টিকোন থেকে বিশ্লেষন দরকার। ঐতিহাসিক চরিত্র গুলোকে পিশাচ আর ফেরেশতায় ভাগ না করে তাদের নির্মোহ বিশ্লেষন করলে বুঝতে পারব উত্তরগুলো যথেষ্ট জটিল।


প্রথম বিশ্বযুদ্ধে হারার পর জার্মানীতে গনতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হয় (Weimer Republic), যদিও দেশের তখনকার রাজনৈতিক দলগুলোর গনতন্ত্রে আস্থা ছিল না বললেই হয়। এরকম অবস্থায় চরম ডান (Nationalsozialistische Deutsche Arbeiterpartei বা নাত্সী পার্টি) এবং চরম বাম দুধরনের দলের বিস্তার ঘটে, সবদলেরই আবার পেটোয়া বাহিনী (প্রচলিত বাংলায় ক্যাডার) ছিল যেমন নাত্সীদের ক্ষেত্রে SA, SS (Schutzstaffel) বাহিনী। নাত্সী বাহিনীর মুল ভিত্তি ছিল জার্মান জাতীয়তাবাদ, আরো ভালোভাবে বললে বর্ন ভিত্তিক জাতীয়তাবাদ, হিটলারের Mein Kampf (My Struggle) বইয়ে বিশদভাবে এসব [ইংলিশ]ত্ধপরংঃ[/ইংলিশ] বর্ণনা আছে। যাহোক ত্রিশের দশকের শুরতে অর্থনৈতিক মন্দার কারনে এসব বক্তব্য জার্মান নাগরিকদের কাছে যথেষ্ট যুক্তিসঙ্গত মনে হতে থাকে, শেষমেশ ১৯৩২ সালে হিটলার বৈধ ভাবেই ক্ষমতারোহন করে।


পরবর্তি কয়েক বছরে হিটলারের বর্ণভিত্তিক বিশেষ করে ইহুদি এবং জিপসী বিরোধী প্রচারনা বাড়তে থাকে, ইহুদি বিরোধী সভা সেমিনার ইত্যাদি চলতে থাকে (সাম্পÖতিক কালে যেমন বাংলাদেশে কাদিয়ানী বিরোধী কার্যকলাপ, একসময় আমরা সমস্যাটা জানতামই না, আবার যখন ওদেরকে আক্রমন করা হলো সাধারন জনগন হিসেবে আমরা কেউ বাচাতেও গেলাম না, একইরকম দেখি অনেক পশ্চিমা মাধ্যমে অবাধ মুসলিম বিরোধী প্রচারনা , যা সাধারন নাগরিকরা সচরাচর প্রতিবাদ করে না)। একসময় জার্মানীতে সংখ্যালঘুদের নাগরিক অধিকার সংকোচন চলতে থাকে। অবস্থা এমন দাড়ায় জার্মানীতে ইহুদিদেরকে সরিয়ে নিয়ে ঘেটোতে (ghetto - যেমন মোহাম্মাদপুরে বিহারী ক্যাম্প) বন্দি করা হয়। জার্মানী বিশ্বযুদ্ধ শুরু করলে যে সব দেশ দখল করছিল, সেখান থেকে ইহুদি, জিপসীদেরকে নিয়ে এরকম ঘেটো বা concentration ক্যাম্পে নিয়ে জড়ো করা হতে থাকে। জার্মান শিল্পপতিরা সোল্লাসে এদেরকে দাস হিসেবে ব্যবহার করতে থাকে, উদাহরণ Friedrich Flick এবং তার DaimlerChrysler (এদের বানানো গাড়ীর মধ্যে আছে Chrysler, Dodge, Jeep, Mercedes-Benz) কোম্পানী। Forced slave labor জার্মানীর জন্য শিল্প বিকাশে খুবই সুবিধাজনক হয়ে দেখা দেয়, এমনকি যুদ্ধের শেষ পর্যায়ে (১৯৪৩-১৯৪৫) জার্মানী যুদ্ধ সরঞ্জামের উত্পাদন কয়েকগুন বাড়াতে সক্ষম হয় কেবল যুদ্ধবন্দিদের ওপর ভিত্তি করে।


১৯৪২ সালে নাত্সী জার্মানী সিদ্ধান্ত নেয় সমস্ত ইহুদী, জিপসীদেরকে মেরে ফেলার (Endlösung der Judenfrage)। এই সিদ্ধান্ত মানুষের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় গনহত্যার সুচনা করে। জার্মানরা গনহত্যাকেও industrialized করে নেয়, ইউরোপ জুড়ে extermination camp তৈরী হতে থাকে। ডেথ ক্যাম্পগুলোর বর্ণনা এতই বিভত্স এবং একই সাথে এতই করুন আমি পাঠকদের অনুরোধ করব নীচের লিংকগুলো পড়ে দেখতেঃ

http://www.auschwitz.dk/

http://www.ushmm.org/

http://www.holocaust-history.org/

http://www.holocaustsurvivors.org/


প্রথমে ভেবেছিলাম বাংলায় অনুবাদ করে লিখব, কিন্তু বর্ণনা এবং ছবি গুলো এতই overwhelming যে আমার পক্ষে পুরোপুরি তুলে ধরা অসম্ভব। শুধু পরিসংখ্যান হিসেবে লিখলে হয়তো আমার জন্য সহজ হবে, ডেথ ক্যাম্প গুলোর মধ্যে Belzec-এ দিনে ১৫০০০ , Sobibor-এ ২০০০০, [ইংলিশ]ঞত্বনষরহশধ[/ইংলিশ] তে ২৫০০০, Majdanek তে দিনে ২৫০০০ লোক মেরে ফেলা হতো। সংখ্যাগুলো এত বড় মানুষ হিসেবে বুঝতে কষ্ট হয়, যারা এই হত্যাকান্ডগুলো ঘটিয়েছে তারা কেমন ছিল।


নাত্সী SS বাহিনী এই হত্যাকান্ডের দায়িত্বে ছিল, জার্মান আর্মি কোন এলাকা দখল করলেই এরা পেছন পেছন গিয়ে ইহুদি, জিপসী বা অন্যান্য সংখ্যা লঘুদেরকে ধরে নিয়ে যেত ক্যাম্পগুলোয়। SS বাহিনীর সদস্যরা ছিল সাধারন জার্মান থেকে শুরু করে অধিকৃত অস্ট্রিয়া, চেকোশ্লোভাকিয়ার লোকজনও। অনেক সময় পাড়া-প্রতিবেশীরাও ইহুদিদেরকে ধরিয়ে দিতে গুরুত্বপুর্ণ ভুমিকা নিত। যুদ্ধ শেষে অল্প কিছু নাত্সী নেতার শাস্তি দেয়া হয়, হত্যাকান্ডের সাথে যারা জড়িত তাদের বেশীরভাগেরই কোন শাস্তিহয় নি।


আমার উপসংহার হচ্ছে এরকম, গনহত্যায় সাধারন জার্মান বা অস্ট্রিয়ানের যথেষ্ঠ ভুমিকা আছে, যদিও মিডিয়ায় এই তথ্যটা কৌশলে ছোট করে দেখা হয়। দেশপ্রেম বা জাতীয়তাবাদী চেতনা ত্রিশের দশকে জার্মানদের মধ্যে দারুনভাবে কাজ করেছিল, এতদিন পরে আমাদের বিশ্লেষনে তাদের কর্মকান্ড অপরাধমুলক মনে হলেও, সে সময় জার্মান নাগরিকদের মানসে নিজেদের সুপ্রিমেসি প্রতিষ্ঠার জন্য গনহত্যাকেও বৈধ এবং প্রয়োজনীয় মনে হত। Nuremberg Trial-এ ধৃত নাত্সী নেতারা তাদের কৃতকর্মের জন্য সামান্য অনুতপ্তও ছিল না। ব্যাক্তিগত জীবনে এদের অনেকেই ছিল স্বাভাবিক মানুষ, যেমন Auschwitz SS Kommandant Rudolf Hoess -এর ক্ষেত্রে, সন্তানবত্সল, ফ্যামিলিম্যান অ¨াটিচুডের এই লোকটাই যে দিনে ১০০০০ লোককে গ্যাসচে¤^ারে পাঠাত না জানলে বিশ্বাস করা কঠিন।


পরবর্তি "মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ" লেখাগুলোতে মানুষ হিসেবে আমাদের গনহত্যা প্রবনতা এবং এ সম্পর্কিত সহজাত বৈপরিত্যগুলো আরো তুলে ধরব। আশা করি কয়েকটা উদাহরনের পরে সমস্যার মুল উত্স পরিষ্কার হয়ে উঠবে

মেটাফোরে এফোড় ওফোড়

রুপক, রুপকথা বরাবরই আমার ভালো লাগতো। কবে থেকে ভালো লাগে না বা লাগাতে পারি না মনে করতে পারছি না, অথবা এখনও কিছুটা ভালো লাগে বিশেষ করে সিনেমাতে দেখতে। কে যেন একবার জন্মদিনে ঈশপের গল্পগুচ্ছ উপহার দিয়েছিল, ছোট ছোট চিত্র সহ গল্প, পড়তে ভালোই লাগতো, শুধু শেষের উপদেশটা উপেক্ষা করতাম। রুপকথার ভালো দিক হচ্ছে শেষটা প্রায়ই মিলনান্তক, আমার ধারনা প্রায় সবক্ষেত্রেই কিছুটা রোমান্টিক, রাজকন্যা রাজপুত্রের মিলন হয়, রাক্ষস মারা যায়, তারপর তারা বিয়ে করে সুখে শান্তিতে বসবাস করতে থাকে, বোধহয় অনন্তকাল পর্যন্ত। নিজেকে রাজপুত্রের স্থানে কল্পনা করতে খুব ভালো লাগতো, যতদুর মনে হয় পড়ার সময় ওরকম কল্পনা করেই আগাতাম। নার্সারী থেকে শুরু করে মনে হয় অন্তত ষ্কুলজীবনের প্রায় শেষভাগ পর্যন্ত নায়কের চরিত্রে প্রায়ই নিজেকে বসিয়ে গল্প পড়তাম, এটা অবশ্য নতুন কিছু না, সবাই তাই করে, অন্তত যাদেরকে জিজ্ঞাসা করেছি। মেয়ে হলে হয়তো রাজকন্যার পার্ট নিতাম। Romanticized কল্পনা হয়তো শৈশব-কৈশোরের একটা গুরুত্বপুর্ন ডªাইভিং ফোর্স, হয়তো কৈশোরের পরেও তাই। নিজেদের ভবিষ্যত্ নিয়েও কল্পনাগুলো এরকম romanticized থাকতো, একসময় সব রাক্ষস মরে যাবে ... ওয়েল, এক্ষেত্রে সব সমস্যার সমাধান হবে, আমি বিজয়ী রাজপুত্রের বেশে লাখ টাকা বেতনের চাকরী নিয়ে ঘরে ফিরব, বাবা মায়ের স্বপœ পুরন করবো, রাজকন্যাও এসময় খুজে পাবো ইত্যাদি ইত্যাদি ... এসব কল্পনাকে দোষ দিতে চাই না, হয়তো ঠিকই আছে, স্বপœ না দেখলে সামনে যাবো কিভাবে, অথবা হয়তো ঠিক নেই ...।

বাবার সাথে অনেক বিষয়ে খুব তর্ক হতো, আবার বাবার প্রসঙ্গ আসছে, হয়তো মৃত্যুবার্ষিকীর কাছাকাছি বলে, বাবা ফেরেশতা ছিলেন না, দোষগুনে ভরা মানুষ। বাবার লিবারেল অ¨াটিচুডকে প্রায়ই বাবার অক্ষমতা হিসেবে দেখতাম, হয়তো কিছুটা সত্যিও, পুরোটা হয়ত না। সিক্স সেভেন থাকতে একটা পুরোনো তর্কের বিষয় ছিল পিপড়া বা মৌমাছির সাফল্য, তাদের অধ্যবসায় ইত্যাদি। স্রেফ বাবার বিরোধিতা করতে হবে বলে পিপড়াদের বিপক্ষ নিতাম, যুতসই যুক্তি পাচ্ছিলাম না। অনেক খুজে একটা উদাহরন পেলাম, হয়তো বছরখানেক পরে, পিপড়া সভ্যতা তৈরী করতে পারে নি। বাবা এর পরে এই প্রসঙ্গে আর ঘাটিয়েছে বলে মনে হয় না, তবে আমার মাথায়ও প্রশ্নটা ছিল, এত পরিশªমি পিপড়াদের কোন সভ্যতা নেই কেন। সাফল্যের জন্য পরিশªমের বাইরে কি আছে। অথবা পিপড়ার মতো পরিশªম করাই কি সাফল্যের জন্য যথেষ্ট নয়?

আরেকজন পিতৃস্থানীয় ব্যাক্তিত্ব, বুয়েটের কম্পিউটার কৌশলের তত্কালীন প্রধান , তার সাথে অনেক জায়গায় ঘোরাঘুরির অভিজ্ঞতা ছিল। ব্যালান্সড টিম ওয়ার্ক নিয়ে আমার সাথে তার প্রায়ই মতের অমিল হতো। স্যারের আদর্শ টিম ছিল পাচ ব্যাটসম্যান, চারবোলার, এক অলরাউন্ডার আর এক উইকেটকিপারের ক্রিকেট টিমের মতো। খাতা কলমের এসব আদর্শ টিম যে বাস্তবে সবসময় বিজয়ী হয় না এটা ছিল তর্কের বিষয়বস্তু। রুপকথা আর রুপকের সাথে আদর্শ টিমের একটা গুরুত্বপুর্ন মিল আছে। তখন ঠিক কোথায় আমরা যাচ্ছিলাম মনে নেই, তবে উড়োযানের ল¤^া জার্নিতে বসে বসে কয়েকটা প্রচলিত রুপ স্যারের জন্য বিকৃত করলাম।

যেমন চয়নিকার "লবনের মতো ভালোবাসা", তিন রাজকুমারীর ছোটটাকে রাজার খুব পছ›দ, তো রাজা জানতে চাইলেন তোমাদের মধ্যে কে আমাকে কেমন ভালোবাস, বড় রাজকুমারীরা সন্তোষজনক উত্তর দেয়ার পরে ছোটজন বলল, বাবা আমি তোমাকে লবনের মতো ভালবাসি। রাজা তো খুব দুtখ পেলেন। ছোটকন্যা এবার নানা পদ তরকারী রেধে বাবাকে খেতে দিল, সবগুলোই লবন ছাড়া, রাজাতো কিছুই মুখে দিতে পারেন না। রাজা অবশেষে বুঝলেন লবনের মতো ভালোবাসার মর্ম। মুল গল্প এখানেই শেষ। আমার মতে এই রুপকে যে অংশটা উপেক্ষা করা হয়েছে তা হলো লবন যদি বেশী দেয়া হয় তাহলে কি হবে। তার মানে ছোটমেয়ের ভালোবাসা এমন যে বেশী হলে আর সহ্য করা যায় না। এমনকি কম হলে উপায় আছে, লবন বেশী হলে ফেলে দেয়া ছাড়া তো আর উপায় নেই। আরেকটা গল্প , এটাও বইয়ের "সুখী মানুষের গল্প"- গ্রামের দুষ্ট মোড়ল ভীষন অসুস্থ হলে ডাক্তার তাকে সুখী মানুষের জামা পড়ার উপদেশ দিলেন। খুজে পেতে এক সুখী কাঠুড়েকে পেলেও দেখা গেল তার কোন জামা নেই। ইত্যাদি। বুঝলাম টাকা দিয়ে সুখ কেনা যায় না। কিন্তু এমন যদি হয় কাঠুড়ে একদিন কাঠ কাটতে গিয়ে ভীষন আহত হলো, ধরলাম ল্যাংড়া হয়ে গেল, আর কাঠ কাটতে পারে না, যেহেতু তার কোন সহায় সম্পত্তি নেই ভিক্ষাবৃত্তি ছাড়া তার কোন রাস্তা থাকল না, এখন দুtখী অথচ ধনী মোড়ল যদি এটা আবিষ্কার করে তাহলে এবার সে কি সিদ্ধান্ত নেবে। আসলে আরেকটা রুপক গল্প আছে এই গল্পের সরাসরি বিপরীত, ঈশপের পিপড়া ও ঘাসফড়িং-এর গল্প। যেখানে পিপড়াকে (অনেকটা মোড়লের মতো) অনুকরনীয় হিসেবে দেখানো হয়েছে।

রুপক, রুপকথা, খাতা-কলমের আদর্শ সবার সমস্যা হচ্ছে এরা আসলে অসম্পুর্ন। কারোটা সহজেই ধরা যায়, আর কারোটা ধরতে কসরত করতে হয়। এরা সমাধানের একটা অংশ বিস্তৃত করে, পুরোটা না। রাজকন্যা, রাজপুত্রের বিয়ের পর কি হলো, তাদের কোন দাম্পত্য কলহ হয় নি, অথবা রাজপুত্রের কোন পরকীয়া, রানীর প্রাসাদ ষড়যন্ত্র। সময় তো আর থেমে ছিল না, গল্পকারের নটে গাছটি মুড়োলেও বাস্তবের প্রয়োজন তো ক্ষমাহীন। পিপড়া সভ্যতা তৈরী করে নি কারন, পিপড়া একটা নির্দিষ্ট অপরিবর্তনীয় জীবন বিধান নিয়ে বসে আছে, মিলিয়ন বছরেও তাদের নিয়ম কানুন বদলায় নি। আর মানুষের মধ্যে কাউকে কাউকে নিয়মে বাধা কঠিন, সৃষ্টিশীল এসব মানুষ সভ্যতা তৈরী করেছে। Romanticized স্বপেœর সমস্যা হচ্ছে কাহিনীর মধ্যে তাদেরকে চমত্কার দেখায়, শত শত কিশোর তরুন ষাটের দশকে আমাদের দেশে কমিউনিজমের স্বপœ দেখে উদ্বুদ্ধ হয়েছে, শোষনমুক্ত সমাজ গড়বে, সবই ভালো, উদ্দ্যেশ্য মহত্ স‡›দহ নেই। রুপকথার মতো এই স্বপœও অসম্পুর্ন, শুধু প্রশ্ন করে দেখুন, শোষনমুক্ত সমঅধিকারের সমাজ আর লঙ্গরখানা প্রতিষ্ঠার পর কি হবে, মানুষ কলকারখানায় অফিস আদালতে কাজ করবে, যে যার চরকায় তেল দেবে, আমরা সবাই রাজা, ছিমছাম গোছানো সমস্যাহীন দেশ, ঠিক যেন পিপড়ার কলোনী। মানুষকে নিয়মের ফাদে ফেলে পিপড়া বানানোর আদর্শের অভাব নেই। এখানেই দেখতে পাচ্ছি অনেক ব্লগার খিলাফতের রwঙন স্বপেœ অভিভুত। স্বপœ দেখা ভালো, শুধু বাস্তবায়নের চেষ্টার আগে একটা প্রশ্ন করলে ভালো হয়, এই স্বপœ সম্পুর্ন তো, না কি পর¯úর বিরোধী মেটাফোরের মতো এটাও শুধু খাতা কলমে সত্যি

এবু গোগোঃ Homo Floresiensis না কেবলই রুপকথা?


এবু গোগো (ebu gogo), যার মানে দাড়াচ্ছে "the grandmother who eats anything", ইন্দোনেশিয়ার ফ্লোরেস দ্বীপের গ্রামবাসীদের মধ্যে এবু গোগোর কাহিনী বহুকাল ধরেই প্রচলিত। মানুষের মতো দেখতে, কিন্তু ছোটখাটো শরীর, অদ্ভুত হাটার ধরন, বিড়বিড়িয়ে কথা বলা আর পেটুক স্বভাব লোককাহিনীর এবু গোগোর বৈশিষ্ট্য। স্রেফ উপকথা হিসেবেই হয়তো একে উড়িয়ে দেয়া যেত, বাধ সাধল দু বছর আগে আবিষ্কার করা কিছু ফসিল।


একধরনের হবিট (লিলিপুট) জাতীয় মানুষের এসব ফসিল প্রায় ১৩,০০০ বছরের পুরোনো। ফ্লোরেস দ্বীপের এসব ফসিল গত কয়েক বছরের প্যালিও-এনথেªাপলজির বড় আবিষ্কার গুলোর একটা, এর আগে ধারনা করা হচ্ছিল গত ২৫,০০০ বছর ধরে মানুষের একটাই প্রজাতি জীবিত আছে। ইউরোপে নিয়ান্ডারথাল এবং এশিয়াতে হোমো ইরেকটাসের অন্তর্ধানের পর আমরা মোটামুটি একাই পৃথিবীতে আছি। আরেকটা ব্যাপার হচ্ছে এত ছোট আকারের মানুষ গত কয়েক লাখ বছরে ছিল বলে জানা যায় না, যদিও প্রায় ৩০ লাখ বছর আগে পাওয়া অস্ট্রালোপিথেকাস (যেমন লুসি'র ফসিল, ইথিওপিয়াতে পাওয়া) অনেকটা এরকম ছিল, কিন্তু এবু গোগোর ফসিল তো মাত্র ১৩ হাজার বছর পুরোনো।


ফ্লোরেস দ্বীপে অবশ্য এর আগেও আশ্চর্যজনক সব ফসিল পাওয়া গেছে। ১৯৯৮ এ একদল archaeologists আট লক্ষ বছরের পুরোনো পাথরের তৈরী স্থুল হাতিয়ার আবিষ্কার করেন, যদিও সমসাময়িক কোন মানুষের ফসিল পাওয়া যায় নি। আধুনিক মানুষ সর্বো”চ দেড় লাখ বছর ধরে পৃথিবীতে আছে, তার মানে দাড়াচ্ছে এ সব হাতিয়ার হোমো ইরেকটাসের তৈরী করা। হোমো ইরেকটাসের ব্যাপারটা বোধ হয় পরিষ্কার করা দরকার, আমার জিনতত্ত্ব এবং বিবর্তন বাদ নিয়ে পুরোনো লেখায় এদের নাম মনে হয় না উল্লেখ করেছি, বরং আমি লিখেছি মানুষ ৭০-৮০ হাজার বছর আগে প্রথম আফ্রিকা থেকে বের হয়ে আসে। আসলে মানুষ বলতে আমি বুঝিয়েছি আমাদের সরাসরি পুর্বপুরুষকে (Homo sapiens sapiens), কিন্তু এরাই মানুষের একমাত্র ধারা নয়, এছাড়া আমাদের প ূর্বপুরুষেরও পুর্বপুরুষ ছিল। এসব নিয়ে বিস্তারিত পরে লিখব, আপাতত সংক্ষেপে লিখলে দাড়াচ্ছে এরকমঃ ৩০-৪০ লক্ষ বছর আগে পুর্ব ও দক্ষিন আফ্রিকায় মানুষের পুর্বপুরুষরা ছিল, এরা অবশ্য বৈশিষ্টে আধুনিক মানুষের কাছাকাছি হলেও অনেক পার্থক্যও আছে, এদের একদল হচ্ছে হোমো ইরেকটাস (খাড়া মানুষ)। প্লাইস্টোসিন বরফ যুগে (২০ লাখ বছর আগে) এরা আফ্রিকার বাইরেও ছড়িয়ে পরে, তবে এদের একদল আফ্রিকায় থেকে গিয়েছিল যাদের থেকে গত ২-৩ লাখ বছর আগে আমাদের উত্পত্তি ঘটেছে, অন্যদিকে যারা আফ্রিকার বাইরে এসেছিল তারা বর্তমান ইউরোপ, চিন, দক্ষিন এশিয়াতে (ইউরোপ, ভারত, জাভা, চীনে এদের ফসিল আছে) বসতি স্থাপন করে। হোমো ইরেকটাস পাথরের হাতিয়ার বানাতে পারত, সম্ভবত সীমিত ভাষা এবং আগুনের ব্যবহারও জানত। যাহোক এদের ইউরোপিয়ান শাখা থেকে কালক্রমে নিয়ান্ডারথালদের উত্পত্তি। বিজ্ঞানীদের ধারনা এবু গোগো (Homo floresiensis) দক্ষিন পুর্ব এশিয়ার হোমো ইরেকটাস থেকে বিবর্তিত হয়েছে। আধুনিক মানুষ যখন আফ্রিকা ৭০/৮০ হাজার বছর আগে থেকে বের হয়ে ইন্দোনেশিয়া, চীন, ভারত বা ইউরোপে বসতি স্থাপন শুরু করে তখন আস্তে আস্তে হোমো ইরেকটাস বা তাদের বংশধররা বিলুপ্ত হতে থাকে। হতে পারে মানুষের সাথে প্রতিযোগিতায় পেরে ওঠেনি বা অন্য কোন কারনে এরা বিলুপ্ত হয়েছে।


যাহোক Homo floresiensis-এর সবচেয়ে কৌতুহলোদ্দিপক বৈশিষ্ট্য হচ্ছে এর আকার, পুর্ন বয়ষ্ক ফ্লোরেস মানবের উ”চতা ছিল ৩ ফুটের সামান্য বেশী (৪-৫ বছরের শিশুদের সমান) এবং ওজন ৩০ পাউন্ড (ছবি -২)। স্বাভাবিক ভাবেই এদের মস্তিষ্কের আকারও ছোট। কিন্তু ফো¬রেস দ্বীপে পাওয়া অন্যান্য পাথরের হাতিয়ার থেকে মনে হয় বুদ্ধিবৃত্তিতে এরা খুব একটা পিছিয়ে ছিল না। মোটামুটি নিশ্চতভাবেই এরা আগুনের ব্যবহার জানত। সমস্যা হচ্ছে হোমো ইরেকটাস যদি এদের পুর্বপুরষ হয়ে থাকে তাহলে ফ্লোরেস মানবদের আকার এত অস্বাভাবিকভাবে ছোট কেন (হোমো ইরেকটাসের অন্যান্য ফসিলের চেয়েও ছোট)? একটা কারন হতে পারে হবিটরা এই দ্বীপে অনেকদিন ধরে আটকে ছিল, সাধারনত ছোট দ্বীপে প্রানীদের আকারও ছোট হয়ে যায় (বিবর্তনের কারনে)। ছোট দ্বীপে বড় আকারের মাংসাশী প্রানী থাকে না, তাই বড় আকৃতি তেমন কোন সাহায্য করে না, অন্যদিকে বড় আকৃতি থাকলে তুলনা মুলক ভাবে খাবার দরকার হবে বেশী, এবং দ্বীপের সীমিত স্থানে খাবারও সীমিত , এসব কারনে ন্যাচারাল সিলেকশন ক্ষুদ্রাকৃতিকে প্রাধান্য দিতে থাকে, কয়েক হাজার জেনারেশনে প্রানীরা ক্রমশ ছোট হয়ে যায়। হবিটরা ছাড়াও একই দ্বীপে ক্ষুদ্রাকৃতির হাতির ফসিল ( পিগমি স্টেগোডন, এখন বিলুপ্ত) পাওয়া গেছে। পিগমি স্টেগোডন অন্যান্য হাতির তুলনায় কয়েকগুন ছোট, উদ্ধারকৃত হাড়-গোড় থেকে মনে হয়, হবিটরা এই হাতি শিকার করত।


ফ্লোরেস মানব কিভাবে বিলুপ্ত হলো তার উত্তর পেতে আরও কিছুদিন অপেক্ষা করতে হবে।যে সব ফসিল পাওয়া গেছে সেগুলো ৯৫,০০০-১৩,০০০ হাজার বছরের মধ্যে, এতে মনে হয় ১২,০০০ হাজার বছর আগে ঐ এলাকায় যে বড় আগেœয়গিরির অগœুত্পাত হয়েছিল তাতে হবিটরা, পিগমী স্টেগোডন সহ বিলুপ্ত হয়ে গেছে। অথবা এমন হতে পারে অল্প কয়েকজন হয়তো ফ্লোরেস দ্বীপের পুর্বাংশে এখনও বেচে আছে। এবু গোগোর গল্প বিশ্বাস করলে গত শতকেও এদেরকে দেখা গেছে। মালয় উপকথা অনুযায়ী সুমাত্রাতে একই রকম মানুষ সদৃশ প্রানী orang pendek দেখা যেত। কে জানে হয়ত ভবিষ্যতে জীবন্ত এবু গোগো কে খুজে পাওয়া যাবে, নিঃসন্দেহে সেটা হবে এ শতাব্দির বড় আবিষ্কার গুলোর একটা।

eXTReMe Tracker